আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা মঙ্গলবার রাজ্য বিধানসভায় গায়ক জুবিন গার্গের রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য উন্মোচন করলেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে ঘোষণা করেন, সিঙ্গাপুরে তাঁর মৃত্যু কোনো সাধারণ দুর্ঘটনা ছিল না, বরং এটি ছিল “স্রেফ খুন” (Plain and Simple Murder)। শর্মা স্পষ্ট জানান, এই নির্মম অপরাধের পেছনের উদ্দেশ্য রাজ্যের মানুষকে বিস্মিত করবে, যদিও তিনি অতিরিক্ত তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থাকেন।
হত্যাকাণ্ড নয়, সুপরিকল্পিত খুন
বিধানসভায় বক্তব্য রাখার সময় মুখ্যমন্ত্রী জোর দিয়ে বলেন, “আসাম পুলিশ, প্রাথমিক তদন্তের পরেই নিশ্চিত হয়েছে যে এটি নিছক দোষী হত্যাকাণ্ড নয়, বরং এটি ছিল একটি সরেল ও সাধারণ খুন।”
‘ইয়া আলী’ খ্যাত জুবিন গার্গ, যিনি আসাম ও বলিউডের সংগীতে একটি যুগ ধরে মুগ্ধতা ছড়িয়েছিলেন, তিনি গত ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরের একটি দ্বীপের কাছে সাঁতার কাটার সময় মারা যান। গায়কের এই আকস্মিক প্রয়াণ অসমের মানুষের কাছে একটি অত্যন্ত সংবেদনশীল ইস্যুতে পরিণত হয়েছে।
তদন্তের অগ্রগতির চিত্র: ৭ অভিযুক্ত আটক Zubeen Garg Murder Claim
মুখ্যমন্ত্রী জানান, এই মামলার তদন্তের জন্য গঠিত বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) এ পর্যন্ত সাত জন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে এবং ২৫২ জন সাক্ষীর জবানবন্দি নিয়েছে।
শর্মা বিধানসভাকে অবহিত করেন, “গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের মধ্যে একজন গার্গকে হত্যা করেছে এবং অন্যেরা তাকে সাহায্য করেছে। চার থেকে পাঁচজনকে এই হত্যা মামলায় অভিযুক্ত করা হচ্ছে।”
ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব এবং পুলিশি দ্বন্দ্ব
জুবিনের মৃত্যুর পর থেকেই এটি অসমে তীব্র বিতর্কের জন্ম দেয়। শুরু থেকেই একাধিক ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব প্রচারিত হচ্ছিল। কেউ কেউ অভিযোগ করেন, গায়কের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং উৎসবের আয়োজক শ্যামকানু মহন্তের মতো ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের অবহেলা ছিল এর পিছনে। আবার কিছু মহল থেকে দাবি করা হয়, ৫২ বছর বয়সী এই গায়ককে ‘বিষ প্রয়োগ’ করা হয়েছিল এবং ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য সুনির্দিষ্টভাবে একটি বিদেশি গন্তব্য বেছে নেওয়া হয়েছিল।
অবশ্য, সিঙ্গাপুর পুলিশ এক বিবৃতিতে জানিয়েছিল যে তারা গায়কের মৃত্যুতে কোনো খারাপ উদ্দেশ্য (foul play) সন্দেহ করছে না। যদিও সিঙ্গাপুর থেকে পাঠানো ময়নাতদন্ত এবং টক্সিকোলজি রিপোর্ট আসাম পুলিশের কাছে জমা পড়েছে।
ডিসেম্বরে চার্জশিট, উন্মোচিত হবে আসল উদ্দেশ্য
আসামের মুখ্যমন্ত্রী আশ্বাস দেন, এই হত্যা মামলার চার্জশিট আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই আদালতে জমা দেওয়া হবে।
শর্মা বলেন, “এরপর তদন্তের পরিধি আরও বাড়ানো হবে। তাতে গাফিলতি, বিশ্বাসভঙ্গ এবং অন্যান্য দিক অন্তর্ভুক্ত করা হবে। তবে একটি কথা নিশ্চিত— এই অপরাধের পেছনের উদ্দেশ্য রাজ্যের মানুষকে হতবাক করবে।”
