কলকাতা এয়ারপোর্টের যোগসূত্র হিসেবে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ ৪৬ নং রুটের বাস পরিষেবা (Bus Service) গত তিন দিন ধরে বন্ধ ছিল। ২৬ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই রুটে বাস চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও, ২৮ ফেব্রুয়ারি কিছু মালিক নিজেদের উদ্যোগে বাস রাস্তায় নামানোর চেষ্টা করেছিলেন। তবে পরিষেবা সম্পূর্ণভাবে শুরু করা সম্ভব হয়নি।
শনিবার (১ মার্চ) থেকে এই রুটে বাস ফের (Bus Service) বিনা বাধায় চলতে শুরু করতে পারে। শুক্রবার মালিকপক্ষের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে এই বিষয়ে আলোচনা হয়। তবে, বাস পরিষেবা পুরোদমে চালু হবে কি না, তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত শনিবার সকালে নেওয়া হবে। জানা গেছে, অধিকাংশ বাস মালিক রাস্তায় বাস নামাতে ইচ্ছুক। তবে শনিবার সকালে কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রাজ্যের পরিবহণ দফতরের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারির সঙ্গে বৈঠকে রাজি হয়েছে মালিকপক্ষ। রাজ্য সরকারও নির্দেশ দিয়েছে যে, ৪৬ নং রুটে বাস চলাচলে কেউ বাধা দিলে বিধাননগর পুলিশকে পদক্ষেপ নিতে হবে। অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়নের একাংশের দাদাগিরির কারণেই এই বাস পরিষেবা বন্ধ ছিল। এই ইউনিয়নটি তৃণমূল কংগ্রেস পরিচালিত। অভিযোগের তির, রুট সিন্ডিকেটের সভাপতি দুর্গা চট্টোপাধ্যায় এবং সচিব বৈদ্য বিশ্বাসের দিকে। তাদের বিরুদ্ধে ‘থ্রেট কালচার’ চালানোর অভিযোগ উঠেছে। দুর্গা এবং বৈদ্য কথিতভাবে শ্রমিকদের হুমকি দিয়েছেন এবং বাস চালাতে বাধা দিয়েছেন। এমনকি রুটের ডিপোতে ঘরে তালা লাগিয়ে চলে গেছেন বলেও অভিযোগ।
এই ঝামেলার শুরু হয়েছিল রুটের এক শ্রমিক নেতা হীরালাল খেওড়কে কেন্দ্র করে। বেশ কিছুদিন ধরে বাস কর্মীরা তার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছিলেন। অভিযোগ, হীরালাল কর্মীদের বোনাসের টাকা তছরুপ করেছেন। এই ঘটনার জেরে একদল দাবি করে, হীরালালের দাদাগিরি রুখতে মালিকপক্ষ এবং শ্রমিকরা মিলে বাস পরিষেবা বন্ধ রেখেছিল। যদিও হীরালাল তার বিরুদ্ধে ওঠা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী বলেন, ‘পুলিশ প্রশাসনকে বাস পরিষেবা স্বাভাবিক করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা বাধা দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
৪৬ নং রুটটি বিমানবন্দর থেকে বাগুইআটি, কেষ্টপুর, চিনারপার্ক ও কাঁকুরগাছি হয়ে কলেজ স্ট্রিট পর্যন্ত যাতায়াতের একমাত্র বাস পরিষেবা। এই রুটে ৪৬, ৪৬এ এবং ৪৬বি মিলিয়ে ৬৩টি বাস চলে। যেখানে চালক, কন্ডাক্টর ও খালাসি মিলে মোট ২৩০ জন কর্মী কাজ করেন। গত তিন দিন ধরে বাস পরিষেবা বন্ধ থাকায় হাজার হাজার যাত্রীকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। অনেকে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকেও বাস না পেয়ে এল-২৩৮ বা ১২সি/২-এর মতো বিকল্প বাসে চড়তে বাধ্য হয়েছেন। কেউ কেউ ‘রাস্তা ভেঙে’ যাতায়াত করেছেন—এক বাস থেকে নেমে অন্য বাস বা অটো ধরে গন্তব্যে পৌঁছেছেন। অনেকেরই বাধ্য হয়ে বেশি টাকা খরচ করে ট্যাক্সি নিতে হয়েছে।