গত সাত দিনে ভারত থেকে রেকর্ড পরিমান চাল নিয়েছে ইউনুস সরকার

বাংলাদেশ (Yunus Government) গত সাত দিনে ভারত থেকে ১,৭৮৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে এবং খাদ্য সরবরাহ…

Yunus Government

বাংলাদেশ (Yunus Government) গত সাত দিনে ভারত থেকে ১,৭৮৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে, যা দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে চালের দাম স্থিতিশীল রাখতে এবং খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এই আমদানি বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে এবং ভারতের সঙ্গে চলমান বাণিজ্য সম্পর্কের অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে।

সম্প্রতি বাংলাদেশে বন্যার কারণে চালের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এই আমদানি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।বাংলাদেশের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই ১,৭৮৫ মেট্রিক টন চাল বেনাপোল স্থলবন্দরের মাধ্যমে পাঁচটি চালানে আমদানি করা হয়েছে।

   

বেনাপোল বন্দরের পরিচালক শামীম হোসেন জানিয়েছেন, গত ২৮ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দিনে এই চালানগুলি বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এর মধ্যে ২৮ আগস্ট ১০৫ মেট্রিক টন, ৩০ আগস্ট ২১০ মেট্রিক টন এবং অন্যান্য দিনে বাকি পরিমাণ চাল আমদানি হয়েছে। এই চালানগুলি মূলত নন-বাসমতি পারবয়ল্ড চাল, যা বাংলাদেশের বাজারে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

এই আমদানি প্রক্রিয়া বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সরকারের বৃহত্তর পরিকল্পনার অংশ। ২০২৪ সালের আগস্ট এবং অক্টোবরে বাংলাদেশে ভয়াবহ বন্যার কারণে প্রায় ১১ লক্ষ মেট্রিক টন চালের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই ক্ষতি দেশের খাদ্য সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি করেছে এবং বাজারে চালের দাম বৃদ্ধির কারণ হয়েছে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, “বর্তমানে আমাদের কোনো তাৎক্ষণিক চালের ঘাটতি নেই, তবে ভবিষ্যতে যাতে কোনো সংকট না হয়, সেজন্য আমরা ভারত থেকে চাল আমদানি করছি।”

ভারত বাংলাদেশের চাল আমদানির ক্ষেত্রে প্রধান উৎস হিসেবে কাজ করছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ মোট ১৩.০৫ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানি করেছে, যার বেশিরভাগই ভারত থেকে এসেছে।

পশ্চিমবঙ্গ, যা ভারতের নন-বাসমতি চালের বৃহত্তম উৎপাদক, বাংলাদেশের চাল আমদানির প্রধান উৎস। সম্প্রতি ভারতের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের জন্য ২০০,০০০ মেট্রিক টন চাল রপ্তানির একটি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে, যার মধ্যে ২৭,০০০ মেট্রিক টন ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে পৌঁছেছে।

Advertisements

এই আমদানি প্রক্রিয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্কের মধ্যে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক উত্তেজনা এই বাণিজ্যের পটভূমিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে। গত আগস্টে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর থেকে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কে কিছুটা শীতলতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে, ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় কুমার ভার্মা জানিয়েছেন, “রাজনৈতিক পরিবর্তন সত্ত্বেও, গত ছয় মাসে আমাদের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে।”

বাংলাদেশের বাজারে চালের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার শুল্কমুক্ত আমদানির সুবিধা প্রদান করেছে। বেসরকারি আমদানিকারকদের জন্যও ১৬ লক্ষ মেট্রিক টন চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, বাংলাদেশ মায়ানমার থেকে ১০০,০০০ মেট্রিক টন এবং পাকিস্তান ও ভিয়েতনামের সঙ্গে অতিরিক্ত আমদানির বিষয়ে আলোচনা করছে।

এই আমদানি দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সহায়ক হলেও, কিছু বিশ্লেষক এবং কৃষকরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, আমদানি নির্ভরতা কমাতে কৃষি খাতে বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই।

কৃষি তথ্য সেবা (এআইএস) অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিশ্বে চাল উৎপাদনে তৃতীয় স্থানে রয়েছে, তবে ড. মুহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনে কৃষি খাতে নীতিগত ঘাটতি এবং ব্যবস্থাপনার ত্রুটির কারণে উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।

মোদীর ৭৫ তম জন্মদিন উপলক্ষে সাজো সাজো রব! কি কি থাকবে তালিকায়?

এই পরিস্থিতিতে, ভারত থেকে ১,৭৮৫ মেট্রিক টন চাল আমদানি বাংলাদেশের বাজারে স্বস্তি আনতে পারে। তবে, দীর্ঘমেয়াদে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানো এবং কৃষি খাতে বিনিয়োগের উপর জোর দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।