বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেও কাজ নেই জাস্টিস বর্মার

শনিবার, ৫ এপ্রিল, জাস্টিস যশবন্ত বর্মা (yashwant varma) এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। তবে, এই শপথ গ্রহণ একটি নিম্নপর্যায়ের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে সম্পন্ন হয়েছে।…

yashwant varma no work

শনিবার, ৫ এপ্রিল, জাস্টিস যশবন্ত বর্মা (yashwant varma) এলাহাবাদ হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন। তবে, এই শপথ গ্রহণ একটি নিম্নপর্যায়ের ব্যক্তিগত অনুষ্ঠানে সম্পন্ন হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের তত্ত্বাবধানে চলমান একটি তদন্তের মুখোমুখি হওয়া এই বিচারপতির বিরুদ্ধে তার বাসভবনে বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তদন্ত চলাকালীন তাকে কোনো বিচারকার্যে অংশ নিতে দেওয়া হবে না বলে সুপ্রিম কোর্ট নির্দেশ দিয়েছে। এলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পরে জাস্টিস বর্মা ষষ্ঠ স্থানে রয়েছেন।

   

গত ২৮ মার্চ কেন্দ্রীয় সরকার জাস্টিস বর্মার দিল্লি হাইকোর্ট থেকে এলাহাবাদ হাইকোর্টে প্রত্যাবর্তনের বিজ্ঞপ্তি জারি করে। এই বিজ্ঞপ্তি সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়ামের সুপারিশের ভিত্তিতে দেওয়া হয়। তবে, আলাহাবাদ বার অ্যাসোসিয়েশন এই স্থানান্তরের তীব্র বিরোধিতা করে। তারা দাবি করে, দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত বিচারপতিদের তারা সহ্য করবে না। এই প্রতিবাদে তারা অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট শুরু করেছিল। পরে ভারতের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বার অ্যাসোসিয়েশনকে আশ্বাস দেন যে, তাদের দাবি বিবেচনা করা হবে। এরপর তারা ধর্মঘট স্থগিত রাখে।

তদন্তের পটভূমি

জাস্টিস বর্মার (yashwant varma) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে যে, গত ১৪ মার্চ তার লুটিয়েন্স দিল্লির বাসভবনে আগুন লাগার পর সেখান থেকে আধা-পোড়া বস্তায় ভরা বিপুল পরিমাণ নগদ অর্থ উদ্ধার হয়। এই ঘটনার পর সুপ্রিম কোর্ট একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে তদন্ত শুরু করে। জাস্টিস বর্মা এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, তার বা তার পরিবারের কেউ এই অর্থের সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি দাবি করেছেন, এটি তার বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। তবে, তদন্তের ফলাফল এখনও প্রকাশিত হয়নি।

গত সপ্তাহে সুপ্রিম কোর্ট জাস্টিস বর্মার বিরুদ্ধে একটি এফআইআর দায়েরের জন্য দাখিল করা একটি আবেদন খারিজ করে দেয়। আদালত এই আবেদনকে “অকাল” বলে অভিহিত করে জানায়, তিন সদস্যের প্যানেল এই বিষয়টি তদন্ত করছে। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এফআইআর দায়েরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে না।

বার অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিক্রিয়া

এলাহাবাদ হাইকোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন জাস্টিস বর্মার (yashwant varma) স্থানান্তরকে তীব্রভাবে প্রতিবাদ করে। তারা বলে, “এলাহাবাদ হাইকোর্ট কোনো আবর্জনার ঝুড়ি নয়। আমরা দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের গ্রহণ করব না।” তারা জাস্টিস বর্মার বিরুদ্ধে অপসারণ প্রক্রিয়া শুরু করার দাবি জানায় এবং ইডি ও সিবিআই তদন্তের আহ্বান করে। ধর্মঘট শুরু হওয়ার পর দেশের বিভিন্ন বার অ্যাসোসিয়েশনও তাদের সমর্থন জানায়। তবে, প্রধান বিচারপতি খান্নার আশ্বাসের পর তারা অপেক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়।

Advertisements

ব্রিটেন ও ইতালির সঙ্গে ৬ষ্ঠ প্রজন্মের ফাইটার জেট বানাতে চায় ভারত

বিচারকার্য থেকে বিরত (yashwant varma)

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আলাহাবাদ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতিকে বলা হয়েছে, তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত জাস্টিস বর্মাকে কোনো বিচারকার্যে নিয়োগ না করতে। এর আগে দিল্লি হাইকোর্টেও তার বিচারকার্য প্রত্যাহার করা হয়েছিল। সুপ্রিম কোর্ট কলেজিয়াম ২০ ও ২৪ মার্চের বৈঠকে তার স্থানান্তরের সুপারিশ করে, যদিও এটি তদন্তের সঙ্গে সম্পর্কিত নয় বলে জানানো হয়।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিক্রিয়া

এই ঘটনা ভারতের বিচার ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার প্রশ্ন তুলেছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, “তদন্ত কমিটির সিদ্ধান্তের জন্য আমাদের অপেক্ষা করা উচিত।” তিনি জানান, বিচার ব্যবস্থায় এমন প্রশ্ন উঠলে বিচারপতিদের কমিটিই সিদ্ধান্ত নেবে। এদিকে, সুপ্রিম কোর্টের ৩০ জন বিচারপতি, প্রধান বিচারপতি খান্না সহ, তাদের সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এটি জাস্টিস বর্মার ঘটনার পর স্বচ্ছতা বাড়ানোর একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

জনগণের প্রত্যাশা

এই ঘটনা বিচার বিভাগের সততা নিয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। আলাহাবাদের একজন আইনজীবী বলেন, “আমরা চাই তদন্তে সত্য বেরিয়ে আসুক। বিচারপতিদের উপর জনগণের ভরসা থাকা জরুরি।” অনেকে মনে করেন, এই ঘটনা বিচার ব্যবস্থায় আরও কঠোর নজরদারির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছে। জাস্টিস বর্মার শপথ গ্রহণ হলেও, তদন্তের ফলাফল এখনও অনিশ্চিত। এই ঘটনা ভারতের বিচার ব্যবস্থার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা হয়ে দাঁড়িয়েছে। জনগণ এখন অপেক্ষায় আছে, সত্য প্রকাশের জন্য।