দলীয় কর্মসূচি এড়িয়ে মোদীর পাশে কেন? জবাব দিলেন কল্যাণ

দিল্লির রাজনীতির আঙিনায় সোমবার সকাল থেকেই গুঞ্জন—বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির দিনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Kalyan Banerjee) দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর…

Kalyan Banerjee Sparks Buzz After Cordial Meet with PM Modi Days After Criticizing Mamata

দিল্লির রাজনীতির আঙিনায় সোমবার সকাল থেকেই গুঞ্জন—বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচির দিনে তৃণমূল কংগ্রেসের প্রবীণ সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Kalyan Banerjee) দেখা গেল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে! শুধু উপস্থিতিই নয়, অনুষ্ঠানে হাসিমুখে কথা, একসঙ্গে ছবি—সব মিলিয়ে রাজনৈতিক মহলে কৌতূহল তুঙ্গে।

কল্যাণের ব্যাখ্যা ফেসবুকে
মঙ্গলবার নিজের ফেসবুক পোস্টে কল্যাণ লেখেন, তিনি ২০১৪ সাল থেকে সংসদীয় ভবন কমিটির সদস্য। তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে—এবং বেশিরভাগ প্রস্তাব তাঁরই ছিল—দিল্লির বাবা খড়গ সিং মার্গে নবনির্বাচিত সাংসদদের জন্য ১৮৪টি ফ্ল্যাট তৈরি হয়েছে। বাংলো সংখ্যায় ঘাটতি থাকায় নতুন এই ফ্ল্যাট নির্মাণ জরুরি ছিল। দীর্ঘ প্রচেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রমের পরে কাজটি সম্পন্ন হয়েছে, আর সোমবার সেই কমপ্লেক্সের উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

   

তিনি জানান, উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয় সকাল ১০টায়। এরপর ১০টা ৩০ মিনিটে তিনি অনুষ্ঠানস্থল থেকে সরাসরি সুপ্রিম কোর্টে যান, যেখানে তৃণমূলের পক্ষ থেকে SIR সংক্রান্ত মামলার সওয়াল করেন। এছাড়া OBC কোটা নিয়ে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ মামলাও ছিল তাঁর হাতে। এই দুটি মামলার কারণে নির্বাচন কমিশনের সামনে দলের কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকতে পারেননি।

বিরোধীদের উদ্দেশে স্পষ্ট বার্তা
কল্যাণ লিখেছেন, “আমার অনুপস্থিতির কারণ ব্যাখ্যা করা আমার দায়িত্ব নয়। তবে আমি জানি, বিরোধীদের মধ্যে অনেকে আছেন যারা সুযোগ পেলেই সমালোচনা করবেন। তাঁদের উদ্দেশে বলি—আপনাদের হাজার প্রচেষ্টার পরও গত নির্বাচনে গণদেবতা ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আশীর্বাদে আমি এক লক্ষ পঁচাত্তর হাজার ভোটে জিতেছি। সততা ও আন্তরিকতা আমার অটুট, আর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ঈশ্বরের প্রতি আমার আনুগত্য আজীবন প্রশ্নাতীত।”

সোমবারের অনুষ্ঠান: হাসি-ঠাট্টা থেকে ছবি তোলা
নবনির্মিত সাংসদ আবাসনের উদ্বোধনে উপস্থিত ছিলেন একাধিক মন্ত্রী, সাংসদ ও বিশিষ্টজন। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে মোদী কল্যাণের দিকে তাকিয়ে বলেন, “ক্যা কল্যাণজি, কল্যাণ হ্যায় তো?”—উত্তরে কল্যাণ মজার ছলে বলেন, “হ্যাঁ, সব কিছু কল্যাণমূলকই।” উপস্থিতদের মধ্যে হাসির রোল পড়ে। ছবি তোলার সময় মঞ্চে চেয়ার সরানোর প্রয়োজন হলে মোদী নিজেই হাত লাগান, আর তাতে সঙ্গ দেন কল্যাণও। পরে সবাই মিলে একটি গ্রুপ ফটো তোলা হয়, যেখানে প্রধানমন্ত্রীর ঠিক পাশেই বসেন তৃণমূল সাংসদ।

Advertisements

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও বিতর্ক
এদিনই বিরোধী জোট নির্বাচন কমিশনে গিয়ে SIR ও ‘ভোট চুরি’ সংক্রান্ত অভিযোগ জানাচ্ছিল। কল্যাণের অনুপস্থিতি এবং একই দিনে মোদীর পাশে হাসিমুখে দেখা যাওয়া—দুটি ঘটনা মিলিয়ে বিরোধীরা তির্যক মন্তব্য করছেন। তাঁদের দাবি, বিরোধী শিবিরের লড়াই চলাকালীন শীর্ষ নেতার পাশে থাকা রাজনৈতিক দিক থেকে ‘ইঙ্গিতবহ’। তবে কল্যাণ ঘনিষ্ঠরা বলছেন, এটি ছিল সম্পূর্ণ আনুষ্ঠানিক ও প্রটোকল মেনে সৌজন্য সাক্ষাৎ, এর সঙ্গে রাজনৈতিক বার্তা দেওয়ার কোনও সম্পর্ক নেই।

মুখ্যসচেতক পদ ছাড়া থেকে আজ
মাত্র এক সপ্তাহ আগে তৃণমূলের লোকসভা মুখ্যসচেতকের পদ ছেড়েছেন কল্যাণ। পদত্যাগের পর তিনি প্রকাশ্যে মমতার নেতৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন, যা দলের অন্দরে অস্বস্তি বাড়ায়। তবে রাখি পূর্ণিমার দিনে তিনি জানান, দিদি তাঁকে তিনবার আশীর্বাদ করেছেন, আর রবিবার ফোনে বহুবার কথা হয়েছে।

রাজনৈতিক মহলের মূল্যায়ন
বিশ্লেষকদের মতে, এই ঘটনা তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে প্রভাব ফেলতে পারে। বিরোধী জোটের ঐক্যের বার্তা যখন সর্বাগ্রে, তখন এমন ছবি রাজনৈতিক জল্পনাকে উসকে দেবে। অন্যদিকে, কল্যাণের সরাসরি ব্যাখ্যা ও আনুগত্যের শপথ হয়তো দলীয় চাপ কিছুটা প্রশমিত করবে।

সব মিলিয়ে, মমতার সমালোচনার মাত্র এক সপ্তাহ পরেই মোদীর পাশে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতি আগামী দিনে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে থাকবে। এটি কেবল ব্যক্তিগত সম্পর্কের বহিঃপ্রকাশ, না রাজনৈতিক কৌশলের অংশ—সেটিই এখন লাখ টাকার প্রশ্ন।

আমাদের Google News এ ফলো করুন

২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।

Google News Follow on Google News