যুবসমাজের মুখে হাসি ফুটিয়ে ভারতে কমল বেকারত্বের হার

ভারতের শ্রমবাজারে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে দেশের বেকারত্বের (Unemployment)হার ৫.৬% থেকে কমে ৫.২%-এ নেমেছে। পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয় (MoSPI) প্রকাশিত পিরিয়ডিক…

Unemployment

ভারতের শ্রমবাজারে সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জুলাই মাসে দেশের বেকারত্বের (Unemployment)হার ৫.৬% থেকে কমে ৫.২%-এ নেমেছে। পরিসংখ্যান ও কর্মসূচি বাস্তবায়ন মন্ত্রণালয় (MoSPI) প্রকাশিত পিরিয়ডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (PLFS)-এর মাসিক বুলেটিনে এই তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

এই হ্রাস শ্রমবাজারে ইতিবাচক প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়, যদিও শহরাঞ্চল এবং যুব জনগোষ্ঠীর মধ্যে বেকারত্বের হার এখনও উদ্বেগের কারণ হিসেবে রয়ে গেছে। এই সাফল্য কৃষি, পরিষেবা এবং নির্মাণ খাতে মৌসুমি কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সঙ্গে যুক্ত বলে মনে করা হচ্ছে।পিএলএফএস-এর তথ্য অনুযায়ী, জুলাই ২০২৫-এ সামগ্রিক বেকারত্বের হার ৫.২%-এ নেমেছে, যা মে মাসে ৫.৬% এবং এপ্রিল মাসে ৫.১% ছিল।

   

এই হ্রাসের পিছনে প্রধান কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা মৌসুমি কৃষি কার্যক্রম এবং গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কথা উল্লেখ করেছেন। গ্রামীণ এলাকায় বেকারত্বের হার মে মাসে ৫.১% থেকে কমে জুলাই মাসে ৪.৮%-এ নেমেছে, যেখানে শহরাঞ্চলে এই হার ৬.৯% থেকে ৬.৫%-এ কমেছে। তবে, শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার গ্রামীণ এলাকার তুলনায় এখনও উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি।

যুব জনগোষ্ঠী (১৫-২৯ বছর বয়সী) মধ্যে বেকারত্বের হার জুলাই মাসে ১৩.৪%-এ নেমেছে, যা মে মাসে ১৩.৮% ছিল। শহরাঞ্চলে যুব বেকারত্ব ১৭.২% থেকে কমে ১৬.৮% এবং গ্রামীণ এলাকায় ১২.৩% থেকে ১১.৯%-এ নেমেছে।মহিলাদের মধ্যে বেকারত্বের হার জুলাই মাসে ৫.৪%-এ নেমেছে, যা মে মাসে ৫.৮% ছিল, যেখানে পুরুষদের মধ্যে এই হার ৫.৬% থেকে ৫.২%-এ কমেছে।

শহরাঞ্চলে মহিলা যুবদের (১৫-২৯ বছর) মধ্যে বেকারত্বের হার এখনও উচ্চ, যা জুলাই মাসে ২২.৫% ছিল, যদিও এটি মে মাসের ২৩.৭% থেকে কিছুটা কম। এই তথ্যগুলো শ্রমবাজারে লিঙ্গ এবং আঞ্চলিক বৈষম্যের চিত্র তুলে ধরে।লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট (LFPR) জুলাই মাসে ৫৫.২% ছিল, যা মে মাসে ৫৪.৮% থেকে সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

গ্রামীণ এলাকায় এলএফপিআর ৫৭.২% এবং শহরাঞ্চলে ৫০.৮% ছিল। পুরুষদের এলএফপিআর গ্রামীণ এলাকায় ৭৮.৫% এবং শহরাঞ্চলে ৭৫.০% ছিল, যেখানে মহিলাদের এলএফপিআর গ্রামীণ এলাকায় ৩৭.৫% এবং শহরাঞ্চলে ২৫.০% ছিল। ওয়ার্কার পপুলেশন রেশিও (WPR) জুলাই মাসে ৫২.৩% ছিল, যা গ্রামীণ এলাকায় ৫৪.৫% এবং শহরাঞ্চলে ৪৭.৫%।

Advertisements

এই তথ্যগুলো শ্রমবাজারে অংশগ্রহণ এবং কর্মসংস্থানের হারে সামান্য উন্নতির ইঙ্গিত দেয়।২০২৫-২৬ সালের কেন্দ্রীয় বাজেটে কৃষি, পোলট্রি, ডেয়ারি এবং নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি এই বেকারত্ব হ্রাসে ভূমিকা রেখেছে। কিষাণ ক্রেডিট কার্ড ঋণের সীমা বৃদ্ধি এবং জাতীয় পশুসম্পদ মিশনের মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি গ্রামীণ বেকারত্ব কমাতে সাহায্য করেছে।

তবে, শহরাঞ্চলে দক্ষতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ চাকরির অভাব এবং মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণে সামাজিক বাধা এখনও চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে।রাজনৈতিক মহলে এই তথ্য নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। বিরোধী দলগুলো, বিশেষ করে ইন্ডি জোট, দাবি করেছে যে বেকারত্বের হার কমলেও শহরাঞ্চলে যুব ও মহিলাদের জন্য পর্যাপ্ত চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়নি।

তারা নির্বাচন কমিশনের ভোটার তালিকার গরমিল এবং ডুপ্লিকেট ইপিক কার্ডের সমস্যার মতো বিষয়গুলোর সঙ্গে শ্রমবাজারের সমস্যাকে যুক্ত করে সরকারের সমালোচনা করেছে। অন্যদিকে, ক্ষমতাসীন এনডিএ জোট এই হ্রাসকে তাদের অর্থনৈতিক নীতির সাফল্য হিসেবে উপস্থাপন করছে।

দিল্লিতে ১০০ দিনের বকেয়া দাবিতে সুর চড়ালেন অভিষেক

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, মৌসুমি কারণ ছাড়াও সরকারের দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি এবং পরিকাঠামো প্রকল্পগুলো বেকারত্ব কমাতে সহায়ক হয়েছে। তবে, দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য শহরাঞ্চলে উচ্চ-দক্ষতাসম্পন্ন চাকরির সুযোগ এবং মহিলাদের কর্মক্ষেত্রে অংশগ্রহণ বাড়ানোর উদ্যোগ জরুরি। জুলাই মাসের এই তথ্য ভারতের শ্রমবাজারে ইতিবাচক অগ্রগতি দেখালেও, কাঠামোগত সমস্যা সমাধানে আরও প্রচেষ্টার প্রয়োজন।