মানচিত্র না পতাকা? পাকিস্তানকে বাংলাদেশের উপহার ঘিরে কেন উত্তাল ভারত

Younus Pakistan Gift Row

ঢাকা ও নয়াদিল্লির কূটনৈতিক মহলে শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন প্রধান উপদেষ্টা মহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের যৌথ চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মিরজাকে সম্প্রতি উপহার দিয়েছেন একটি কফি টেবিল বই। কিন্তু সেই বইয়ের প্রচ্ছদ নিয়েই এখন তীব্র আলোড়ন ছড়িয়েছে দুই দেশের রাজনৈতিক পরিসরে।

Advertisements

শনিবার (২৫ অক্টোবর) ঢাকার রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা ‘যমুনা’-য় এই সৌজন্য সাক্ষাৎ ও উপহার-বিনিময়ের মুহূর্তটি ঘটে। ইউনূসের পক্ষ থেকে দেওয়া বইটির নাম “Art of Triumph: Graffiti of Bangladesh’s New Dawn” অর্থাৎ, ‘জয়ের শিল্প, বাংলাদেশের নতুন ভোরের গ্রাফিতি’। তবে বইটির প্রচ্ছদেই যেন লুকিয়ে ছিল আগুনের আঁচ।

   

প্রচ্ছদেই বিতর্কের সূত্রপাত

বইটির প্রচ্ছদে দেখা যায়, সবুজ-লাল ছায়ার ভেতরে একটি অদ্ভুত নকশা— যা অনেকের মতে, বাংলাদেশের মানচিত্র নয় বরং এমনভাবে আঁকা হয়েছে যাতে ভারতের পূর্বাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বের অংশও এর আওতায় এসে যায়। ফলে প্রশ্ন উঠেছে— এটি কি শিল্পীর কল্পনা, নাকি কোনও রাজনৈতিক বার্তা?

বইটির ছবি সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শুরু হয় তীব্র বিতর্ক। একদল বাংলাদেশি এক্স (পূর্বতন টুইটার) ব্যবহারকারী দাবি করেন, “এটি মোটেই মানচিত্র নয়, বরং বাংলাদেশের পতাকার এক শিল্পিত রূপ। ভুল ব্যাখ্যা করা হচ্ছে।” কিন্তু অনেকেই সে যুক্তি মানতে রাজি নন। তাদের বক্তব্য, “যদি পতাকা-প্রেরিত নকশাই হয়, তবে সেটি এমনভাবে কেন আঁকা যাতে তা ভারতের ভূখণ্ডের সীমানা ঘেঁষে যায়?”

নীরব ঢাকা, সরব সামাজিক মাধ্যম Younus Pakistan Gift Row

এ পর্যন্ত এই বিতর্কে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার বা ইউনূসের কার্যালয় থেকে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে ইউনূসের দফতর থেকে প্রকাশিত এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “পাকিস্তানের জয়েন্ট চিফস অব স্টাফ কমিটির চেয়ারম্যান জেনারেল সাহির শামশাদ মিরজা শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথিশালা যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আলোচনায় বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার প্রসঙ্গ উঠে আসে।”

অর্থাৎ, সরকারি বিবৃতিতে বই-উপহারের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়া হলেও, সামাজিক মাধ্যমে সেই চিত্রই এখন কেন্দ্রবিন্দু।

Advertisements

প্রতীক না ইঙ্গিত?

কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, বিষয়টি নিছক শিল্প-নকশা হলেও এর প্রতীকী অর্থকে হালকাভাবে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ইসলামাবাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো এবং ভারতের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান দূরত্ব, এই প্রেক্ষাপটে এমন বিতর্কিত প্রচ্ছদ আরও তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ভারতের পক্ষ থেকেও অনানুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি নজরে রাখা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। দক্ষিণ এশীয় কূটনীতি বিশ্লেষকরা মনে করছেন, “বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী প্রশাসন যদি সত্যিই এই ইঙ্গিতপূর্ণ প্রতীক ব্যবহারে উদাসীন থাকে, তবে তা ভবিষ্যতে দিল্লি-ঢাকা সম্পর্কে অস্বস্তি আরও বাড়াতে পারে।”

কূটনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্ব

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাংলাদেশের নীতি-অক্ষেই দেখা দিয়েছে বড় রদবদল। অধ্যাপক ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী প্রশাসন এখন চিন ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করছে। কয়েক সপ্তাহ আগেই পাকিস্তান-বাংলাদেশ যৌথ অর্থনৈতিক কমিশনের বৈঠক হয় দুই দশক পর, যেখানে অর্থনৈতিক ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতার নতুন পথ খোঁজা হয়।

এই প্রেক্ষাপটে পাকিস্তানের শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাকে দেওয়া বইয়ের প্রচ্ছদ ঘিরে এই বিতর্ক কেবল নান্দনিক নয়, বরং রাজনৈতিকভাবে গভীর প্রতীকও বহন করছে, এমনই মত আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশেষজ্ঞদের একাংশের।