সংখ্যার খেলায় কে এগিয়ে? ডেপুটি স্পিকার পদের লড়াইয়ে শুরু রাজনৈতিক অঙ্ক

ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন (সার) প্রসঙ্গে বিরোধীরা একজোট হয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরে কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কোণঠাসা করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাদল অধিবেশনে বিরোধীদের প্রতিবাদ…

Abhishek Banerjee Pushes for INDIA Alliance Unity on Deputy Speaker Post

ভোটার তালিকায় নিবিড় সংশোধন (সার) প্রসঙ্গে বিরোধীরা একজোট হয়ে সংসদ ও সংসদের বাইরে কেন্দ্রীয় নরেন্দ্র মোদী সরকারকে কোণঠাসা করার উদ্যোগ নিয়েছে। বাদল অধিবেশনে বিরোধীদের প্রতিবাদ যেমন জোরালো হয়েছে, তেমনি ভবিষ্যতেও এই ইস্যুতে একত্রে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’। এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) ।

কিন্তু শুধু ভোটার তালিকা সংশোধন নয়, এবার বিরোধীদের নজর অন্য একটি বড় রাজনৈতিক প্রশ্নে—লোকসভার ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ। নয়াদিল্লির রাজনৈতিক মহলের জোর গুঞ্জন, এ বার এই ইস্যুকে সামনে রেখে কেন্দ্রকে চাপে ফেলতে চাইছে বিরোধীরা। তাতে নেতৃত্ব নিতে চাইছে তৃণমূল। অভিষেকের উদ্যোগেই বিরোধী দলগুলির মধ্যে এই প্রশ্নে ঐকমত্য গড়ে ওঠার চেষ্টা চলছে।

   

সংসদীয় রীতি অনুযায়ী, লোকসভার ডেপুটি স্পিকার পদটি সাধারণত বিরোধীদের জন্য বরাদ্দ থাকে। কিন্তু গত কয়েক বছরে সেই নিয়ম কার্যত অমান্য করেছে কেন্দ্রীয় সরকার। বিরোধীরা দাবি করছে, ন্যায্য অধিকার থেকেও তাদের বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঘনিষ্ঠ মহলে স্পষ্ট জানিয়েছেন, “সংসদীয় রীতি এবং বিরোধী দলের প্রাপ্যতা নিয়ে কোনও আপস হবে না।” সূত্রের খবর, অভিষেকের (Abhishek Banerjee) এই অবস্থানের সঙ্গে একমত হয়েছে কংগ্রেস বাদে বিরোধী শিবিরের বেশ কয়েকটি দল। তাদেরও দাবি, ডেপুটি স্পিকার পদের লড়াইতে এককাট্টা হয়ে বিজেপিকে কঠিন বার্তা দেওয়া দরকার।

এই আবহে সোমবার দিল্লির সংসদ ভবনে অবস্থিত তৃণমূল কংগ্রেসের পার্টি অফিসে এসে জোড়াফুলের লোকসভার দলনেতার সঙ্গে একান্ত বৈঠক করেছেন সমাজবাদী পার্টির বর্ষীয়ান সাংসদ অবধেশ প্রসাদ। প্রায় কুড়ি মিনিটের এই বৈঠক নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের জল্পনা জোরালো করেছে। কারণ অবধেশ প্রসাদ শুধুমাত্র সপা-র জ্যেষ্ঠ সাংসদ নন, তিনি বিরোধী ঐক্যের প্রতীক হিসেবেও উঠে এসেছেন গত বছর লোকসভা স্পিকার নির্বাচনের সময়।

উল্লেখযোগ্য যে, স্পিকার নির্বাচনের সময়ে তৃণমূল এবং আম আদমি পার্টি অবধেশ প্রসাদকেই বিরোধী প্রার্থী হিসেবে চাইছিল। সপা সুপ্রিমো অখিলেশ যাদবও নিজের দলের এই বর্ষীয়ান সাংসদের নাম প্রস্তাব করেছিলেন। তবে তখন কংগ্রেস সায় দেয়নি। তাদের পছন্দের প্রার্থী ছিলেন নিজেদের সাংসদ কে সুরেশ। ফলে বিরোধীদের মধ্যে ভাঙন দেখা দিয়েছিল এবং বিজেপি স্বস্তি পেয়েছিল।

Advertisements

কিন্তু এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। সার ইস্যুতে বিরোধীরা যেমন ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তেমনি ডেপুটি স্পিকার পদে তারা একমত হওয়ার পথে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, তৃণমূল এবং সপা একসঙ্গে চাপ সৃষ্টি করলে কংগ্রেসের উপরও চাপ পড়বে, যাতে তারা আর ভিন্ন অবস্থান না নেয়।

অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সক্রিয় ভূমিকা এখানে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। সাম্প্রতিক সময়ে সংসদের ভেতরে এবং বাইরে তাঁর নেতৃত্বে তৃণমূল কংগ্রেস আক্রমণাত্মক ভঙ্গি নিয়েছে। অভিষেক বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বার্তা দিয়েছেন এবং সেই পথে সপা, আপ, ডিএমকে-র মতো দলগুলো সাড়া দিচ্ছে। প্রশ্ন উঠছে, কংগ্রেসও কি এবার সেই পথে হাঁটবে?

ডেপুটি স্পিকার নিয়োগ নিয়ে যদি বিরোধীরা একমত হয়, তবে এটি কেবল সংসদীয় রীতির পুনর্বহাল নয়, বরং রাজনৈতিক বার্তাও বটে। বিরোধীরা দেখাতে চাইবে, তারা সংসদীয় প্রথাকে রক্ষা করতে এবং গণতান্ত্রিক অধিকারকে অক্ষুণ্ণ রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। অন্যদিকে, বিজেপি যদি এই পদ বিরোধীদের না দেয়, তবে সংসদীয় নীতিনৈতিকতা লঙ্ঘনের অভিযোগ আরও জোরালো হবে।

সব মিলিয়ে ডেপুটি স্পিকার প্রশ্নে নতুন রাজনৈতিক সমীকরণের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কূটনৈতিক তৎপরতা, সপা-র সক্রিয় আগ্রহ এবং বিরোধী শিবিরের ন্যায্য দাবির ওপর নির্ভর করছে আগামী দিনে সংসদের রাজনীতির অনেকখানি গতি। বিরোধীদের ঐক্য কি এ বার সত্যিই বাস্তব রূপ নেবে, নাকি কংগ্রেসের দ্বিধা আবারও সুযোগ করে দেবে বিজেপিকে—তা নিয়েই রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তুঙ্গে।