ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে ফোনালাপ করেছেন (Zelensky)। এই ফোনালাপে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে শান্তি প্রচেষ্টা, দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। জেলেনস্কি এই ফোনালাপের পর বলেছেন যে, ভারত ইউক্রেনের শান্তি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে এবং ইউক্রেন সংক্রান্ত যেকোনও সিদ্ধান্তে ইউক্রেনের অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
এছাড়া, আগামী সেপ্টেম্বর মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদী ইউক্রেন সফর করে জেলেনস্কির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন বলে জানা গেছে। এই ফোনালাপ ভারতের নিরপেক্ষ অবস্থান এবং ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধানে ভারতের ভূমিকাকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির মধ্যে এই ফোনালাপ সোমবার অনুষ্ঠিত হয়েছে। ফোনালাপে মোদী ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য ভারতের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
জেলেনস্কি তাঁর এক্স পোস্টে বলেছেন, “ভারত আমাদের শান্তি প্রচেষ্টাকে সমর্থন করছে এবং এই অবস্থান ভাগ করে নেওয়া গুরুত্বপূর্ণ যে, ইউক্রেন সংক্রান্ত সবকিছু ইউক্রেনের অংশগ্রহণ ছাড়া সিদ্ধান্ত নেওয়া যাবে না।”
এই মন্তব্য ইউক্রেনের অবস্থানকে স্পষ্ট করে যে, রাশিয়ার সঙ্গে যেকোনও আলোচনায় ইউক্রেনের ভূমিকা অপরিহার্য।এই ফোনালাপের পর জেলেনস্কি আরও বলেছেন যে, ভারতের সমর্থন ইউক্রেনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষ করে যখন রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং আন্তর্জাতিক সমর্থনের প্রয়োজন বাড়ছে।
ভারতের বিদেশ মন্ত্রকের একটি বিবৃতিতে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী মোদী যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মানবিক সংকট নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং ইউক্রেনকে সাহায্য প্রদানের জন্য ভারতের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ভারত ইতিমধ্যে ইউক্রেনকে চিকিৎসা সরঞ্জাম, ওষুধ এবং অন্যান্য মানবিক সাহায্য প্রদান করেছে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে শুরু হওয়ার পর থেকে ভারত নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী বারবার বলেছেন যে, যুদ্ধের সমাধান শান্তিপূর্ণ আলোচনার মাধ্যমে হওয়া উচিত এবং ভারত সব পক্ষের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখবে। গত জুলাই মাসে মোদী রাশিয়া সফর করে প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন, যা ইউক্রেনের জন্য উদ্বেগজনক ছিল।
তবে, মোদী সেই সফরে যুদ্ধের সমাপ্তির জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন। এরপর আগস্টের শুরুতে মোদী পুতিনের সঙ্গে ফোনালাপ করেন, যাতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক এবং যুদ্ধ নিয়ে আলোচনা হয়।জেলেনস্কির সঙ্গে এই ফোনালাপ এই প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। জেলেনস্কি বলেছেন যে, ভারতের সমর্থন ইউক্রেনের শান্তি ফর্মুলাকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য সাহায্য করবে।
ইউক্রেনের শান্তি ফর্মুলায় রাশিয়ান সেনা প্রত্যাহার, অঞ্চলীয় অখণ্ডতা পুনরুদ্ধার এবং নিরাপত্তা গ্যারান্টি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। ভারতের নিরপেক্ষতা এবং বহুপাক্ষিকতা নীতি এই যুদ্ধে একটি মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করতে পারে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। গত বছর মোদী জেলেনস্কির সঙ্গে কিয়েভে সাক্ষাৎ করেছিলেন এবং শান্তি প্রচেষ্টায় ভারতের সমর্থনের কথা বলেছিলেন।
এই ফোনালাপ আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ায় ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। আমেরিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন ভারতকে ইউক্রেনের পক্ষে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য চাপ দিচ্ছে, যখন রাশিয়া ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রাখতে চাইছে।
জেলেনস্কির মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি ভারতকে শান্তি প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করতে চান। বিশ্লেষকরা মনে করেন, সেপ্টেম্বরের সাক্ষাৎ যুদ্ধের সমাধানে নতুন দিগন্ত খুলতে পারে। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, মোদী ইউক্রেনের অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে সমর্থন করে এবং শান্তিপূর্ণ সমাধানের জন্য সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাবেন।
ভারত যুদ্ধের শুরু থেকে নিরপেক্ষ অবস্থান বজায় রেখেছে এবং রাশিয়া থেকে অস্ত্র এবং তেল আমদানি চালিয়ে যাচ্ছে। তবে, মানবিক সাহায্য হিসেবে ইউক্রেনকে সহায়তা প্রদান করেছে। এই ফোনালাপ ভারতের কূটনৈতিক ভারসাম্যের প্রমাণ।
সেপ্টেম্বরের সাক্ষাৎ যদি হয়, তাহলে এটি মোদীর দ্বিতীয় ইউক্রেন সফর হবে এবং যুদ্ধের সমাধানে ভারতের ভূমিকাকে আরও জোরদার করবে।
এই ঘটনা ভারতের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বাড়িয়েছে এবং গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে ভারতের অবস্থানকে সুসংহত করেছে।এই ফোনালাপ ইউক্রেন যুদ্ধের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করতে পারে, যেখানে ভারত মধ্যস্থতাকারী ভূমিকা পালন করবে।
বঙ্গ সফরে প্রধানমন্ত্রীর দিনবদল, মেট্রো উদ্বোধন ও জনসভা
জেলেনস্কির মন্তব্য থেকে স্পষ্ট যে, তিনি ভারতের সমর্থনকে মূল্যায়ন করছেন এবং শান্তি প্রক্রিয়ায় ভারতকে অন্তর্ভুক্ত করতে চান। ভারতের জন্য এটি একটি সুযোগ, যাতে তা রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে।