জুবিন মৃত্যুতে নয়া মোড়! ম্যানেজারের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ পরিবারের

অসম: জনপ্রিয় অসমীয়া গায়ক ও সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গর্গের রহস্যজনক মৃত্যু (Zubeen Garg Death Case) ঘিরে উত্তাল গোটা অসম। গায়কের পরিবার এবার সরাসরি তাঁর ম্যানেজার সিদ্ধার্থ…

Zubeen Garg

অসম: জনপ্রিয় অসমীয়া গায়ক ও সঙ্গীতশিল্পী জুবিন গর্গের রহস্যজনক মৃত্যু (Zubeen Garg Death Case) ঘিরে উত্তাল গোটা অসম। গায়কের পরিবার এবার সরাসরি তাঁর ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা এবং সিঙ্গাপুরে অনুষ্ঠিত উত্তর-পূর্ব উৎসবের প্রধান আয়োজক শ্যামকানু মহন্তর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ দায়ের করেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে অসম ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন ডিপার্টমেন্টের (CID) কাছে অনলাইনে জমা দেওয়া অভিযোগে অবহেলা এবং দায়িত্বজ্ঞানহীনতার কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।

Advertisements

জুবিনের স্ত্রী গরিমা সাইকিয়া গর্গ, শ্যালিকা পামি বার্থাকুর এবং কাকা মনোজ বার্থাকুর এই অভিযোগপত্রে স্বাক্ষর করেছেন। তাঁরা দাবি করেছেন, সিঙ্গাপুর সফরের সময় একাধিক ক্ষেত্রে অবহেলা এবং নিরাপত্তার অভাবই জুবিনের মৃত্যুর প্রধান কারণ। অভিযোগে কেবল ম্যানেজার ও আয়োজকের নামই নয়, সফরে যুক্ত সমস্ত ব্যক্তির নামও উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছেন সেই অসমীয়া বাসিন্দারাও যারা জুবিনকে ইয়ট পার্টিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

   

পরিবারের বক্তব্য, জুবিন গর্গের মৃত্যু কোনও সাধারণ দুর্ঘটনা নয়। এর পিছনে একাধিক অসঙ্গতি ও প্রশ্ন রয়েছে, যেগুলির উত্তর এখনো অজানা। তাই তাঁরা একটি পূর্ণাঙ্গ, স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। CID ইতিমধ্যে অভিযোগ গ্রহণ করেছে এবং শীঘ্রই তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করবে বলে জানা গিয়েছে।

উল্লেখ্য, ১৯ সেপ্টেম্বর সিঙ্গাপুরে সমুদ্রে সাঁতার কাটতে নামার পর ৫২ বছর বয়সী জুবিন গর্গকে জলের মধ্যে মুখ নিচু অবস্থায় ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। তাঁর মৃত্যুতে গোটা সংগীত জগৎ শোকাহত। তিনি ২০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হতে চলা তিন দিনব্যাপী “নর্থ ইস্ট ইন্ডিয়া ফেস্টিভ্যাল”-এ অংশ নিতে সিঙ্গাপুর গিয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পর উৎসবটি বাতিল করে দেওয়া হয়।

বিশেষ তদন্তকারী দল (SIT) এই ঘটনায় তদন্ত শুরু করেছে। তারা ইতিমধ্যেই ম্যানেজার সিদ্ধার্থ শর্মা ও আয়োজক শ্যামকানু মহন্তকে ৬ অক্টোবরের মধ্যে হাজিরা দেওয়ার জন্য সমন পাঠিয়েছে। সেই সঙ্গে ইয়টে উপস্থিত আরও এক ডজনেরও বেশি ব্যক্তিকেও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে।

অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা জানান, “আমরা তদন্তের জন্য ৬ অক্টোবর পর্যন্ত সময় দিয়েছি। ভারতীয় দূতাবাসের মাধ্যমে সমন পাঠানো হয়েছে এবং অভিযুক্তদের দেশ ছেড়ে পালানো আটকাতে ইন্টারপোলের মাধ্যমে লুকআউট নোটিশ জারি করা হয়েছে।”

এই ঘটনার জেরে অসমজুড়ে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। অসংখ্য মানুষ রাস্তায় নেমে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন এবং অবিলম্বে দোষীদের গ্রেফতারের দাবি তুলছেন। মুখ্যমন্ত্রীও রাজ্যের মানুষকে আশ্বস্ত করেছেন যে, “এই মামলায় কেউ পার পাবে না। যাঁদের দোষ প্রমাণিত হবে, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জুবিন গর্গের মৃত্যু কেবল একটি ব্যক্তিগত ক্ষতি নয়, বরং গোটা উত্তর-পূর্ব ভারতের সংগীত সংস্কৃতির জন্য এক বড় আঘাত। তাঁর কণ্ঠ ও সঙ্গীত অসংখ্য মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছে। এখন রাজ্যের মানুষের একটাই দাবি—একটি স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে সত্যকে সামনে আনা হোক এবং দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়া হোক।