উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Government) গত মঙ্গলবার লখনউতে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী ‘রোজগার মহাকুম্ভ ২০২৫’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে একটি যুগান্তকারী ঘোষণা করেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে, উত্তরপ্রদেশে কর্মরত প্রতিটি যুবকের জন্য ন্যূনতম মজুরির গ্যারান্টি দেওয়া হবে।
এই উদ্যোগের মাধ্যমে উত্তরপ্রদেশ দেশের প্রথম রাজ্য হিসেবে এই ধরনের নীতি প্রয়োগ করছে। এই ঘোষণার মাধ্যমে রাজ্য সরকার শ্রমিকদের শোষণ রোধ করতে এবং তাদের ন্যায্য মজুরি নিশ্চিত করতে একটি নতুন কর্পোরেশন গঠনের পরিকল্পনা করছে। এই পদক্ষেপ রাজ্যের অর্থনৈতিক সংস্কার এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টির ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেন, “উত্তরপ্রদেশে প্রতিটি কর্মরত যুবক ন্যূনতম মজুরির গ্যারান্টি পাবেন। কোনও কোম্পানি বা নিয়োগকর্তা শ্রমিকদের শোষণ করতে পারবে না।” তিনি জানান যে, এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য রাজ্য সরকার কোম্পানিগুলির উপর অতিরিক্ত আর্থিক বোঝা চাপিয়ে দেবে না, বরং সরকার নিজেই এই অতিরিক্ত খরচ বহন করবে। এই ঘোষণা রাজ্যের শ্রমিকদের জন্য একটি বড় স্বস্তি নিয়ে এসেছে, যারা প্রায়ই ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হন।
যোগী আদিত্যনাথ আরও বলেন যে, উত্তরপ্রদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বড় যুব জনসংখ্যা রয়েছে, এবং এই যুবশক্তি রাজ্যের অগ্রগতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০১৭ সালের আগে রাজ্যের ঐতিহ্যবাহী শিল্পগুলি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পথে ছিল।
কিন্তু ‘এক জেলা, এক পণ্য’ (ওডিওপি) প্রকল্পের মাধ্যমে ৯০ লক্ষ এমএসএমই ইউনিট নতুন পরিচয় পেয়েছে, যা কোটি কোটি মানুষের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে। এছাড়াও, কোভিড-১৯ মহামারীর সময়ে রাজ্যে ফিরে আসা ৪০ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য তাদের নিজ নিজ জেলায় কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বর্তমানে, রাজ্যে ৯৬ লক্ষ এমএসএমই ইউনিট কার্যকর রয়েছে।
এই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী ‘যুব উদ্যমী যোজনা’-র কথাও উল্লেখ করেন, যার অধীনে ২১ থেকে ৪০ বছর বয়সী যুবকরা সুদমুক্ত ঋণ পাচ্ছেন। সরকার এই প্রকল্পে ১০ শতাংশ মার্জিন মানি প্রদান করছে। এখন পর্যন্ত ৭০,০০০-এরও বেশি যুবক এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন।
তিনি আরও জানান যে, গত আট বছরে ৮.৫ লক্ষ যুবককে স্বচ্ছ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সরকারি চাকরি দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ২ লক্ষ পুলিশ বাহিনীতে এবং ১.৫৬ লক্ষ শিক্ষক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন।
শ্রমিক কল্যাণের ক্ষেত্রেও যোগী সরকার উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে শ্রমিকদের শোষণ করা হবে না।” এছাড়াও, শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য ১৮টি অটল আবাসিক বিদ্যালয় চালু করা হয়েছে এবং ৫৭টি অভ্যুদয় বিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।
দক্ষতা উন্নয়নের জন্য উত্তরপ্রদেশ প্রথম রাজ্য হিসেবে স্কিল মিশন বাস্তবায়ন করেছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, রোবোটিক্স এবং ড্রোনের জন্য ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে, এবং যুবকদের বিদেশে কাজের জন্য ভাষা প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
শ্রম ও দক্ষতা উন্নয়ন মন্ত্রী অনিল রাজভর জানিয়েছেন যে, উত্তরপ্রদেশে বেকারত্বের হার এখন ৩ শতাংশের নিচে নেমে গেছে। মহিলা শ্রমশক্তির অংশগ্রহণের হার ২০১৭ সালে ১৪ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩৬ শতাংশ ছাড়িয়েছে। রোজগার মহাকুম্ভের তিন দিনে ১০,০০০ যুবককে চাকরি দেওয়া হবে, এবং পরবর্তী পর্যায়ে ৫০,০০০-এরও বেশি যুবকের জন্য কর্মসংস্থানের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
এই ঘোষণা রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সামাজিক মাধ্যমে, বিশেষ করে এক্স-এ, অনেকে এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন, তবে কেউ কেউ এটিকে নির্বাচনী কৌশল হিসেবে দেখছেন।
২৮ অগস্ট বাজারে আসছে টিভিএস-এর সস্তার ই-স্কুটার, ফিচার দেখুন
যোগী আদিত্যনাথের এই উদ্যোগ উত্তরপ্রদেশের শ্রমিক ও যুব সম্প্রদায়ের জন্য নতুন সম্ভাবনা সৃষ্টি করবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই নীতি বাস্তবায়নের মাধ্যমে রাজ্যের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং শ্রমিক কল্যাণে একটি নতুন অধ্যায় শুরু হতে পারে।