প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন রাজ্য সফর: তৃণমূলের শহিদ দিবসের আগে রাজনৈতিক উত্তাপ
আসন্ন ২১ জুলাই, তৃণমূল কংগ্রেসের শহিদ দিবস উপলক্ষে রাজ্য রাজনীতি ইতিমধ্যেই সরগরম। তারই মাঝে আরও উত্তাপ যোগ করতে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদির ফের রাজ্যে আগমন। সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, আগামী ১৮ জুলাই তিনি দক্ষিণবঙ্গ সফরে আসতে পারেন। সম্ভাব্য সভাস্থল হিসেবে উঠে এসেছে দমদম ও বারাসতের নাম।
প্রধানমন্ত্রীর এই সফর ঘিরে বিজেপির অন্দরে ব্যাপক প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। জানা যাচ্ছে, এই সভাটি মূলত বিজেপির চারটি সাংগঠনিক জেলা— বারাসত, বনগাঁ, বারাকপুর ও কলকাতা উত্তর— কে কেন্দ্র করেই আয়োজন করা হচ্ছে। এই জেলাগুলোর নেতা-কর্মীরা ইতিমধ্যে সভা সফল করতে মরিয়া হয়ে মাঠে নেমেছেন। বুথ স্তরে কর্মী সম্মেলন, পথসভা, মিছিল— সবকিছুতেই এখন মোদির সভার প্রচার। স্থানীয় স্তরে কর্মীদের মধ্যে একপ্রকার চাঙ্গাভাব লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
উল্লেখযোগ্য যে, এর আগে মে মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদি উত্তরবঙ্গ সফরে এসে আলিপুরদুয়ারে একটি জনসভা করেন। সেই সভার মাধ্যমে বিজেপি আবারও রাজ্যে নিজেদের মাটি শক্ত করার বার্তা দেয়। এবার তৃণমূলের শহিদ দিবসের মাত্র কয়েকদিন আগেই দক্ষিণবঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর জনসভা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
রাজনৈতিক মহলের ধারণা, ২১ জুলাই শহিদ দিবসকে ঘিরে তৃণমূল যখন নিজেদের জনভিত্তি মজবুত করার কাজে ব্যস্ত থাকবে, ঠিক তার আগেই মোদির এই সফর কার্যত পাল্টা বার্তা দেবে। এতে বিজেপি কর্মীদের মনোবল যেমন বাড়বে, তেমনি সাধারণ মানুষের মধ্যেও একপ্রকার বার্তা যাবে যে কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখনও রাজ্যে বিজেপিকে গুরুত্ব দিচ্ছে এবং ভবিষ্যতের জন্য তৈরি করছেন সংগঠনকে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের সফর ও জনসভা রাজনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলা বরাবরই একটি রাজ্য যেখানে বিজেপির জন্য মিশ্র সাড়া দেখা যায়। কিছু এলাকায় বিজেপির সংগঠন মজবুত হলেও অনেক জায়গাতেই তৃণমূলের দাপট প্রবল। ফলে, যেসব এলাকায় সংগঠন তুলনামূলক দুর্বল— যেমন কলকাতা ও শহরতলি অঞ্চল— সেখানেই এবার সভা করতে চলেছেন মোদি। বারাকপুর, বনগাঁ, বারাসত— এই তিনটি লোকসভা কেন্দ্রে একসময় বিজেপির ভালো ফল হয়েছিল। তবে বিগত নির্বাচনে এই সাফল্যে ভাটা পড়েছে। তাই ফের পুরনো জমি ফিরে পেতে বিজেপি এবার মরিয়া।
তৃণমূল অবশ্য প্রধানমন্ত্রীর এই সফরকে গুরুত্ব দিতে নারাজ। তৃণমূলের এক নেতা বলেন, “২১ জুলাই আমাদের শহিদ দিবস। বাংলার মানুষ সেই দিন রাস্তায় নামেন শহিদদের শ্রদ্ধা জানাতে। কারা কখন কোথায় সভা করছে, সেটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই।”
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই সফর শুধু জনসভা নয়, এটি একধরনের রাজনৈতিক কৌশলও। মোদি যদি ১৮ তারিখ দক্ষিণবঙ্গ সফর করেন, তাহলে তা সরাসরি তৃণমূলের বার্তায় পাল্টা প্রতিক্রিয়া হয়ে দাঁড়াবে। এর পাশাপাশি বিজেপি সাংগঠনিকভাবে কতটা প্রস্তুত, তা-ও যাচাই করে নেবেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
সব মিলিয়ে মোদির আসন্ন সফর ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে উত্তেজনা ছড়াচ্ছে। এখন দেখার, এই জনসভা আদৌ কতটা প্রভাব ফেলে তৃণমূলের শহিদ দিবসের বার্তার সামনে। রাজনৈতিক মহল কিন্তু ইতিমধ্যেই হিসেব-নিকেশ শুরু করে দিয়েছে।