নয়াদিল্লি, ৮ অক্টোবর ২০২৫: উত্তরপ্রদেশ যেন ফের শিরোনামে। মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের শূন্য সহনশীলতা নীতি মেনে পুলিশ রাজ্যজুড়ে একের পর এক এনকাউন্টার চালাচ্ছে। মাত্র দু’দিনে ২০-র বেশি এনকাউন্টার হয়েছে, আহত বা গ্রেফতার হয়েছে ডজনখানেক অপরাধী। রাজ্য পুলিশ এই অভিযানকে নাম দিয়েছে “অপারেশন লাঙ্গড়া” ও “অপারেশন খাল্লাস”।
বরেলি থেকে শুরু, রাজ্যজুড়ে অভিযান
গত সেপ্টেম্বরে বরেলিতে একটি ধর্মীয় প্রকাশনা কেন্দ্র করে অশান্তি ছড়ায়। সেই ঘটনার পরই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আঁকড়ে ধরতে পুলিশ নতুন অভিযান শুরু করে। প্রথমে বরেলিতে, তারপর ধীরে ধীরে বুলন্দশহর, কানপুর, লখনউ, গোরখপুরের মতো জেলায়ও তল্লাশি ও এনকাউন্টার তীব্র হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, এই অভিযানে প্রধানত দুষ্কৃতী ও অপরাধচক্রের সদস্যদের নিশানা করা হচ্ছে। পুলিশের দাবি, তারা আগে থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছিল, তাই সমন্বিতভাবে একসঙ্গে একাধিক জেলায় অভিযান চালানো সম্ভব হয়েছে।
সংখ্যাই প্রমাণ
পুলিশ রেকর্ড বলছে, ২০১৭ সালে যোগী সরকার আসার পর থেকে এখন পর্যন্ত ২৫২ জন অপরাধী এনকাউন্টারে নিহত হয়েছে, আর আহত হয়েছে ১০,২৫৪ জন। অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে অপরাধচক্রের সঙ্গে যুক্ত ছিল। গত ৪৮ ঘণ্টায় শতাধিক সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে।
সরকারের অবস্থান
একজন সিনিয়র পুলিশ আধিকারিক সংবাদমাধ্যমকে বলেন,
“আমাদের লক্ষ্য একটাই—অপরাধীদের ভয় দেখিয়ে তোলা নয়, পুরোপুরি দমন করা। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা ও শান্তি ফিরিয়ে আনা।”
যোগী আদিত্যনাথ নিজেও বারবার বলেছেন, তাঁর সরকার অপরাধীদের প্রতি একটুও সহনশীল হবে না। “আইন হাতে নিলে এনকাউন্টার হবেই”—এই বার্তা কার্যত সবার কাছে পৌঁছে গিয়েছে।
সমর্থন ও সমালোচনা
তবে এই অভিযান ঘিরে সমালোচনাও চলছে। শাসকদল বিজেপির দাবি, অপরাধের হার অনেকটাই কমেছে। ২০২৩ সালের এনসিআরবি রিপোর্টে বলা হয়েছে, হত্যার হার ৪২ শতাংশ কমেছে।
কিন্তু বিরোধীরা বলছে, অনেক ক্ষেত্রেই নিরপরাধ মানুষ এই অভিযানের ফাঁদে পড়ছেন। তাঁদের অভিযোগ, রাজনৈতিক বা ধর্মীয় কারণে নির্দিষ্ট গোষ্ঠীকে নিশানা করা হচ্ছে।
মানুষের মনোভাব
সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রতিক্রিয়া মিশ্র। কেউ খুশি যে এলাকায় গুণ্ডাগিরি কমছে, আবার কেউ আতঙ্কে যে পুলিশের গুলিতে নিরীহ কেউ আহত হতে পারেন।
বরেলির এক ব্যবসায়ীর কথায়, “আমরা চাই শান্তি। কিন্তু প্রতিদিন এনকাউন্টারের খবরে ভয় লাগে। পুলিশ যদি অপরাধীদেরই টার্গেট করে, তবেই ভালো।”
অপারেশন লাঙ্গড়া ও খাল্লাস উত্তরপ্রদেশের অপরাধচক্র ভাঙতে কতটা সফল হবে, তা সময় বলবে। তবে এ নিয়ে আর কোনও সন্দেহ নেই—যোগী সরকারের কড়া বার্তা পৌঁছে গিয়েছে প্রত্যেক অপরাধীর কানে।