Women Police Ensure Security at PM: ইতিহাস গড়ে ‘লখপতি দিদি’তে প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তার দায়িত্বে মহিলা পুলিশ দল

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে গুজরাটের নবসারী জেলার বানসি বোর্সি গ্রামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘লখপতি দিদি’ অনুষ্ঠানে একটি অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা গেল। এই মেগা ইভেন্টে দেড় লক্ষেরও…

Women Police Ensure Security at PM Modi’s ‘Lakhpati Didi’ Event in Gujarat

short-samachar

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে গুজরাটের নবসারী জেলার বানসি বোর্সি গ্রামে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ‘লখপতি দিদি’ অনুষ্ঠানে একটি অভূতপূর্ব দৃশ্য দেখা গেল। এই মেগা ইভেন্টে দেড় লক্ষেরও বেশি মহিলা উপস্থিত ছিলেন, আর তাঁদের নিরাপত্তার সম্পূর্ণ দায়িত্ব পালন করলেন প্রায় ২,৫০০ মহিলা পুলিশ কর্মী (Women Police)। ভারতে এই প্রথমবার কোনো উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার পুরো দায়িত্ব মহিলা পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এই ঐতিহাসিক উদ্যোগকে পুলিশি ব্যবস্থা ও আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

   

এই বিশেষ দিনে প্রধানমন্ত্রী মোদী নবসারীতে এসে ‘লখপতি দিদি’ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের সঙ্গে কথা বলেন, তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন এবং ‘লখপতি দিদি’ শংসাপত্র দিয়ে সম্মানিত করেন। এই অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার প্রতিটি স্তরে মহিলা পুলিশ কর্মীরা দায়িত্ব পালন করেছেন—হেলিপ্যাডে প্রধানমন্ত্রীর আগমন থেকে শুরু করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি পর্যন্ত। পুরুষ পুলিশ সদস্যদের দায়িত্বে রাখা হয়েছিল শুধুমাত্র পার্কিং ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনার জন্য। এই উদ্যোগের তত্ত্বাবধানে ছিলেন অতিরিক্ত ডিজিপি নিপুনা তোরওয়ানে, যিনি এই সম্পূর্ণ মহিলা দলের কাজের নেতৃত্ব দিয়েছেন।

নিপুনা তোরওয়ানে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, “এটি একটি অত্যন্ত উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠান। তাই নিরাপত্তার জন্য সমস্ত সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। গত তিন দিন ধরে কনস্টেবল থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন, রিহার্সাল করেছেন এবং পয়েন্ট-টু-পয়েন্ট ব্রিফিং দিয়েছেন।” তিনি আরও জানান যে এই অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার জন্য ২,১৪৫ জন মহিলা কনস্টেবল, ৬১ জন মহিলা ইন্সপেক্টর, ১৮৭ জন মহিলা সাব-ইন্সপেক্টর, ১৯ জন মহিলা ডেপুটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ, ৫ জন মহিলা সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ এবং একজন ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল পদমর্যাদার মহিলা কর্মকর্তা মোতায়েন ছিলেন।

গুজরাটের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী হর্ষ সঙ্ঘভি একটি সরকারি বিবৃতিতে বলেছেন, “এই ধরনের একটি উচ্চ পর্যায়ের অনুষ্ঠানে নিরাপত্তার দায়িত্ব মহিলাদের হাতে দেওয়ার সিদ্ধান্ত শুধু গুজরাটে নয়, সমগ্র ভারতের পুলিশি ব্যবস্থা ও আইন-শৃঙ্খলার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। এই উদ্যোগ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে বিশ্বের কাছে একটি শক্তিশালী বার্তা দেবে। এটি আরও প্রমাণ করবে যে গুজরাটকে নিরাপদ ও সুরক্ষিত রাখতে মহিলারা কী গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন।” তিনি এটিকে ভারতের আইন-শৃঙ্খলার ইতিহাসে একটি ঐতিহাসিক পদক্ষেপ বলে উল্লেখ করেন।

‘লখপতি দিদি’ প্রকল্পটি ২০২৩ সালের ১৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী মোদী দ্বারা চালু করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের লক্ষ্য হল স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করা। যে মহিলারা প্রতি মাসে ১০,০০০ টাকা বা তার বেশি আয় করেন এবং বার্ষিক অন্তত ১ লক্ষ টাকা আয় করেন—কৃষি, পশুপালন বা ছোট শিল্পের মাধ্যমে—তাঁদের ‘লখপতি দিদি’ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়। এই অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ২৫,০০০-এরও বেশি স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ২.৫ লক্ষের বেশি মহিলার জন্য ৪৫০ কোটি টাকার আর্থিক সহায়তা বিতরণ করেছেন। নবসারী, বালসাদ এবং দাং জেলা থেকে প্রায় ১ লক্ষ মহিলা এই ‘লখপতি দিদি সম্মেলনে’ অংশ নিয়েছেন, যাঁদের বেশিরভাগই স্বনির্ভর গোষ্ঠীর সদস্য এবং হয় ‘লখপতি দিদি’ হয়েছেন বা এই লক্ষ্যে এগিয়ে চলেছেন।

এই অনুষ্ঠানে মোদী গুজরাট সরকারের দুটি নতুন প্রকল্প—জি-সাফল (G-SAFAL) এবং জি-মৈত্রী (G-MAITRI)—উদ্বোধন করেছেন। জি-সাফল প্রকল্পটি গুজরাটের দুটি উচ্চাকাঙ্ক্ষী জেলা এবং ১৩টি উচ্চাকাঙ্ক্ষী ব্লকে অন্ত্যোদয় পরিবারের স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের আর্থিক সহায়তা এবং উদ্যোক্তা প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। অন্যদিকে, জি-মৈত্রী প্রকল্প গ্রামীণ জীবিকার জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে কাজ করা স্টার্টআপগুলিকে আর্থিক সহায়তা ও পরামর্শ দেবে।

এই ইভেন্টে মহিলা পুলিশের ভূমিকা শুধু নিরাপত্তা প্রদানের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি নারী শক্তির প্রতীক হয়ে উঠেছে। হেলিপ্যাড থেকে অনুষ্ঠানস্থল পর্যন্ত প্রতিটি পথে, প্রতিটি প্রবেশদ্বারে এবং ভিড় নিয়ন্ত্রণে মহিলা পুলিশ সদস্যরা তাঁদের দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। এই দৃশ্য গুজরাটের পুলিশ বাহিনীতে নারীদের ক্রমবর্ধমান অংশগ্রহণ এবং তাঁদের সক্ষমতার একটি জ্বলন্ত উদাহরণ।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই উদ্যোগ কেবল একটি প্রতীকী পদক্ষেপ নয়, বরং ভারতের পুলিশি ব্যবস্থায় নারীদের ভূমিকাকে আরও গভীর করার একটি পথপ্রদর্শক হবে। এটি অন্যান্য রাজ্যের জন্যও একটি অনুপ্রেরণা হয়ে উঠতে পারে। সঙ্ঘভি বলেন, “এই ধরনের পদক্ষেপ বিশ্বকে দেখিয়ে দেবে যে ভারত নারী-নেতৃত্বাধীন উন্নয়নের পথে এগিয়ে চলেছে।”

এই ঐতিহাসিক দিনে নবসারী শুধু একটি গ্রাম হিসেবে নয়, নারী শক্তির একটি উজ্জ্বল প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী তাঁর বক্তৃতায় বলেন, “গত দশকে আমরা নারীদের নিরাপত্তা ও ক্ষমতায়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছি। আজ এই দৃশ্য দেখে আমি গর্বিত।” এই অনুষ্ঠান এবং মহিলা পুলিশের অংশগ্রহণ ভারতের নারী ক্ষমতায়নের যাত্রায় একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।