আজ আহমেদাবাদ বিমান দুর্ঘটনায় (plane-crashes) জীবনাবসান হয়েছে গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানির। তিনি যাচ্ছিলেন লন্ডনে মেয়ের সাথে দেখা করতে। শুধু রূপানি নন ভারতবর্ষে বিমান দুর্ঘটনার ইতিহাসে আর ও বেশ কিছু বিখ্যাত ব্যক্তিত্বের মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটেছে, যা জাতিকে গভীরভাবে শোকাহত করেছে।
এই তালিকায় প্রথমেই রয়েছেন কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় গান্ধী, (plane-crashes) ভারতের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত এবং আজ চলে গেলেন গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি। এই দুর্ঘটনাগুলি (plane-crashes) শুধুমাত্র ব্যক্তিগত ক্ষতিই নয়, ভারতীয় রাজনীতি ও সমাজের উপর গভীর প্রভাব ফেলেছে। এবং আশ্চর্যের বিষয় এই দুর্ঘটনা গুলো নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়নি। এই প্রতিবেদনে আমরা এই তিনটি উল্লেখযোগ্য বিমান দুর্ঘটনার বিবরণ এবং তাদের পিছনের কারণগুলি আলোচনা করব।
সঞ্জয় গান্ধী এক রাজনৈতিক উত্তরাধিকারের অকাল অবসান
১৯৮০ সালের ২৩ জুন, ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে এবং কংগ্রেস নেতা সঞ্জয় গান্ধী একটি বিমান দুর্ঘটনায় (plane-crashes) প্রাণ হারান। তিনি দিল্লির সফদরজং বিমানবন্দরের কাছে একটি পিটস এস-২এ গ্লাইডার পাইলট করছিলেন। সঞ্জয়, যিনি একজন প্রশিক্ষিত পাইলট ছিলেন, বিমানটির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন, সম্ভবত বিপজ্জনক কৌশল (অ্যাক্রোব্যাটিক ম্যানুভার) চালানোর সময়।
এই দুর্ঘটনা ভারতীয় রাজনীতিতে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হয়, কারণ সঞ্জয়কে গান্ধী পরিবারের রাজনৈতিক উত্তরাধিকার হিসেবে দেখা হতো। এই ঘটনার পিছনে প্রাথমিক কারণ হিসেবে পাইলটের ভুল এবং সম্ভবত বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি চিহ্নিত করা হয়। এখানেও সেই এক ই প্রশ্ন করা যেতে পারে তা হল যে বিমানটি সঞ্জয় গান্ধীর মতো ব্যাক্তিত্ব চালাচ্ছিলেন তাতে ত্রুটি ধরা পড়লনা কেন।
জেনারেল বিপিন রাওয়াত সামরিক নেতৃত্বের অপূরণীয় ক্ষতি
২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর, ভারতের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াত তামিলনাড়ুর কুনুরে একটি হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় (plane-crashes) প্রাণ হারান। তিনি ভারতীয় বিমানবাহিনীর এমআই-১৭ভি৫ হেলিকপ্টারে সুলুর থেকে কুনুরের দিকে যাচ্ছিলেন। এই দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী মধুলিকা রাওয়াত-সহ ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জন নিহত হন।
তদন্তে দেখা গেছে, প্রতিকূল আবহাওয়া এবং সম্ভবত কুয়াশার কারণে পাইলটের দৃষ্টিভ্রম (স্পেশিয়াল ডিসোরিয়েন্টেশন) এই দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। জেনারেল রাওয়াতের মৃত্যু ভারতীয় সামরিক বাহিনীর জন্য একটি বড় ক্ষতি ছিল, কারণ তিনি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক এবং মায়ানমার মিশনের মতো গুরুত্বপূর্ণ অপারেশনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। এই দুর্ঘটনা ভারতের সামরিক বিমানের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল।
