গুজরাটের বিসাবদর বিধানসভা উপনির্বাচনে আম আদমি পার্টি (আপ)-র ঐতিহাসিক জয়ের পর দলের জাতীয় সমন্বয়ক অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Kejriwal) ঘোষণা করেছেন, এই ফলাফল গুজরাটের রাজনীতিতে একটি বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়। তিনি বলেন, “সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে আপ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে, যা প্রমাণ করে যে গুজরাটের জনগণ বিজেপির ৩০ বছরের শাসন থেকে ক্লান্ত এবং পরিবর্তন চায়।
গত তিন দশকে কংগ্রেস কোনও প্রকৃত বিরোধী ভূমিকা পালন করেনি, বরং বিজেপির (Kejriwal) সঙ্গে মিলে খেলেছে। কিন্তু এখন জনগণ আপ কে ক্ষমতায় আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।” এই জয়ের মধ্য দিয়ে কেজরিওয়াল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গড়ে বিজেপির বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে এএপি-র উত্থানের দাবি করেছেন।
২৩ জুন ২০২৫-এ ঘোষিত উপনির্বাচনের ফলাফলে আপ প্রার্থী গোপাল ইতালিয়া বিসাবদর আসনে ৭৫,৯৪২ ভোট পেয়ে বিজেপির (Kejriwal) কিরিত প্যাটেলকে (৫৮,৩৮৮ ভোট) ১৭,৫৫৪ ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। কংগ্রেস প্রার্থী নিতিন রানপরিয়া মাত্র ৫,৫০১ ভোট পেয়ে তৃতীয় স্থানে রয়েছেন, যা গুজরাটে কংগ্রেসের ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ার ইঙ্গিত দেয়। এই জয় আপ এর জন্য একটি বড় সাফল্য, বিশেষ করে ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর।
বিসাবদর আসনটি ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে শূন্য হয়, যখন আপের তৎকালীন বিধায়ক ভূপেন্দ্র ভায়ানি পদত্যাগ করে বিজেপিতে (Kejriwal) যোগ দেন। এই দলবদলকে কেজরিওয়াল “জনগণের ম্যান্ডেটের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা” বলে সমালোচনা করেন এবং ভোটারদের কাছে গোপাল ইতালিয়ার পক্ষে সমর্থনের আবেদন জানান। তাঁর এই কৌশল কাজে লেগেছে, কারণ গুজরাটের সৌরাষ্ট্র অঞ্চলের এই পাটিদার সম্প্রদায় প্রধান আসনে এএপি ২০২২ সালের তুলনায় প্রায় দ্বিগুণ ব্যবধানে জয়ী হয়েছে।
কেজরিওয়াল (Kejriwal) দাবি করেছেন, “গুজরাটে বিজেপি ক্ষমতা, অর্থ, প্রশাসন এবং বিভিন্ন কৌশল ব্যবহার করে নির্বাচনে লড়ে, কিন্তু তা সত্ত্বেও আপের এই জয় প্রমাণ করে যে জনগণ এখন পরিবর্তনের পক্ষে।” তিনি আরও বলেন, “বিসাবদর এবং পাঞ্জাবের লুধিয়ানা পশ্চিমে এএপি-র জয় ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সেমিফাইনাল। গুজরাটে এখন লড়াই আপের এবং বিজেপির মধ্যে, কারণ কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে সখ্যতা বজায় রেখে চলেছে।”
গোপাল ইতালিয়া, আপের প্রাক্তন গুজরাট সভাপতি এবং পাটিদার আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট নেতা, এই জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ২০১৫ সালের পাটিদার আন্দোলনের সময় তিনি জনপ্রিয়তা অর্জন করেন এবং ২০২০ সালে আপে যোগ দেন।
তাঁর (Kejriwal) নেতৃত্বে আপ বিসাবদরে একটি স্থানীয় ইস্যুকেন্দ্রিক প্রচার চালায়, যেখানে জলসঙ্কট, স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাব এবং কৃষি সমস্যার উপর জোর দেওয়া হয়। এই কৌশল কৃষক এবং শ্রমিকদের মধ্যে ব্যাপক সমর্থন পেয়েছে, যার ফলে এএপি-র ভোট শতাংশ উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গুজরাটের আরেকটি আসন কড়িতে বিজেপি প্রার্থী রাজেন্দ্র চাবড়া ৩৯,৪৫২ ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেসের রমেশ চাবড়াকে পরাজিত করে আসনটি ধরে রাখে। এই ফলাফলের পর গুজরাট কংগ্রেস সভাপতি শক্তিসিংহ গোহিল দায়িত্ব নিয়ে পদত্যাগ করেন। তিনি বলেন, “আমি পরাজয়ের নৈতিক দায়িত্ব নিচ্ছি এবং ইতিমধ্যে আমার পদত্যাগপত্র দলের জাতীয় সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গের কাছে পাঠিয়েছি।”
কেজরিওয়ালের (Kejriwal) দাবি, এই জয় গুজরাটে আপ কে বিজেপির প্রধান বিরোধী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। তিনি কংগ্রেস কর্মীদের আপে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, “কংগ্রেস বিজেপির সঙ্গে মিলে কাজ করে, কিন্তু আপ ই একমাত্র দল যারা বিজেপির বিরুদ্ধে সত্যিকারের লড়াই চালাচ্ছে।” এই বক্তব্য ইন্ডিয়া জোটের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে, কারণ এএপি এবং কংগ্রেস ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে জোটবদ্ধভাবে লড়লেও এখন পরস্পরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে।
গুজরাট আপ সভাপতি ইসুদান গাধভি বলেন, “এই জয় কৃষক, শ্রমিক এবং বেকার যুবকদের জয়। ২০২৭ সালে আপ গুজরাটে সরকার গঠন করবে।” তিনি বিসাবদরের ফলাফলকে জনগণের ম্যান্ডেট হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, বিজেপির মিথ্যা প্রতিশ্রুতি এখন প্রকাশ্যে এসেছে।
বিসাবদরের ফলাফল গুজরাটের রাজনীতিতে একটি নতুন গতিপথের ইঙ্গিত দেয়। ঐতিহাসিকভাবে কংগ্রেসের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত এই আসনটি ২০১৭ সালে কংগ্রেস এবং ২০২২ সালে আপ জিতেছিল। এবারের জয়ের মাধ্যমে আপ সৌরাষ্ট্র এবং কচ্ছ অঞ্চলে তাদের ভিত্তি মজবুত করেছে। বিজেপি, যারা ২০০৭ সাল থেকে এই আসনে জয়ী হয়নি, এবারও তাদের হারের ধারা ভাঙতে পারেনি।
চাকরি শুরু করলেই ১৫,০০০ টাকা! কেন্দ্রের চমকপ্রদ পদক্ষেপ
আপের (Kejriwal) এই জয় দিল্লির পরাজয়ের পর দলের জন্য একটি নতুন প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে। কেজরিওয়ালের নেতৃত্বে দলটি এখন ২০২৭ সালের গুজরাট বিধানসভা নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে তারা বিজেপির বিরুদ্ধে প্রধান বিরোধী হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। এই ফলাফল কংগ্রেসের জন্য একটি সতর্কবার্তা, কারণ তাদের ভোট শতাংশ ২০১৭ সালের ৫৪.৬৯% থেকে ২০২৫ সালে ৩.৭%-এ নেমে এসেছে।