বিহারের ভোটার তালিকায় নাম তোলার জন্য ডোনাল্ড ট্রাম্প নাকি আবেদন করেছেন আবাসিক সার্টিফিকেটের জন্য! এমন খবরে যেমন চমকে উঠেছেন সাধারণ মানুষ, তেমনই শুরু হয়েছে কটাক্ষের ঝড় রাজনৈতিক মহলে। যদিও এই ঘটনা আদতে এক রাজনৈতিক ব্যঙ্গচিত্র বা কটাক্ষের অংশ বলেই ধরা হচ্ছে, তবে বিতর্ক এবং আলোচনায় রীতিমতো ঝড় তুলেছে এই মন্তব্য।
এই অদ্ভুত অথচ রসিকতাপূর্ণ মন্তব্য এসেছে তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) মুখ থেকে। বুধবার একটি সাংবাদিক সম্মেলনে ৫০ শতাংশ আমদানি শুল্ক সংক্রান্ত একটি প্রশ্নের উত্তরে অভিষেক বলেন, “বিহারে ভোট দিতে আসবেন ট্রাম্প। তখন ওনাকেই প্রশ্ন করবেন, কেন এই সিদ্ধান্ত।”
আসলে কী ঘটেছে?
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে কিছু আমদানি পণ্যের উপর ৫০ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এই সিদ্ধান্ত ঘিরেই রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে। বিরোধীদের অভিযোগ, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে সাধারণ মানুষের উপরে অতিরিক্ত বোঝা চাপবে। তৃণমূলের মতে, এটি জনবিরোধী পদক্ষেপ। আর সেই প্রসঙ্গেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) কেন্দ্রকে নিশানা করে কটাক্ষ করেন ট্রাম্পের উদাহরণ টেনে।
অভিষেকের কটাক্ষ
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee) এই মন্তব্য আসলে একটি স্যাটায়ার বা রাজনৈতিক ব্যঙ্গ। এর মাধ্যমে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন যে কেন্দ্রের সিদ্ধান্তগুলি এতটাই ‘বিদেশমুখী’ ও যুক্তিহীন, যেন সেগুলি ভারতের ভোটারদের জন্য নয়, বরং বাইরের কোনও দেশের নাগরিকদের ইচ্ছানুযায়ী নেওয়া হয়েছে। ট্রাম্পের নাম টেনে তিনি ব্যঙ্গাত্মক ভাবে বোঝাতে চেয়েছেন, যেন ভারতের নীতিনির্ধারণে বাইরের কোনও প্রভাবশালী ব্যক্তি (যেমন ট্রাম্প) অংশ নিচ্ছেন।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
এই মন্তব্যের পরে শাসক দল বিজেপির তরফে কড়া প্রতিক্রিয়া এসেছে। বিজেপি নেতারা বলছেন, “তৃণমূল নেতারা দেশের অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত বুঝতে না পেরে এই ধরনের আজগুবি কথা বলছেন। এটা প্রমাণ করে যে ওঁদের কোনও জ্ঞান নেই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নীতি সম্পর্কে।”
তবে তৃণমূল বলছে, “এই মন্তব্যকে হালকাভাবে না দেখে বুঝতে হবে যে এর মধ্যে গভীর বার্তা লুকিয়ে রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের জনবিরোধী নীতি নিয়ে তীব্র অসন্তোষ থেকেই এই কটাক্ষ।”
সোশ্যাল মিডিয়ায় ঝড়
অভিষেকের (Abhishek Banerjee) এই মন্তব্য ছড়িয়ে পড়তেই সামাজিক মাধ্যমে শুরু হয়েছে ট্রোলিং এবং মিমের বন্যা। কেউ বলছেন, “ট্রাম্প বিহারে আসছেন তো, পাটনায় মিছিলে থাকবেন।” কেউ আবার লিখেছেন, “ট্রাম্প এখন বিহারবাসী, পরের বার মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন।” আবার কেউ ব্যঙ্গ করে লিখেছেন, “এতদিনে বুঝলাম Make India Great Again প্রকল্প শুরু হয়েছে।”
ট্রাম্প প্রসঙ্গ রাজনীতিতে নতুন মোড়
ভারতের নির্বাচনী রাজনীতিতে আন্তর্জাতিক রাজনীতিবিদের নাম টেনে এনে এমন রসিকতা আগে কখনও শোনা যায়নি। ডোনাল্ড ট্রাম্প আমেরিকার প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট হলেও, ভারতীয় রাজনীতির পরিধিতে তাঁকে এভাবে টেনে আনা নিঃসন্দেহে এক অভিনব কৌশল। এতে যেমন সাধারণ মানুষ মজা পাচ্ছেন, তেমনই বিষয়টি ঘুরিয়ে বিরোধীদের কৌশলগত আক্রমণের হাতিয়ার হয়ে উঠছে।