দেশে দ্বিতীয় জিন্নার জন্ম রুখতে কড়া হুঁশিয়ারি যোগীর

yogi-adityanath-ekta-yatra-jinnah-gorakhpur-speech

গোরখপুর: উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ (Yogi Adityanath) সোমবার গোরখপুরে আয়োজিত ‘একতা যাত্রা’ ও সমবেত ‘বন্দে মাতরম’ গানে অংশ নিয়ে দেশের ঐক্য, দেশভক্তি ও জাতীয় সংহতির বার্তা দিলেন। একই সঙ্গে তিনি কঠোর ভাষায় আক্রমণ করলেন সেই সব শক্তিকে, যারা আজও দেশের জাতীয় গান ‘বন্দে মাতরম’-এর বিরোধিতা করে। যোগীর মতে, এমন মানসিকতা ভারতের ঐক্য ও অখণ্ডতার প্রতি এক সরাসরি আঘাত।

Advertisements

যোগী আদিত্যনাথ বলেন, “যারা ‘বন্দে মাতরম’ গাইতে আপত্তি জানায়, তারা আসলে ভারতের ঐক্য ও সংহতিকে অপমান করছে। আজও আমরা আশা করব, যে ভারতবর্ষে বসবাস করে, সে যেন দেশপ্রেম ও জাতীয় সংহতির প্রতি নিজের অটল আনুগত্য প্রদর্শন করে।”

   

মদের বাজারে শীতের আগেই উত্তাপ, দাম বাড়াচ্ছে রাজ্য সরকার

এদিনের বক্তব্যে যোগী ইতিহাসের প্রসঙ্গও টানেন। তিনি স্মরণ করান অল ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের দুই নেতা মহম্মদ আলি জিন্নাহ ও মোহাম্মদ আলি জওহরের নাম, যারা ব্রিটিশ ভারতের বিভাজনের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিলেন। যোগীর কথায়, “আজ আমাদের দায়িত্ব হল সমাজে সেই সব বিভাজনকারী শক্তিকে চিহ্নিত করা ও তাদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে দাঁড়ানো তারা জাত, ধর্ম, ভাষা বা প্রদেশের নামে হোক না কেন। এই বিভাজনের রাজনীতি আসলে নতুন জিন্নাহ তৈরি করার ষড়যন্ত্র।”

মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, “আমাদের নিশ্চিত করতে হবে, ভারতের মাটিতে আর কোনও নতুন জিন্নাহর জন্ম না হয়। যদি কেউ জাতীয় ঐক্যের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করার সাহস দেখায়, তবে সেই বিভাজনমূলক চিন্তাকে শিকড় গাড়ার আগেই সমাধিস্থ করতে হবে।”

Advertisements

গোরখপুরের জনসভায় উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ তখন ‘বন্দে মাতরম’ ও ‘ভারত মাতা কি জয়’-এর স্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে। যোগীর কথায়, “প্রত্যেক ভারতবাসীর কর্তব্য দেশের ঐক্যের পাশে দাঁড়ানো। ধর্ম, ভাষা বা প্রদেশের ভিত্তিতে বিভাজন নয় আমাদের একটাই পরিচয়, আমরা ভারতবাসী।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে যোগীর এই বক্তব্যের রাজনৈতিক গুরুত্ব যথেষ্ট। একদিকে তিনি মুসলিম লিগের নেতাদের উদাহরণ টেনে ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধে বার্তা দিতে চাইছেন, অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী আবেগকে উস্কে দিচ্ছেন বিজেপির প্রথাগত ভোটব্যাঙ্কের মধ্যে।

ঐতিহাসিক তথ্য অনুযায়ী, মহম্মদ আলি জিন্নাহ ১৯১৩ সাল থেকে অল ইন্ডিয়া মুসলিম লিগের নেতা ছিলেন। ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর তিনি সেই দেশের প্রথম গভর্নর জেনারেল হন এবং ১৯৪৮ সালে মৃত্যুবরণ করেন। অন্যদিকে মহম্মদ আলি জওহর ছিলেন মুসলিম লিগের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং খিলাফত আন্দোলনের অন্যতম নেতা। যোগীর এই দুই নামের উল্লেখ অনেকের কাছে প্রতীকী— তিনি যেন ইঙ্গিত করছেন, ধর্মের নামে বিভাজনের রাজনীতি আবার মাথাচাড়া দিচ্ছে এবং তা রুখতে আজই ঐক্যের ডাক দিতে হবে।

বক্তব্যের শেষে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “বিভাজনের রাজনীতি আমাদের সমাজকে দুর্বল করে দেয়। যারা ভারতের সংহতিকে চ্যালেঞ্জ জানাবে, তারা কখনোই এই দেশের মাটিতে সফল হবে না। ‘বন্দে মাতরম’ আমাদের মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসার প্রতীক, সেটাই আমাদের চিরন্তন অঙ্গীকার।” গোরখপুরের এই ঐক্য যাত্রা তাই কেবল একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং জাতীয় ঐক্যের এক শক্তিশালী বার্তা হিসেবে উঠে এসেছে।