বিজয় রূপানি গুজরাটের এক রাজনৈতিক নক্ষত্রের পতন
অতীতের এই দুটি ঘটনাকে সাক্ষী রেখে আজ গুজরাটের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রূপানি আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনগামী এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই১৭১-এর দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। এই বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার বিমানটি টেকঅফের কয়েক মিনিট পরে আহমেদাবাদের মেঘানি নগর এলাকায় বিধ্বস্ত হয়।
বিমানটিতে ২৪২ জন যাত্রী ও ক্রু ছিলেন, যার মধ্যে ১৬৯ জন ভারতীয়, ৫৩ জন ব্রিটিশ, ৭ জন পর্তুগিজ এবং ১ জন কানাডিয়ান নাগরিক ছিলেন। বিজয় রূপানি, যিনি ২০১৬ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন, তিনি তার মেয়ের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডন যাচ্ছিলেন।
দুর্ঘটনার কারণ এখনও তদন্তাধীন, তবে প্রাথমিক রিপোর্টে ফ্ল্যাপের ত্রুটি বা যান্ত্রিক সমস্যার সম্ভাবনার কথা বলা হচ্ছে। এই দুর্ঘটনায় (plane-crashes) মাত্র একজন ভারতীয় নাগরিক বেঁচে আছেন। গুজরাটের বিজেপি প্রেসিডেন্ট সিআর পাতিল এই ঘটনাকে দলের জন্য “বড় ক্ষতি” হিসেবে বর্ণনা করেছেন।
বিমান দুর্ঘটনার কারণ শক্তি ও উচ্চতা না পাওয়ার ক্ষতি
বিমান দুর্ঘটনার (plane-crashes) পিছনে প্রধানত দুটি কারণ থাকে যেমন শক্তির ক্ষয় (লস অফ পাওয়ার) এবং উচ্চতা না পাওয়া (লস অফ লিফট)। শক্তির ক্ষতি সাধারণত ইঞ্জিন ব্যর্থতার কারণে ঘটে, যেমন জ্বালানি সরবরাহে সমস্যা, যান্ত্রিক ত্রুটি বা বার্ড স্ট্রাইক। উত্তোলনের ক্ষতি ঘটতে পারে স্টল, ডানায় বরফ জমা, ফ্ল্যাপের ভুল কনফিগারেশন বা উইন্ড শিয়ারের কারণে।
উদাহরণস্বরূপ, সঞ্জয় গান্ধীর ক্ষেত্রে পাইলটের ভুল এবং বিপিন রাওয়াতের দুর্ঘটনায় আবহাওয়া ও দৃষ্টিভ্রম ছিল সম্ভাব্য কারণ। বিজয় রূপানির দুর্ঘটনায় যান্ত্রিক ত্রুটির সম্ভাবনা উঠে আসছে। আবার ভারত পাকিস্তান অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলশ্রুতি হিসেবে নাশকতার ছক ও সন্দেহের উর্ধে নয়।
জলপাইগুড়ির বানারহাটে চরম জলকষ্ট! প্রশাসন ঘেরাওয়ের হুঁশিয়ারি বাসিন্দাদের
প্রতিরোধে পদক্ষেপ
এই ধরনের দুর্ঘটনা (plane-crashes) রোধে বিমানের নিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ, পাইলটদের জন্য উন্নত প্রশিক্ষণ, এবং আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। স্টল ওয়ার্নিং সিস্টেম, উইন্ড শিয়ার ডিটেকশন এবং আবহাওয়ার পূর্বাভাসের উপর নির্ভর করা জরুরি। আহমেদাবাদ দুর্ঘটনার পর ডিজিসিএ এবং বোয়িং তদন্ত শুরু করেছে, এবং ব্ল্যাক বক্সের তথ্য বিশ্লেষণ করা হচ্ছে।
সঞ্জয় গান্ধী, বিপিন রাওয়াত এবং বিজয় রূপানির মতো বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু ভারতের জন্য বড় ক্ষতি। এই ঘটনাগুলি বিমান চলাচলের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেয়। একজন প্রাক্তন এয়ারলাইন ক্যাপ্টেন হিসেবে আমি বলতে পারি, প্রযুক্তি, প্রশিক্ষণ এবং সতর্কতার সমন্বয়ে এই ধরনের দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমানো সম্ভব। শোকাহত পরিবারগুলির প্রতি সমবেদনা জানাই এবং আশা করি ভবিষ্যতে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে না।