দেশপ্রিয় পার্কে ৬৭০ নারীর শঙ্খধ্বনিতে নতুন ইতিহাস

কলকাতা: কলকাতার দুর্গোৎসব মানেই সৃজনশীলতা, ঐতিহ্য এবং নতুন নতুন রেকর্ডের সাক্ষী হওয়া। প্রতি বছর শহরের নানা পুজো কমিটি অভিনব থিম ও নজরকাড়া আয়োজনের মাধ্যমে লক্ষাধিক…

কলকাতা: কলকাতার দুর্গোৎসব মানেই সৃজনশীলতা, ঐতিহ্য এবং নতুন নতুন রেকর্ডের সাক্ষী হওয়া। প্রতি বছর শহরের নানা পুজো কমিটি অভিনব থিম ও নজরকাড়া আয়োজনের মাধ্যমে লক্ষাধিক দর্শনার্থীর মন জয় করে নেয়। কিন্তু দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসবের (Deshapriya Park Puja) নাম সর্বদাই থাকে আলোচনার শীর্ষে। থিম থেকে শুরু করে রেকর্ড তৈরি – প্রতিবারই তারা প্রমাণ করে যে দুর্গাপুজো কেবল ধর্মীয় আচার নয়, এটি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের উৎসব।

Advertisements

এই বছরও দেশপ্রিয় পার্কের পুজো তৈরি করেছে এক নতুন ইতিহাস। একসঙ্গে ৬৭০ জন মহিলা শঙ্খ বাজিয়ে গড়েছেন এক অনন্য রেকর্ড, যা স্থান করে নিয়েছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড এবং এশিয়া বুক অফ রেকর্ড–এ। দুর্গাপুজোর সঙ্গে শঙ্খধ্বনির সম্পর্ক প্রাচীনকাল থেকেই অবিচ্ছেদ্য। এটি শুধু অশুভ শক্তিকে দূরে সরিয়ে শুভ শক্তির আহ্বানই নয়, বরং নারীর শক্তি, ঐক্য ও ঐতিহ্যের প্রতীকও বটে।

   

দেশপ্রিয় পার্ক দুর্গোৎসব কমিটির সম্পাদক সুদীপ্ত কুমার বলেন, “আমরা সবসময় নতুন কিছু করতে চাই। কয়েক বছর আগে তৈরি করেছিলাম ভারতের সবচেয়ে বড় দুর্গা প্রতিমা, যা দেশজুড়ে আলোচনার ঝড় তুলেছিল। এবারে ১৭০ ফুট লম্বা নৌকা নির্মাণের পাশাপাশি ৬৭০ জন মহিলার অংশগ্রহণে আমরা গড়েছি নতুন এক নজির। দেশপ্রিয় পার্ক মানেই রেকর্ড – এবারও তার ব্যতিক্রম ঘটেনি।”

Also Read | দেশপ্রিয় পার্কে ৬৭০ নারীর শঙ্খধ্বনিতে নতুন ইতিহাস

এই উদ্যোগের পেছনে অন্যতম ভূমিকা নিয়েছেন খ্যাতনামা সমাজকর্মী কেয়া শেঠ। তিনি জানান, “শঙ্খধ্বনি বাঙালির সংস্কৃতির অঙ্গ। সেই ঐতিহ্য থেকেই আমাদের মাথায় আসে রেকর্ড তৈরির চিন্তা। ‘বাজাব শঙ্খ, করব রেকর্ড’ – এই ভাবনাকে কেন্দ্র করেই আমরা পরিকল্পনা শুরু করি। আজ আমরা গর্বিত যে একসঙ্গে দুই রেকর্ডবুকে নাম তুলতে পেরেছি।”

আয়োজক দলের তরফে সুনন্দা বলেন, “আমাদের ডাকে ৬৭০ জন মহিলার সাড়া দেওয়া আমাদের কাছে এক গর্বের বিষয়। এটি শুধু দেশপ্রিয় পার্কের সাফল্য নয়, কলকাতার সমস্ত দুর্গাপুজো উদ্যোক্তাদেরও প্রেরণা। দুর্গাপুজোর আবহ না থাকলে হয়তো এই রেকর্ডও সম্ভব হত না।”

Also Read |নবমী-দশমীতে ফের ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাস, পুজোর আনন্দে ভাঁজ ফেলতে পারে নিম্নচাপ

শঙ্খধ্বনির এই উদ্যোগ কেবল একটি রেকর্ডই নয়, এটি সমাজে নারীর শক্তি ও ঐক্যের প্রতীক হিসেবেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে। একত্রিত হয়ে নারীরা যে শুধু ঐতিহ্যকে জীবিত রাখছেন তা নয়, বরং তারা সমাজের কাছে পাঠাচ্ছেন এক শক্তিশালী বার্তা — নারীর শক্তি, ঐক্য ও অংশগ্রহণই সমাজের অগ্রগতির মূলভিত্তি।

দেশপ্রিয় পার্কের পুজো প্রতি বছর যেমন থিম ও প্রতিমার জন্য আলোচিত হয়, তেমনি এই বছর রেকর্ড তৈরির ক্ষেত্রেও তারা নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। আগেও এই ক্লাব তৈরি করেছিল দেশের সবচেয়ে উঁচু দুর্গা প্রতিমা, আর এবার শঙ্খধ্বনিতে ইতিহাস গড়ে তারা আবারও প্রমাণ করল যে পুজো মানে কেবল দেবী আরাধনা নয় — এটি ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও সমাজের মিলনমেলা।

এই অভিনব উদ্যোগ নিঃসন্দেহে আগামী দিনের পুজোগুলির জন্য নতুন দিশা দেখাবে। কারণ পুজো কেবল একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি এক সামাজিক চেতনা ও সাংস্কৃতিক গর্বের প্রতীক — আর দেশপ্রিয় পার্ক সেই চেতনার পতাকা আরও উঁচুতে তুলে ধরল।