প্রতিদিন ক্ষীণ হচ্ছে জীবন, শিক্ষক অনশনে মৃত্যুর মুখে

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে চাকরি হারানো শিক্ষকদের প্রতিবাদ আরও তীব্র আকার নিচ্ছে। এবার তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন। গত রাত ১২টা থেকে হাইকোর্ট নির্ধারিত…

Hope for Justice: Education Secretary Meets SSC-Terminated Teachers

পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে চাকরি হারানো শিক্ষকদের প্রতিবাদ আরও তীব্র আকার নিচ্ছে। এবার তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করেছেন। গত রাত ১২টা থেকে হাইকোর্ট নির্ধারিত টেন্টে বসেছেন অন্তত ১০ জন চাকরিহারা শিক্ষক। তাঁদের দাবি, এই আন্দোলন শুধুই নিজেদের চাকরি ফিরে পাওয়ার লড়াই নয়, এটি বিচার ও গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইও বটে।

চার দফা দাবি নিয়ে তাঁরা এই আমরণ অনশনে বসেছেন। এর মধ্যে রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ, বিচারপর্ব পুনর্বিবেচনার আবেদন, দুর্নীতির দায়ে চাকরি বাতিল হলেও নির্দোষদের চাকরি ফিরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করা এবং তদন্তে স্বচ্ছতা বজায় রাখা।

   

“যোগ্য শিক্ষক অধিকার মঞ্চ”-এর তরফে জানানো হয়েছে, এই আমরণ অনশন চলবে যতক্ষণ না সরকার তাঁদের দাবি মেনে নিচ্ছে। তাঁদের অভিযোগ, প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতবার আলোচনা হয়েছে, ততবারই মিথ্যা আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। এক কর্মীর কথায়, “চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা হলেও সদিচ্ছার অভাব স্পষ্ট। কোনও সদর্থক বার্তা আসেনি।”

তাঁরা আরও জানিয়েছেন, রিভিউ ফাইল দাখিল করা হলেও, সেই ফাইলে আশার আলো দেখতে পাচ্ছেন না তাঁরা। কারণ প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখনো পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি যা চাকরিহারাদের স্বস্তি দিতে পারে।

চাকরিহারা শিক্ষকদের দাবি, তাঁরা সম্পূর্ণ স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরীক্ষায় পাশ করেছিলেন এবং নিয়োগপত্র পেয়েছিলেন। তাঁরা দুর্নীতির অংশ ছিলেন না, অথচ আজ তাঁদের জীবন-জীবিকা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে। একজন অনশনরত শিক্ষক জানান, “আমরা শুধু বিচার চাই। আমাদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ নেই, তবুও আমরা শাস্তি পাচ্ছি। এই অন্যায়ের প্রতিবাদেই আমরা জীবনপণ করে আন্দোলনে বসেছি।”

তাঁরা অভিযোগ করেছেন, সরকার শুধু নাটক করছে। মুখে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কথা বললেও, বাস্তবে আবারও দুর্নীতির প্রস্তুতি চলছে। নতুন করে ফর্ম ফিলাপের কথা বলা হচ্ছে, যেখানে পুরনোভাবে আবারও অনিয়মের আশঙ্কা করছেন তাঁরা।

Advertisements

চাকরিহারারা জানান, তাঁরা ইতিমধ্যেই সিবিআই অফিসে গিয়েছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, যথাযথ তদন্ত হয়নি। প্রয়োজনীয় সিএফএসএল (CFSL) ডেটা এখনও উদ্ধার হয়নি যা তাঁদের নির্দোষ প্রমাণে সহায়ক হতে পারত।

এই অবস্থায় সরকারের ভূমিকা নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন আন্দোলনরত শিক্ষকরা। তাঁরা প্রশ্ন তুলেছেন, কেন সরকার এই ইস্যুকে এড়িয়ে চলতে চাইছে? কেন তাঁদের ন্যায্য প্রশ্নগুলোর উত্তর দিচ্ছে না?

চাকরিহারা শিক্ষকদের এই আন্দোলন নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতেও আলোড়ন শুরু হয়েছে। বিরোধীরা এই ইস্যুকে হাতিয়ার করে সরকারের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন।

পথে নেমে শিক্ষকরা জানান, এটা তাঁদের বেঁচে থাকার লড়াই। একজন অনশনরত শিক্ষিকার কণ্ঠে শোনা গেল, “আমরা আমাদের পরিবার ছেড়ে, জীবনের সমস্ত স্বাচ্ছন্দ্য ছেড়ে পথে নেমেছি। শুধু চাই আমাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে আসুক।”

এই আন্দোলনের প্রতি জনমত কতটা তৈরি হয় এবং সরকার কী পদক্ষেপ নেয়, এখন সেটাই দেখার। তবে এটা স্পষ্ট, চাকরিহারা শিক্ষকরা আর নতিস্বীকারে রাজি নন। তাঁরা লড়াই চালিয়ে যাওয়ার মনস্থ করেছেন, প্রয়োজনে জীবন দিয়ে হলেও।