“লুটেরি দুলহান” বা লুট করা বউ হিসেবে পরিচিত এক মহিলা প্রায় এক দশক পর গ্রেফতার হয়েছেন। উত্তরপ্রদেশের (Uttar pradesh) এই মহিলা, সীমা (যাকে নিকি নামেও পরিচিত), একাধিক পুরুষের সঙ্গে বিবাহিত হয়ে তাদের কাছ থেকে মোট ₹১.২৫ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। তিনি এই টাকা নেয়ার জন্য প্রতিবারই বিবাহিত পুরুষের পরিবারগুলির সঙ্গে আপসের নামে একটি বড় অঙ্কের অর্থ দাবি করতেন।
সীমার কাহিনী শুরু ২০১৩ সালে, যখন তিনি আগ্রার (Agra) একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে প্রথম বিয়ে করেন। কিছু সময় পর, সীমা ওই ব্যবসায়ীর পরিবারের বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করেন এবং সেসময় তারা একত্রিত হয়ে ₹৭৫ লাখ টাকার একটি আপসে সমঝোতা করেন। কিন্তু, সীমার জন্য এর পরের ঘটনা ছিল অনেক বেশি নাটকীয়।
২০১৭ সালে, সীমা একটি সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে বিয়ে করেন, যিনি গুরগাঁওয়ে বসবাস করতেন। তবে কিছুদিন পর, এই সম্পর্কও ভেঙে যায়। এর পর, তিনি ওই পুরুষের কাছ থেকে ₹১০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ হিসেবে দাবি করেন। এই টাকা নিয়ে তিনি তার স্বামী থেকে আলাদা হয়ে যান।
তারপর ২০২৩ সালে, সীমা একটি নতুন ব্যবসায়ীকে বিয়ে করেন, যিনি জয়পুরে থাকতেন। কিন্তু এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটল—বিয়ের পর কিছু সময়ের মধ্যে সীমা ওই ব্যবসায়ীর বাড়ি থেকে ₹৩৬ লাখ মূল্যের গয়নাসহ নগদ অর্থ নিয়ে পালিয়ে যান। তার পর ওই ব্যবসায়ীর পরিবার জয়পুর পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে সীমাকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়।
সীমা, যাকে “লুটেরি দুলহান” বা “লুটপাট করা বউ” হিসেবে ডাকানো হচ্ছে, তার গ্রেফতারি সমাজে এক অদ্ভুত আলোচনার সৃষ্টি করেছে। তার কর্মকাণ্ড একদিকে যেমন নারীর প্রতি অবিচারের চিত্র ফুটে উঠছে, অন্যদিকে এটি একটি গভীর প্রতারণার নজিরও তৈরি করেছে। সীমার মত মহিলার এমন কর্মকাণ্ড সামাজিক নীতির ক্ষেত্রে বড় ধরনের প্রশ্ন তুলছে, বিশেষত মানুষের বিশ্বাস এবং সম্পর্কের প্রতি তার আঘাত যে কতটা গভীর হতে পারে তা প্রমাণিত হচ্ছে।
এই ঘটনায়, সীমার অপরাধের পরিসর নিয়ে নানা মতামত উঠে এসেছে। একদিকে তার প্রতারণা সমাজের জন্য চরম ক্ষতির কারণ, অন্যদিকে তার দীর্ঘকাল ধরে এই ধরনের প্রতারণা চালানোর ক্ষমতা এবং তার হুমকি উপস্থাপন করেছে যে, মানুষ তাদের বিশ্বাসের ভিত্তিতে আর কারও সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করতে ভয় পাবে। তার অপরাধের শিকার পুরুষদের মধ্যে হতাশা, কষ্ট, এবং বিশ্বাসের অভাব তৈরি হয়েছে, যেটি সমাজের জন্য একটি বড় সংকেত।
তবে, সীমার গ্রেফতারি এবং তার অপরাধের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ এবং আদালতের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পুলিশ যে দক্ষতার সঙ্গে তার পিছনে ছুটে গিয়ে তাকে ধরতে সক্ষম হয়েছে, তা প্রশংসনীয়। এখন, সীমার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের পরিপ্রেক্ষিতে তার অপরাধের শাস্তি নির্ধারণ করা হবে এবং সমাজের অন্য সদস্যদের জন্য এটি একটি শিক্ষা হয়ে দাঁড়াবে।
এটা স্পষ্ট যে, সীমার মতো প্রতারকরা সমাজে অনেক ক্ষতি করতে পারে, এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এই ঘটনা প্রমাণ করে যে, প্রতারণার মাধ্যমে মানুষের বিশ্বাস এবং সম্পর্কের মূল্য কমানো এক ধরনের বড় অপরাধ।