লখনউ: বৃহস্পতিবার লখনউ (Lucknow)-এর গোমতী নগর এলাকায় নির্মীয়মাণ ভাড়াবাড়ির সামনের রাস্তা পরিষ্কার করছিলেন রূপচান আলী (৩৩) ও তার স্ত্রী বিমলা খাতুন। সঙ্গে তাঁদের কিছু প্রতিবেশীও ছিল। এমন সময় বিজেপির (BJP) রাজ্যসভার সাংসদ ব্রিজ লাল অসম থেকে আসা ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের (Migrant workers) দেখে গাড়ি থেকে নেমে তাঁদের “বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী” (Bangladeshi) বলে উল্লেখ করে ভিডিও রেকর্ড করে তা সমাজমাধ্যমে ছেড়ে দেন।
সমাজমাধ্যমে ভিডিও দেখে চিন্তিত হয়ে পড়ে রুপচানের অসমের মালেসমোতে থাকা পরিবার। রুপচানরা জানান, তাঁরা একদম ঠিক আছেন। সাংসদের তকমার পরেও ভয় পাচ্ছেন না? জিজ্ঞেস করায় রুপচান বলেন, “আমরা কোনও অন্যায় করিনি এবং আমাদের কাছে সব কাগজপত্র আছে। এমনকি আমাদের কাছে NRC-র কাগজ আছে বলেও আমরা সাহেবকে জানাই। কিন্তু উনি কোনও কথা শুনতে চাননি।”
বৃহস্পতিবার ফেসবুকে আপলোড করা ভিডিওয় বিজেপি সাংসদকে বেশ কয়েকটি পরিযায়ী (Migrant) পরিবারকে জরিপ করতে দেখা যায়। তিনি বলেন, “এই শ্রমিকরা অসম থেকে এসেছেন বলে জানাচ্ছেন, কিন্তু আদপে এরা সব বাংলাদেশী (Bangladeshi)। সেই বাংলাদেশ যারা আজ পাকিস্তানের বুলি আওড়ায়!”
এদিকে ভিনরাজ্যে ভাড়া বাড়ির দুয়োরে দাঁড়িয়ে রুপচান আলি জানান, দের বছর আগে অন্যান্য গ্রামবাসীর সঙ্গে কাজের আসায় তিনি অসম থেকে লখনউতে এসেছিলেন। তাঁর মাথায় আড়াই লক্ষ টাকার দেনা। চাষবাস করে এই বিপুল পরিমাণ ধার শোধ করা তাঁদের পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই নিজের বৃদ্ধ মা এবং বড় ছেলেকে গ্রামের বাড়িতে রেখে হাজার কিলোমিটার দূরে কাজের আশায় এসেছেন অসমের ওই দম্পতি। লখনউ-তে নিজেদের ৮ বছরের মেয়ে এবং ৬ বছরের ছেলেকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থেকে শ্রমিকের কাজ করেন রুপচান এবং তাঁর স্ত্রী বিমলা পরিচারিকার কাজ করে মাসে সাড়ে ৮ হাজার টাকা রোজগার করেন।
রুপচানের বাড়ি থেকে ৫০০ মিটার দুরত্বেই থাকেন মহম্মদ আফজল হোসেন ও তাঁর স্ত্রী সানওয়ারা বেগম। অসমের বারপেতা জেলা থেকে কাজের আশায় প্রায় দুই দশক আগে লখনউতে এসেছেন বলে জানান সানওয়ারা বেগম। এলাকায় সাফাইকর্মীর কাজ করেন তিনি। শুধু NRC-র কাগজ নয়, প্যান কার্ড, শ্রমিক কার্ড এমনকি আয়ুষ্মান ভারিতের কার্ডও তাঁর কাছে আছে বলে দাবী করেন সানওয়ারা বেগম।
তিনি বলেন, “আমরা এত বছর ধরে এখানে আছি। কিন্তু এই প্রথমবার আমাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হল।” সানওয়ারার স্বামী হোসেন জানান, প্রায় একমাস আগে পুলিশ তাদের পরিচয় যাচাই করতে এসেছিল এবং তারা স্থানীয় থানায় নথি জমা দিয়েছিল। তাঁদেরও ভিডিও করে নিয়ে যান বিজেপি সাংসদ ব্রিজ লাল।


