কলকাতা: বাংলার ১০০ দিনের কাজের (MGNREGA) বকেয়া টাকার দাবিতে ফের দিল্লির পথে সুর চড়ালেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা লোকসভার দলনেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। সোমবার সংসদ ভবন চত্বরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি স্পষ্ট জানান, এবার কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের (Shivraj Singh Chouhan) সঙ্গে দেখা করবেন। তাঁর বক্তব্য, “বাংলার ৩৫ হাজার কোটি টাকার বকেয়া পড়ে রয়েছে। আমরা শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনার জন্যই এই লড়াই চালিয়ে যাচ্ছি।”
তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি-নেতৃত্বাধীন কেন্দ্র সরকার রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে বাংলার অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে পরাজয়ের পর থেকেই মোদি সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে রেখেছে বলে দাবি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাঁদের বক্তব্য, এর ফলে রাজ্যের প্রায় ৫৯ লক্ষ গ্রামীণ শ্রমিক সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
অভিষেক বলেন, “যখনই বিজেপি বাংলার মাটিতে পরাজিত হয়, তখনই সাধারণ মানুষের ওপর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করে। ভাতে মারার চেষ্টা করছে বিজেপি।” তিনি আরও জানান, ভোটে হারার ক্ষোভ মেটাতে কেন্দ্র সাধারণ মানুষের প্রাপ্য আটকে দিয়েছে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে দিল্লিতে কৃষি ভবন অভিযান করেছিলেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সাংসদরা। সেসময় কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী ছিলেন গিরিরাজ সিং। দিল্লি পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক ধস্তাধস্তি হয় তৃণমূল সাংসদদের। মহিলা সাংসদদের উপর নিগ্রহের অভিযোগও তুলেছিল শাসক দল। পরবর্তীতে বারবার সংসদের ভেতরে-বাইরে এই ইস্যুতে আন্দোলন চালিয়ে গেছে তৃণমূল।
২০২৪ সালের লোকসভা ভোটের প্রচারেও ‘১০০ দিনের কাজের টাকা আটকে দিয়ে বাংলাকে বঞ্চিত করা হচ্ছে’— এই স্লোগানকে হাতিয়ার করেছিল ঘাসফুল শিবির। যদিও বিজেপি নেতৃত্ব দাবি করেছে, দুর্নীতির জন্যই অর্থ আটকে রাখা হয়েছে।
রাজ্য সরকারের দাবি, কেন্দ্র টাকা না দিলেও শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে তারা। ইতিমধ্যেই প্রায় ৫৯ লক্ষ শ্রমিককে রাজ্য তহবিল থেকে টাকা দেওয়া হয়েছে। তবে কেন্দ্রীয় বকেয়া মেটানো না হলে সমস্যা পুরোপুরি দূর হবে না।
অভিষেক জানান, এবার তাঁরা চাইছেন সরাসরি শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে বৈঠক করতে। সংসদ ভবনের ভেতরেই এদিন এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা সময় চাইছি। বাংলার মানুষ যে অর্থ পাওয়ার যোগ্য, তা যেন দ্রুত মেলে। ৩৫ হাজার কোটি টাকা কোনও ছোট অঙ্ক নয়। এই টাকা গ্রামীণ অর্থনীতির প্রাণভোমরা।”
রাজনৈতিক মহলের মতে, দিল্লিতে অভিষেকের এই সক্রিয়তা শুধু দাবি আদায় নয়, বরং বিজেপির বিরুদ্ধে রাজনৈতিক লড়াইয়েরও কৌশল। দিল্লি অভিযানের ইতিহাসকে সামনে রেখে তিনি তৃণমূল কর্মী-সমর্থকদের কাছে আবারও ‘অধিকার আদায়ের যোদ্ধা’ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে চাইছেন।
অন্যদিকে বিজেপির বক্তব্য, বাংলার তৃণমূল সরকার কেন্দ্রীয় প্রকল্পে দুর্নীতি করেছে। তাই টাকা আটকে রাখা হয়েছে। তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত বকেয়া ছাড়ার প্রশ্ন নেই।
ফলে, বাংলার ১০০ দিনের কাজের টাকা নিয়ে কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাত ফের চরমে উঠল। একদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দাবি— “এটি বাংলার শ্রমিকদের ন্যায্য পাওনা।” অন্যদিকে বিজেপির দাবি— “দুর্নীতির টাকা ছাড়া হবে না।” আগামী দিনে শিবরাজ সিং চৌহানের সঙ্গে বৈঠক কতটা ফলপ্রসূ হয়, সেদিকে এখন তাকিয়ে গোটা রাজ্য।