সম্প্রতি, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গুগল (Google), অ্যাপলের মতো বড় আমেরিকান কোম্পানিগুলিকে ভারতে নিয়োগ বন্ধ করে আমেরিকান তরুণদের অগ্রাধিকার দিতে বলেছেন। যদিও এটি কেবল একটি বিবৃতি এবং কোনও সরকারী নীতি নয়, এটি ভারতের আইটি সেক্টরে উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে, বিশেষ করে ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ম্যানেজমেন্টের শিক্ষার্থীদের জন্য যারা এই কোম্পানিগুলিতে কাজ করার স্বপ্ন দেখেন।
ট্রাম্প ইতিমধ্যেই ভারতের সাথে চাকরি এবং ব্যবসা সম্পর্কে বেশ কয়েকটি বক্তব্য দিয়েছেন। তিনি অক্সফোর্ড সহ আমেরিকার আরও অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে তার মতামত চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। এখন যদি ট্রাম্পের এই বক্তব্য বাস্তবে পরিণত হয়, তাহলে এর প্রভাব বিভিন্ন স্তরে দেখা যাবে।
আমেরিকান কোম্পানিগুলো যদি ট্রাম্পের কথা শোনে তাহলে কী হবে?
প্রতি বছর হাজার হাজার শিক্ষার্থী আইআইটি এবং আইআইএমের মতো বড় প্রতিষ্ঠান থেকে স্নাতক হয়। তাদের অনেকেই গুগল, মাইক্রোসফ্ট বা অ্যাপলের মতো কোম্পানিতে কাজ করার স্বপ্ন দেখে। যদি এই কোম্পানিগুলি ভারত থেকে সরাসরি নিয়োগ বন্ধ করে দেয়, তাহলে এই প্রতিষ্ঠানগুলির শিক্ষার্থীদের জন্য ভালো চাকরির সুযোগ কমে যাবে। তথ্য অনুসারে, ২০২৩-২৪ সালেও, প্রায় ২০-২৫% আইআইটি শিক্ষার্থী প্লেসমেন্ট মরসুমের শেষ নাগাদ চাকরি পেতে পারেনি। ২০২৪ সালে ২৩টি আইআইটির প্রায় ৩৮% অর্থাৎ প্রায় ৮,০০০ শিক্ষার্থী বেকার রয়ে গেছে।
এর প্রভাব গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টারের উপরও দৃশ্যমান হবে। গুগল, মাইক্রোসফট এবং অ্যাপলের মতো কোম্পানিগুলির ভারতে বড় অফিস রয়েছে, যেগুলিকে গ্লোবাল ক্যাপাবিলিটি সেন্টার (GCC) বলা হয়। এই কেন্দ্রগুলিতে হাজার হাজার ভারতীয় কাজ করেন, সমগ্র বিশ্বের জন্য পণ্য তৈরি করেন, সফ্টওয়্যার লেখেন এবং বিশ্বব্যাপী সিস্টেম পরিচালনা করেন। ভারতে গুগলের প্রায় ১০,০০০, মাইক্রোসফটের ১৮,০০০ এরও বেশি এবং অ্যাপলের প্রায় ৫,০০০ কর্মী রয়েছে। নতুন নিয়োগ বন্ধ করা হলে, এই কেন্দ্রগুলির সম্প্রসারণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে এবং এখানে কর্মরত ব্যক্তিরাও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন।
প্রতি বছর ১৫ লক্ষেরও বেশি ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক তৈরি হয়
গত কয়েক বছরে ভারতে ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর প্রায় ১৫ লক্ষ ইঞ্জিনিয়ারিং স্নাতক তৈরি হয়, কিন্তু তাদের মধ্যে মাত্র ১০-১৫% চাকরি পেতে সক্ষম হয়। এখন পর্যন্ত আমেরিকান কোম্পানি এবং বৈশ্বিক প্রকল্পগুলিতে চাকরির কারণে পরিস্থিতি স্থিতিশীল ছিল। যদি এই পথটি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে দেশের অভ্যন্তরে ভালো চাকরির প্রতিযোগিতা আরও বাড়বে।
এই সিদ্ধান্ত আমেরিকার উপরও প্রভাব ফেলবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে আজ ভারত কেবল প্রতিভার উৎসই নয়, বরং বিশ্বের জন্য পণ্যও তৈরি করছে। যদি আমেরিকান কোম্পানিগুলি ভারত থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়, তাহলে তাদের বিরাট ক্ষতি হবে কারণ ভারত তাদের জন্য সবচেয়ে শক্তিশালী প্রতিভাধর পুল। এখন আইআইটি শিক্ষার্থীর মাত্র ২% এরও কম বিদেশে যায়। বেশিরভাগই এখানে থাকতে এবং কাজ করতে পছন্দ করে।