Yunus’ Sensational Proposal on ‘Seven Sisters’ During China Visit
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান মহম্মদ ইউনূস (yunus) সম্প্রতি চার দিনের চীন সফরে গিয়েছিলেন। এই সফরে তিনি বেইজিংয়ের কাছে একটি অপ্রত্যাশিত প্রস্তাব রেখেছেন, যেখানে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাতটি রাজ্যের কথা উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এই সাতটি রাজ্য, যিনি ‘সেভেন সিস্টার্স’ নামে পরিচিত, স্থলবেষ্টিত এবং সমুদ্রে প্রবেশের কোনো পথ নেই।
ইউনূসের (yunus) প্রস্তাব
ইউনূস প্রস্তাব দিয়েছেন যে, চীন বাংলাদেশকে ব্যবহার করে এই অঞ্চলে তার অর্থনৈতিক প্রভাব বিস্তার করতে পারে। এই বক্তব্য ভারতের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, কারণ বাংলাদেশ ভারতের কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী এবং এর কয়েকটি স্থান শিলিগুড়ি করিডরের কাছাকাছি অবস্থিত। এই করিডর, যাকে ‘চিকেন’স নেক’ বলা হয়, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে সংযুক্ত করে।
ইউনূস (yunus) চীনের কাছে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থানকে কাজে লাগিয়ে এই অঞ্চলে অর্থনৈতিক পদচিহ্ন স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “ভারতের সাতটি রাজ্য, পূর্বাঞ্চলীয় অংশ, যাকে সেভেন সিস্টার্স বলা হয়, তারা ভারতের একটি স্থলবেষ্টিত অঞ্চল। তাদের সমুদ্রে পৌঁছানোর কোনো উপায় নেই। আমরাই এই অঞ্চলে সমুদ্রের একমাত্র অভিভাবক।” এই মন্তব্যের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশকে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জন্য সমুদ্রপথে প্রবেশের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে তুলে ধরেছেন এবং চীনকে এই সুযোগ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলি—অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, মেঘালয়, মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড এবং ত্রিপুরা—ভৌগোলিকভাবে সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন। এই অঞ্চলটি ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে সংযোগের জন্য শিলিগুড়ি করিডরের ওপর নির্ভরশীল, যা একটি ২২ কিলোমিটার চওড়া সরু ভূখণ্ড।
এই করিডর বাংলাদেশ ও নেপালের মধ্যে অবস্থিত এবং ভারতের কৌশলগত নিরাপত্তার দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বন্দর এই অঞ্চলের জন্য সমুদ্রপথে বাণিজ্যের একটি সম্ভাব্য রুট হতে পারে, এবং ইউনূস সম্ভবত এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে চীনের বিনিয়োগ আকর্ষণের চেষ্টা করেছেন।
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব যদি ভারতের নিকটবর্তী প্রতিবেশী দেশগুলিতে ছড়িয়ে পড়ে, তবে তা ভারতের জন্য উদ্বেগজনক হবে। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ৪,০৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত রয়েছে, এবং এই অঞ্চলের স্থিতিশীলতা ভারতের জাতীয় নিরাপত্তার সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
চীন যদি বাংলাদেশে তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব বাড়ায়, তবে তা উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নিরাপত্তা এবং সিলিগুড়ি করিডরের কৌশলগত গুরুত্বের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত ইতিমধ্যেই চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (BRI)-এর প্রভাব নিয়ে সতর্ক রয়েছে, এবং ইউনূসের এই প্রস্তাব সেই উদ্বেগকে আরও গভীর করেছে।
আরো দেখুন সেনাবাহিনীতে অগ্নিবীর হতে হলে দশম পাশরা ফর্ম পূরণ করুন, বন্ধ হতে চলেছে আবেদন প্রক্রিয়া
ইউনূসের বক্তব্যে আরও উল্লেখযোগ্য বিষয়
ইউনূসের বক্তব্যে আরও উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, তিনি উত্তর-পূর্বাঞ “‘এক্সটেনশন’ হিসেবে ব্যবহারের পরোক্ষ প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, “এটি চীনের অর্থনীতির একটি সম্প্রসারণ হতে পারে—উৎপাদন, বাজারজাতকরণ, চীনে নিয়ে আসা এবং বিশ্বের বাকি অংশে পৌঁছে দেওয়া।” এই মন্তব্য ভারতের সার্বভৌমত্বের ওপর প্রশ্ন তুলেছে এবং বাংলাদেশের মাধ্যমে চীনের অর্থনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে ইঙ্গিত করে।
উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগ বাড়াতে
ভারত উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সংযোগ বাড়াতে ব্যাপক পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ করছে। ত্রিপুরা থেকে আসাম পর্যন্ত রেল ও সড়ক নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ, সাগরমালা প্রকল্পের মাধ্যমে সমুদ্রপথে সংযোগ এবং বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রাম ও মোংলা বন্দর ব্যবহারের উদ্যোগ এই প্রচেষ্টার অংশ। তবে ইউনূসের বক্তব্যে এই প্রকল্পগুলির গুরুত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে, যা ভারতের কাছে অগ্রহণযোগ্য।
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ইউনূসের এই মন্তব্য রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
অর্থনীতিবিদ সঞ্জীব সান্যাল এই বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন
অর্থনীতিবিদ সঞ্জীব সান্যাল এই বক্তব্যের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, “চীন যদি বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে চায়, তবে তা করতে পারে, কিন্তু ভারতের সাতটি রাজ্যকে এর সঙ্গে জড়ানোর কী প্রয়োজন?” ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনও এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে কূটনৈতিক সূত্র জানায়, নয়াদিল্লি এই বিষয়টির ওপর নজর রাখছে।
ইউনূসের এই সফরে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। চীন বাংলাদেশের একটি বড় বিনিয়োগকারী, এবং ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দর উন্নয়ন, পায়রা বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং পদ্মা সেতু রেল সংযোগের মতো প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে। তবে ভারতের অভ্যন্তরীণ অঞ্চলকে জড়িয়ে এই ধরনের প্রস্তাব নতুন মাত্রা যোগ করেছে।
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপর প্রভাব
এই ঘটনা ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। ভারত বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিনের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছে এবং বাণিজ্য, নিরাপত্তা ও সীমান্ত সহযোগিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তবে চীনের প্রভাব বৃদ্ধি এই সমীকরণে পরিবর্তন আনতে পারে।
ইউনূসের এই মন্তব্য কেবল অর্থনৈতিক প্রস্তাব নয়, বরং দক্ষিণ এশিয়ার ভূ-রাজনৈতিক গতিশীলতার একটি নতুন অধ্যায়ের ইঙ্গিত। ভারত এখন এই পরিস্থিতির জবাবে কী পদক্ষেপ নেয়, তা এই অঞ্চলের ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ হবে।