উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরই ফের একবার রাজনৈতিক অঙ্গনে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়াল। ভোটের পরদিনই বিস্ফোরক অভিযোগ আনলেন তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (abhishek banerjee) । তাঁর দাবি, এই নির্বাচনে সাংসদ কেনাবেচা হয়েছে। শুধু তাই নয়, আম আদমি পার্টি (AAP)-এর কয়েকজন সাংসদ সরাসরি বিজেপিকে সমর্থন করেছেন বলেও অভিষেকের অভিযোগ। এই মন্তব্যকে ঘিরে রাজনীতির ময়দান আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।
অভিষেকের বিস্ফোরক দাবি
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (abhishek banerjee) সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, “যে ফলাফল আমরা দেখলাম, তাতে স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে যে সংসদের ভেতরে ভাঙন ধরানো হয়েছে। বিজেপি তাদের পুরনো কায়দা অনুযায়ী ঘোড়া কেনাবেচার রাজনীতি চালিয়েছে। সংবিধান ও গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার এই ষড়যন্ত্র নিয়ে আমরা নীরব থাকব না। তাঁর দাবি, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে যে ফলাফল এসেছে, তা প্রমাণ করে কিছু বিরোধী শিবিরের সাংসদরা বিজেপির প্রলোভনে পড়েছেন। বিশেষত আম আদমি পার্টির কয়েকজন সাংসদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। অভিষেক বলেন, *“AAP দাবি করে তারা বিজেপির বিরোধী। অথচ দেখা গেল, তাদের কিছু সাংসদ সরাসরি বিজেপিকে সমর্থন করেছেন। এটা কি জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা নয়?”*
বিজেপির বিরুদ্ধে ‘ঘোড়া কেনাবেচা’ অভিযোগ
তৃণমূলের অভিযোগ, বিজেপি সংসদীয় রাজনীতিকে ধ্বংস করার জন্য নানা রাজ্যে যেভাবে ক্ষমতার লোভ দেখিয়ে বিধায়ক এবং সাংসদ ভাঙিয়ে নিয়েছে, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে একই কৌশল অবলম্বন করেছে। অভিষেকের ভাষায়, *“বিজেপি কোনও ভোটকে গণতান্ত্রিকভাবে লড়তে জানে না। তাদের একটাই লক্ষ্য—যে কোনও উপায়ে ক্ষমতা দখল। ভোট কেনাবেচা, প্রলোভন, সিবিআই-ইডির ভয়—সবই তাদের অস্ত্র। এবার সেই অস্ত্র ব্যবহার হয়েছে উপরাষ্ট্রপতি ভোটে।”
AAP-এর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
অভিষেকের অভিযোগে রাজনৈতিক মহলে সবচেয়ে বেশি আলোড়ন ফেলেছে আম আদমি পার্টিকে ঘিরে তাঁর মন্তব্য। তিনি দাবি করেন, বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বলে যে দল জনসমর্থন পেয়েছিল, সেই দলের কয়েকজন সাংসদ এবার বিজেপিকে ভোট দিয়ে জনগণের বিশ্বাস ভঙ্গ করেছেন। তৃণমূল সূত্রে খবর, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে থেকেই বিজেপির তরফে একাধিক বিরোধী দলের সাংসদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছিল। সেই প্রক্রিয়ারই ফল এই অস্বাভাবিক ভোটাভ্যাস।
বিরোধী ঐক্যে ফাটল?
এই ঘটনার পর বিরোধী ঐক্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উঠছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে বিরোধী শিবির একজোট হওয়ার চেষ্টা করছে। কিন্তু উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ফলাফলে দেখা গেল, বিরোধী শিবিরের ভেতরেই অবিশ্বাস এবং ভাঙন তৈরি হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, বিজেপির কৌশলই হচ্ছে বিরোধী দলগুলিকে বিভক্ত করা এবং সেই লক্ষ্যেই এই ধরনের ঘোড়া কেনাবেচার রাজনীতি। অভিষেক বলেন, “আমরা বহুবার বলেছি, বিজেপি দেশের গণতন্ত্র ধ্বংস করছে। তারা জনমতের তোয়াক্কা করে না। এবার আবারও প্রমাণিত হল, বিরোধী ঐক্যে ভাঙন ধরানোই তাদের প্রধান লক্ষ্য। কিন্তু তৃণমূল এই ষড়যন্ত্রকে সফল হতে দেবে না।’’*
বিজেপির পাল্টা প্রতিক্রিয়া
অন্যদিকে, বিজেপি অবশ্য অভিষেকের অভিযোগকে সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। দলের মুখপাত্রের দাবি, উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিজেপির জয় নিশ্চিত ছিল কারণ সংসদে তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা আছে। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, সংসদে বিরোধী শিবির নিজেরাই একজোট হতে পারেনি। নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতেই এখন বিজেপির বিরুদ্ধে ঘোড়া কেনাবেচার অভিযোগ তোলা হচ্ছে।”
আগামী দিনের লড়াই আরও তীব্র
উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে এই নতুন বিতর্ক বিরোধী শিবিরে ভাঙনের ইঙ্গিত স্পষ্ট করে দিল। বিজেপি যেখানে নিজেদের শক্তি বাড়ানোর চেষ্টা করছে, সেখানে বিরোধী দলগুলির মধ্যে আস্থা ও ঐক্যের সংকট প্রকট হচ্ছে। ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা বিরোধী ঐক্যের রূপরেখা কতটা প্রভাবিত করবে, তা এখন রাজনৈতিক মহলে বড় প্রশ্ন। তৃণমূলের তরফে জানানো হয়েছে, তারা এ বিষয়ে সংসদীয় কৌশল নির্ধারণের জন্য শীঘ্রই দলের উচ্চস্তরের বৈঠক করবে। অন্যদিকে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ইঙ্গিত দিয়েছেন, বিজেপির বিরুদ্ধে আরও তথ্যপ্রমাণ নিয়ে সামনে আসবে তৃণমূল।