ভারতে কেন থিতু হল না শীত?

India winter 2024: এই বছরের শীতকাল যেন এসে কিছুদিনের মধ্যেই বিদায় নিলো। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা ভারতে শীতের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব নিয়ে অনেকেই অবাক হয়েছেন।…

Why Winter Didn't Settle in India: La-Nina and Global Warming Impact Explained

India winter 2024: এই বছরের শীতকাল যেন এসে কিছুদিনের মধ্যেই বিদায় নিলো। বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ সহ সারা ভারতে শীতের তীব্রতা ও স্থায়িত্ব নিয়ে অনেকেই অবাক হয়েছেন। শীত যে এবার দীর্ঘস্থায়ী হয়নি, তার কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞরা কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় তুলে ধরছেন। এতে অন্যতম কারণ হলো লা-নিনা (La-Nina) প্রভাব, যা গত কয়েক মাস ধরে বৈশ্বিক আবহাওয়া পরিস্থিতি পরিবর্তন করেছে।

লা-নিনার প্রভাব ও তার ফলস্বরূপ পরিবর্তন
লা-নিনা একটি আবহাওয়া পরিস্থিতি, যেখানে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম অংশে সমুদ্রের তাপমাত্রা সাধারণের তুলনায় বেশি থাকে, আর প্রশান্ত মহাসাগরের পূর্ব অংশে তাপমাত্রা কম থাকে। এই পরিস্থিতি বৈশ্বিক আবহাওয়ার ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। লা-নিনার প্রভাবের কারণে এ বছরের শীতকাল খুব একটা জমেনি।

   

আবহাওয়াবিদরা বলছেন যে, লা-নিনা ফেজের ফলে মূলত গরম বাতাস বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে আসে, যা শীতকালকে প্রতিরোধ করে এবং তীব্র শীতের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারে না। এতে করে পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্যগুলিতে শীত আসতে বাধা পেয়েছে এবং বছরের শুরুতেই অনেকাংশে উষ্ণ আবহাওয়া দেখা গেছে।

লা-নিনার প্রভাবের কারণে পশ্চিম দিকের দেশগুলিতে যেমন আমেরিকাতে শীতকাল শুকনো ও গরম থাকে, ঠিক তেমনি এশিয়ার বিভিন্ন দেশ যেমন অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় প্রচুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। ২০২৪ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষ পর্যন্ত এই প্রভাব চলে। এই তাপমাত্রার পরিবর্তনের ফলে সমুদ্রের জল বাষ্প উত্তোলিত হয়ে বঙ্গোপসাগরের দিকে চলে আসে, যা শীতের দৃশ্যপটকে দুর্বল করেছে।

গ্লোবাল ওয়র্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাব
এছাড়া, গ্লোবাল ওয়র্মিং বা পৃথিবী উষ্ণায়নও শীতকাল কম হওয়ার পেছনে একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। গত কয়েক দশক ধরে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বাড়ছে এবং এর ফলে ঋতুগুলির মধ্যে পরিবর্তন ঘটছে। শীতকাল ইতিমধ্যেই দীর্ঘস্থায়ী না হওয়ার সাথে সাথে গ্রীষ্মকালও অনেক তীব্র হয়ে উঠছে। বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পরবর্তী সময়ে শীতকাল এবং গ্রীষ্মকাল আরো অস্বাভাবিক হয়ে উঠবে, যা পৃথিবীজুড়ে বৃষ্টিপাত ও তাপমাত্রার বৈশ্বিক পরিবর্তনের কারণ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে পৃথিবীর অনেক অঞ্চলই এখন অবিরাম আবহাওয়ার পরিবর্তন অনুভব করছে। গ্রীষ্মের তীব্রতা এবং শীতের অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন আমাদের জীবনযাত্রার ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলছে। আগামী কয়েক দশকে আরো অনেক পরিবর্তন হতে পারে যদি এই সমস্যা মোকাবেলা না করা হয়।

লা-নিনা ও এল-নিনো সাইকেল
লা-নিনার প্রভাব ভারতের আবহাওয়া পরিস্থিতিতে অন্যতম প্রধান ভূমিকা পালন করেছে। তবে, লা-নিনা কোনো স্থায়ী অবস্থা নয়, এবং এপ্রিলের মধ্যেই এটি দুর্বল হয়ে যাবে। এর পরিবর্তে, এল-নিনো (El-Nino) সাইকেল আসতে পারে, যা পৃথিবীজুড়ে তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ হিসেবে পরিচিত। এল-নিনো বছরে একাধিকবার বিভিন্ন অঞ্চলে শক্তিশালী হয়ে ওঠে এবং তার প্রভাব গরম আবহাওয়ার সৃষ্টি করে। বিশেষ করে গ্রীষ্মের সময়ে ভারতের তাপমাত্রা আরও বেশি বাড়বে এবং শীতকাল কম অনুভূত হবে।

এল-নিনো বা এল-নিনো সাউদার্ন অসিলেশন (ENSO) পরিস্থিতি পৃথিবীজুড়ে শীতকাল বা বর্ষাকাল, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ইত্যাদির ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলে। লা-নিনার পর এই এল-নিনো সাইকেল আসার কারণে এর ফলে ভারতের শীতকাল আরও হালকা হতে পারে, বিশেষত দক্ষিণ ভারত ও পশ্চিমবঙ্গ অঞ্চলে।

Why Winter Didn't Settle in India: La-Nina and Global Warming Impact Explained

শীতের দুর্বলতা এবং ভবিষ্যৎ ভবিষ্যত
যেহেতু শীতকাল কম হওয়া বা দুর্বল হয়ে পড়ার পেছনে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের অপ্রতিরোধ্য প্রভাব রয়েছে, তাই শীতকালের গড় তাপমাত্রা আরও কমবে এবং বর্ষা আরও অস্বাভাবিক হতে পারে। এতে করে ভারতীয় কৃষি, বন্যা, জলসংকট ইত্যাদি সমস্যার সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া, গ্রীষ্মের প্রভাব আরও তীব্র হওয়ার ফলে পানীয় জলের সংকট ও বিদ্যুৎ সংকটও মাথাচাড়া দিতে পারে।

সব মিলিয়ে, ভারতের শীতকাল আসলেও সঠিক সময়ে পূর্ণ শক্তি নিয়ে হাজির হয়নি। বিশেষত, লা-নিনা এবং গ্লোবাল ওয়র্মিং এর প্রভাবে এবারের শীতকাল ছিল অস্বাভাবিক। ভবিষ্যতে শীতকাল এবং গ্রীষ্মকাল নিয়ে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, কারণ জলবায়ুর এই পরিবর্তন আমাদের পরিবেশ ও জীবনযাত্রার জন্য মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে।