তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় এমনিতেই খবরের শিরোনামে উঠে এসেছে কলকাতার বহু পরিচিত সরকারি হাসপাতাল আরজি কর (RG Kar Hospital)। এই হাসপাতালকে ঘিরে এখন অনেক খবরই প্রকাশ্যে আসছে। এমন আবহে আরজি কর হাসপাতালে বিনা চিকিৎসায় এক যুবকের মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে ফের চাঞ্চল্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হল। ২২ বছরের বিক্রম ভট্টাচার্যের মৃত্যুর পর তাঁর মা কবিতা দাস এই হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করলেন। ছেলের মৃত্যুর পর তাঁর দাবি, তাহলে কি চিকিৎসকেরা সাধারণ মানুষের উপর ‘প্রতিশোধ’ নিচ্ছেন? ঠিক কী ঘটেছিল?
শুক্রবার কোন্নগরের যুবক বিক্রম লরি দুর্ঘটনায় গুরুতর জখম হওয়ার পর তাঁকে শ্রীরামপুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। এরপর সেখান থেকে তাঁকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয়। কিন্তু আরজি করে চিকিৎসা পরিষেবা না পেয়ে সেখানকার জরুরি বিভাগ এবং আউটডোরে চিকিৎসার জন্য দৌড়ে বেরিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মৃতার মা। কবিতার অভিযোগ, “কোনও চিকিৎসক আসেননি। একজন গুরুতর আহত রোগীকে কোনও পরিষেবা দিতে পারেনি হাসপাতাল। একটা ডাক্তার নেই। আমার ছেলেটা চোখের সামনে চিকিৎসা না পেয়ে তড়পে তড়পে মরেছে। শেষে হার্ট ফেল করল।”
সেইসঙ্গে নিহত যুবকের মা কবিতা ও তাঁর মা ভারতী মালাকার এদিন আহত ছেলেকে নিয়ে সেখানে ঠিক কী পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছে তা জানিয়ে বলেছেন, “আমরা করিডিয়াম বিল্ডিংয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করি, চিকিৎসক রয়েছেন কিনা। এক ম্যাডাম বললেন নেই। এরপর আউটডোরে নিয়ে গেলাম। টিকিট করলাম। সেখানে চেম্বারের দরজা ধাক্কা দিলাম। একজন ম্যাডাম বেরিয়ে এসে বললেন, ডাক্তার নেই। অপেক্ষা করুন। ছেলের পা দিয়ে তখন রক্তপাত হচ্ছে। প্রায় এক-দেড় ঘণ্টা পর আউটডোরে ডাক্তার এলেন। নির্দেশ দিলেন সেলাই করো, ব্যান্ডেজ করো। তারপর আবার জরুরি বিভাগে নিয়ে আসি। চিকিৎসক পায়ে ব্যান্ডেজ করেন।
তারপর আবার আউটডোরের বিল্ডিংয়ে চিকিৎসককে সই করাতে যাই। কেউ নেই। একবার ইমার্জেন্সি, একবার আউটডোরে দৌড়ে বেড়িয়েছি। এদিকে ছেলের রক্তপাত হয়েই চলেছে।” কবিতা হাসপাতাল পরিষেবার দিকে অভিযোগ তুলে বলেছেন, “ছেলেটার শরীর সাদা হয়ে যাচ্ছে। ডাক্তার নেই। ডাকছি, কেউ আসছেন না। কোনও ডাক্তার আসেননি। যাঁরা আন্দোলন করছিলেন, কেউ আসেননি। চোখের সামনে চলে গেল ছেলেটা। ওর কী দোষ? এত কষ্ট পেল। ওর যন্ত্রণা আমার হচ্ছে। অনেক সময় দিয়েছে ছেলেটা, কিন্তু কোনও পরিষেবা ছিল না।” এদিকে মৃত যুবকের দিদা জানিয়েছেন, “ঘরে মিটিং হচ্ছিল। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে কেউ রোগী দেখলেন না। একজন নার্স এসে উল্টে আমাকে মুখ করলেন।
একজনের জন্য হাজার মায়ের কোল খালি হোক, চাইব না। এটা বিচার নয়। ডাক্তার চিকিৎসা না করলে কোথায় যাব? আমাদের তো টাকা নেই। আমরাও বিচার চাই।” তাঁর ছেলের মৃত্যুর জন্য বিচার চেয়ে কবিতা বলেছেন, “এই ডাক্তারদের বিচার কে করবে? আমার ছেলেটা এত যন্ত্রণা পেয়ে মরল।” সেইসঙ্গে আরজি করের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “আমরা কি চাই না একটা মেয়ের বিচার হোক? একটা মেয়ের যেভাবে মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে, আমরা কি চাই না, তার বিচার হোক? আমরাও তো মা। কিন্তু আজ আমার সন্তান চলে গেল বিনা চিকিৎসায়। ডাক্তারদের বিচার চাইছি। কেন পরিষেবা দিচ্ছে না? ওরা কি প্রতিশোধ নিচ্ছে সাধারণ মানুষের উপর?”