দুই দশকেরও বেশি সময় আগে নারী ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করার পরও বিহারের (Bihar polls) মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার আজও সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক সমর্থন পান নারী ভোটারদের কাছ থেকে। বিহার বিধানসভা নির্বাচনের আগে, তার নির্বাচনী জনসভায় নারী ভোটারদের উপস্থিতি ফের বড় মাত্রায় লক্ষ্য করা গিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার বেগুসরাই জেলার মতিহানি আসনের রচিয়াহি গ্রামে একটি নির্বাচনী জনসভায় হাজার হাজার নারী গ্রাম থেকে হেঁটে এসে উপস্থিত হন। জনসভায় নারী ভোটারদের সংখ্যা পুরুষদের চেয়ে বেশি ছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান। অনেকে এই উপস্থিতিকে “স্বতঃস্ফূর্ত” আখ্যা দেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, নীতীশ কুমারের প্রতি নারী ভোটারদের জনপ্রিয়তা দীর্ঘদিন ধরে অবিচল রয়েছে, যদিও তার বয়স ও স্বাস্থ্য নিয়ে সমালোচনা হয়েছে।
অনেক নারী জানিয়েছেন, তারা মূলত দেখতে এসেছিলেন যে নীতীশ কুমার কতটা সুস্থ এবং সক্ষম। অন্যদিকে, কিছু নারী ভোটার বলেন যে, যদিও তাদের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি ও বেকারত্ব নিয়ে অভিযোগ রয়েছে, তবুও নীতীশ কুমারই তাদের প্রিয় মুখ্যমন্ত্রী। এই ব্যাপারটি প্রমাণ করে যে, সামাজিক প্রকল্প ও দীর্ঘমেয়াদী নারী কল্যাণমূলক কর্মসূচি একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক ভিত্তি গড়তে পারে।
নীতীশ কুমার তার ভাষণে বিশেষভাবে তুলে ধরেছেন তার সরকারের আওতায় দীর্ঘ বছরের মধ্যে নারীকল্যাণে চালু করা প্রকল্পগুলি। এর মধ্যে অন্যতম হলো মুখ্যমন্ত্রী বালিকা সাইকেল যোজনা, যা স্কুলগার্লদের জন্য বিনামূল্যে সাইকেল প্রদান করে। এছাড়াও, পঞ্চায়েত ও নগর স্থানীয় সংস্থায় নারীদের জন্য ৫০ শতাংশ সংরক্ষিত আসন, এবং পুলিশ নিয়োগে ৩৫ শতাংশ সংরক্ষিত আসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
নারী ক্ষমতায়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো জীবিকা স্ব-সহায়ক গোষ্ঠী কর্মসূচ*, যা লক্ষ লক্ষ নারীদের মাইক্রোফাইন্যান্স নেটওয়ার্কে যুক্ত করেছে। এ ধরনের উদ্যোগ নারী ভোটারদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষমতায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও, সরকারের **ডাইরেক্ট বেনিফিট ট্রান্সফার (ডিবিটি) কর্মসূচির মাধ্যমে নারীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ প্রেরণ করা হচ্ছে, যা তাদের আর্থিক নিরাপত্তা ও স্বনির্ভরতার প্রতি আরও আস্থা বাড়িয়েছে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, নীতিশ কুমারের জন্য নারী ভোটারদের সমর্থন শুধু ভোটে সংখ্যা বাড়ানোই নয়, বরং তার রাজনৈতিক ইমেজকে স্থিতিশীল এবং প্রমাণিত করেছে। এই সমর্থন তাকে প্রতিদ্বন্দ্বী দলের থেকে আলাদা অবস্থানে রাখে। বিহারের রাজনৈতিক পরিমণ্ডলে দীর্ঘমেয়াদে নারী ভোটাররা প্রায়শই চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলে।
নির্বাচনী জনসভায় উপস্থিত নারীদের মধ্যে অনেকেই বলেছিলেন যে, তাদের জীবনে যে প্রকল্পগুলি প্রভাব ফেলেছে, তা শুধুমাত্র আর্থিক সুবিধা নয়, বরং তাদের সামাজিক মর্যাদা ও আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়েছে।



