দমদম রেলস্টেশনে আগামী শনি ও রবিবার (২২ ও ২৩ জুন) বড়সড় পাওয়ার ও ট্রাফিক ব্লকের ঘোষণা করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। ডাউন মেন লাইনে জরুরি রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। রেল সূত্রে জানা গেছে, এই দুই দিন মিলিয়ে মোট ৭ ঘণ্টা ট্রাফিক এবং পাওয়ার ব্লক কার্যকর হবে। এর জেরে বাতিল থাকবে একাধিক ট্রেন, বদল ঘটবে বহু ট্রেনের রুট ও সময়সূচিতে। ফলে দুর্ভোগে পড়তে পারেন অসংখ্য নিত্যযাত্রী ও সাধারণ যাত্রীরা।
রেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়েছে, দমদম থেকে বারাসত পর্যন্ত ডাউন মেন লাইনে সিগন্যাল ও কেবলের আধুনিকীকরণ, রেল লাইনের গঠনগত পরিকাঠামো মজবুত করা, ওভারহেড তারের রক্ষণাবেক্ষণ ইত্যাদি কাজ করা হবে। এই কাজগুলির জন্যই পাওয়ার ও ট্রাফিক ব্লক অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। শনিবার এই ব্লক চলবে বেলা ১টা থেকে ৪টে পর্যন্ত, এবং রবিবার ১১টা থেকে ৩টা অবধি। অর্থাৎ দু’দিনে মোট ৭ ঘণ্টা ডাউন লাইন কার্যত অচল থাকবে।
এই পাওয়ার ব্লকের কারণে ব্যাহত হবে শিয়ালদহ শাখার একাধিক লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন পরিষেবা। ইতিমধ্যেই পূর্ব রেল এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে জানিয়েছে, ঠিক কোন কোন ট্রেন বাতিল থাকবে, কোন ট্রেনের সময়সূচি বদলানো হবে এবং কোন ট্রেনগুলি নির্ধারিত স্টপেজ বাদ দিয়ে চলবে। তালিকা অনুযায়ী, শনি ও রবিবার মিলিয়ে ২৫টিরও বেশি লোকাল ট্রেন বাতিল হতে চলেছে। কয়েকটি ট্রেন দেরিতে ছাড়বে বা গন্তব্যের আগেই থামিয়ে দেওয়া হবে। ফলে যাত্রীদের দীর্ঘক্ষণ স্টেশনে অপেক্ষা করতে হতে পারে অথবা বিকল্প পরিবহণের খোঁজ করতে হবে।
দীর্ঘদিন ধরেই এই লাইনে প্রযুক্তিগত সমস্যার কারণে যাত্রীদের নানা অসুবিধার মুখে পড়তে হচ্ছিল। রেল সূত্রে জানা গেছে, অত্যাধিক যাত্রীচাপ, পুরনো সিগন্যালিং ব্যবস্থা ও ওভারহেড তারে সমস্যা থাকায় প্রতিনিয়ত দেরি করছে ট্রেন। সেই সমস্যা মেটাতেই আধুনিকীকরণের কাজ চলছে। তবে এই কাজ করতে গিয়ে ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকায় ক্ষুব্ধ অনেক যাত্রীই। তাঁদের অভিযোগ, “সপ্তাহান্তে এমনিতেই ভিড় বেশি থাকে, তার উপর আবার ট্রেন বাতিল! আগাম পরিকল্পনা না থাকলে কী করে চলব?” কেউ আবার বলছেন, “রক্ষণাবেক্ষণ অবশ্যই দরকার, কিন্তু অন্তত শুক্রবার রাতে বা সপ্তাহের মাঝামাঝি সময়ে এই কাজ করা যেত না?”
অন্যদিকে রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, আগাম জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ব্লকের সময়। নোটিশ জারি করা হয়েছে স্টেশন ও ট্রেনে। যাত্রীরা যাতে আগে থেকেই বিকল্প ব্যবস্থা নিতে পারেন, তার জন্য ওয়েবসাইট, অ্যাপ ও সংবাদমাধ্যমে এই খবর ছড়ানো হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার যাত্রীদের রুট বদলের পরামর্শও দেওয়া হচ্ছে। রেলও আরও জানিয়েছে, একবার কাজ শেষ হলে এই রুটে ট্রেন চলাচল অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য ও সময়নিষ্ঠ হবে।
সবমিলিয়ে, দমদমের ডাউন লাইনে সাত ঘণ্টার পাওয়ার ব্লক নিতান্ত প্রয়োজনীয় হলেও তা যে হাজার হাজার নিত্যযাত্রীর জন্য বিপদের কারণ হয়ে দাঁড়াতে চলেছে, তা বলাই বাহুল্য। এখন দেখার, রেলের পূর্বঘোষণা ও বিকল্প পরিকল্পনা যাত্রীদের ভোগান্তি কতটা কমাতে পারে।