গুয়াহাটি: অসমের জনপ্রিয় গায়ক ও সুরকার জুবিন গার্গের (Zubeen Garg) রহস্যজনক মৃত্যু ঘিরে উত্তেজনা তুঙ্গে। এই মৃত্যুকাণ্ডে অভিযুক্তদের স্থানান্তরের সময় বকসা জেলের সামনে সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে, যার জেরে ৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
অসম পুলিশের বকসা জেলার সিনিয়র সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ উজ্জ্বল প্রতিম বড়ুয়া জানান, “এখন পর্যন্ত ৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। আরও কিছু অভিযুক্তকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং তাঁদের খোঁজ চলছে। আমরা তদন্ত অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি।”
গত বুধবার পাঁচজন অভিযুক্তকে গৌহাটি আদালত থেকে বিচারবিভাগীয় হেফাজতে পাঠানো হয়। তাঁদের বকসা জেলে নিয়ে যাওয়ার সময় পরিস্থিতি হঠাৎ উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। ভক্তদের দাবি, অভিযুক্তদের দ্রুত শাস্তি দিতে হবে, তবে কিছু দুষ্কৃতী ভক্তদের ছদ্মবেশে পাথর নিক্ষেপ ও গাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেয়।
এই ঘটনায় একাধিক গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং কয়েকজন পুলিশ কর্মী ও সাংবাদিক আহত হন। অশান্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ লাঠিচার্জ ও টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে।
জেলার প্রশাসন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ইন্টারনেট ও মোবাইল ডেটা পরিষেবা বন্ধ করে দেয়, যা শুক্রবার আবার চালু করা হয়েছে। যদিও, মুশলপুর শহর ও আশপাশের এলাকায় BNSS-এর ধারা ১৬৩ অনুযায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি রয়েছে।
উজ্জ্বল প্রতিম বড়ুয়া বলেন, “সত্যিকারের ভক্তদের চিন্তার কিছু নেই। যারা ভক্ত সেজে সহিংসতা উসকে দিয়েছে, তাদের আমরা শনাক্ত করেছি। আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
জুবিন গার্গের মৃত্যু ঘটে ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে, যখন তিনি ৪র্থ নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যালে (NEIF) অংশগ্রহণের জন্য সেখানে গিয়েছিলেন। সমুদ্রস্নানের সময় তাঁর মৃত্যু হয়। এই মৃত্যুর ঘটনাকে কেন্দ্র করে অসমজুড়ে শোকের ছায়া নেমে আসে।
এই ঘটনায় পুলিশ গ্রেফতার করেছে NEIF-এর মুখ্য সংগঠক শ্যামকানু মহান্ত, গার্গের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা, আত্মীয় ও পুলিশ অফিসার সন্দীপন গার্গ, এবং দুই নিরাপত্তারক্ষী নন্দেশ্বর বরা ও প্রভীন বৈশ্যকে। তাঁরা বর্তমানে বকসা জেলে রয়েছেন।
এছাড়া, গার্গের ব্যান্ডের দুই সদস্য শেখরজ্যোতি গোস্বামী ও অমৃতপ্রভা মহন্তকেও গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের দিমা হাসাও জেলার হাফলং জেলে পাঠানো হয়েছে।
অসম পুলিশের CID বিভাগের একটি ১০ সদস্যের বিশেষ তদন্ত দল (SIT) গঠিত হয়েছে এই মৃত্যু রহস্য তদন্তের জন্য। CID সূত্রে জানা গেছে, প্রত্যেক অভিযুক্তের বক্তব্য রেকর্ড করা হচ্ছে এবং ঘটনাস্থল ও বিদেশি সংযোগ সম্পর্কেও তদন্ত চলছে।
অসমের সাংস্কৃতিক মহলে এই ঘটনা নিয়ে চাঞ্চল্য। ভক্তদের একাংশ প্রশাসনের কাছে দ্রুত ন্যায়বিচারের দাবি জানিয়েছেন। তবে পুলিশ জানিয়েছে, “কোনও ভক্তকে অযথা অভিযুক্ত করা হবে না, তবে যারা পরিস্থিতি ঘোলাটে করেছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না।”
অসম সরকারের তরফেও জানানো হয়েছে, জুবিন গার্গের মৃত্যু নিয়ে পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট সিঙ্গাপুর প্রশাসনের সহযোগিতায় সংগ্রহ করা হবে।