লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানালেন তৃণমূল কংগ্রেসের দলনেতা ও সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee) । সোমবার সংসদে দাঁড়িয়ে তিনি স্পষ্ট ভাষায় জানান, লোকসভা নির্বাচন যখন বর্তমান ভোটার তালিকার ভিত্তিতেই হয়েছে, তখন হঠাৎ করে বাছাই করা কয়েকটি রাজ্যে SIR (Special Identity Revision) চালু করার কোনও যৌক্তিকতা নেই।
তাঁর কথায়, “লোকসভা নির্বাচন এই ভোটার তালিকার উপরেই হয়েছে। তাহলে আগে লোকসভা ভেঙে দেওয়া হোক। SIR হলে গোটা দেশে হবে, শুধু নির্দিষ্ট কয়েকটি রাজ্যে নয়।” অভিষেকের এই মন্তব্যে স্পষ্ট হয়ে যায়, নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে তৃণমূল কংগ্রেস বড় প্রশ্ন তুলতে চলেছে।
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee) এই বক্তব্যে ইঙ্গিত মেলে যে, তিনি SIR-এর আড়ালে রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করছেন। তাঁর যুক্তি, নির্বাচনী প্রক্রিয়া সমানভাবে সারা দেশে কার্যকর হওয়া উচিত। কিছু নির্দিষ্ট রাজ্যকে টার্গেট করে এই ব্যবস্থা চালু করার অর্থ গণতান্ত্রিক নীতির পরিপন্থী।
শুধু ভোটার তালিকা নয়, সোমবারের লোকসভা অধিবেশনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Abhishek Banerjee) আক্রমণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল দিল্লি পুলিশ ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকও। মহিলা সাংসদদের উপর পুলিশের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তাঁর অভিযোগ, “আমাদের মহিলা সাংসদদের চুলের মুঠি ধরে টেনে হেনস্থা করেছে পুলিশ। অনেক সাংসদ অসুস্থ হয়ে পড়েন। তৃণমূল সাংসদ মিতালি বাগকে এমনভাবে আহত করা হয় যে তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়।”
অভিষেক আরও অভিযোগ করেন, দিল্লিতে তৃণমূল সাংসদদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে অযথা সক্রিয়তা ও বর্বরতা দেখিয়েছে পুলিশ। তাঁর কথায়, “শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের জবাব দিল্লি পুলিশ এমনভাবে দিয়েছে, যা একেবারেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি স্পষ্টত রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত পদক্ষেপ।” স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের দফতরকে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, “এটি অমিত শাহের পুলিশ, যারা বিরোধী কণ্ঠরোধে বর্বরতা দেখাচ্ছে।”
অভিষেকের এই বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক মহলে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, সংসদে তাঁদের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হচ্ছে এবং রাস্তায় নামলে তাঁদের আন্দোলনকে জোরপূর্বক থামিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেন্দ্রীয় সরকার অবশ্য এই অভিযোগ খারিজ করেছে এবং দাবি করেছে, পুলিশের পদক্ষেপ আইন অনুযায়ী ও পরিস্থিতির প্রয়োজন মেনে হয়েছে।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অভিষেকের এই আক্রমণ একাধিক ইস্যুতে কেন্দ্রকে কোণঠাসা করার কৌশল। প্রথমত, নির্বাচনী ব্যবস্থার সমতা ও স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিরোধী শিবিরকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা। দ্বিতীয়ত, মহিলা সাংসদদের উপর পুলিশের আচরণকে সামনে এনে নৈতিক চাপ তৈরি করা।
এদিন তৃণমূলের অন্যান্য সাংসদরাও লোকসভায় অভিষেকের বক্তব্যের সমর্থনে স্লোগান দেন এবং সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সংসদ ভবনের বাইরে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেক বলেন, “যদি SIR সত্যিই প্রয়োজন হয়, তাহলে তা সারা দেশে কার্যকর করুন। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছি, এটি আসলে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার হাতিয়ার।”
তৃণমূল শিবিরের দাবি, এই ঘটনাগুলি প্রমাণ করছে যে কেন্দ্র বিরোধী রাজ্যগুলিতে গণতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত করতে চাইছে। অন্যদিকে, বিজেপি পাল্টা দাবি করেছে, তৃণমূল নাটক করছে এবং আইন ভঙ্গের দায় এড়াতে রাজনৈতিক নাট্য মঞ্চ তৈরি করছে।
সব মিলিয়ে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা বক্তৃতা শুধু নির্বাচনী সংস্কার বা পুলিশের আচরণ নয়, বৃহত্তর রাজনৈতিক লড়াইয়ের ইঙ্গিতও দিল। সামনে এই ইস্যু নিয়ে তৃণমূলের আন্দোলন আরও তীব্র হবে বলেই রাজনৈতিক মহলের ধারণা।