বিশ্ব চাপের মাঝেও রাশিয়ার তেলেই আস্থা ভারতের, আসল গল্প ৫ দফায়

Shutdown of Russian Oil Supply Raises Concerns for Indian Refineries

যুক্তরাষ্ট্রের বারবারের হুমকি, শুল্ক-যুদ্ধ, কূটনৈতিক চাপ এবং প্রকাশ্য অপমান সত্ত্বেও রাশিয়াকে তেলের (Oil Source) প্রধান উৎস হিসেবে ধরে রেখেছে ভারত। সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের মোট অপরিশোধিত তেলের ৩৪ শতাংশ এসেছে রাশিয়া থেকে। যদিও জানুয়ারি থেকে এই আমদানিতে ১০ শতাংশ পতন ঘটেছে, তবু রাশিয়ার তেলেই ভারতের ভরসা অটুট।

Advertisements

বেলজিয়ামের পণ্য ও জাহাজ চলাচল পর্যবেক্ষক সংস্থা Kpler–এর সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে ভারত গড়ে দিনে ১৬ লক্ষ ব্যারেল রাশিয়ার তেল আমদানি করেছে, যা ভারতের মোট আমদানিকৃত অপরিশোধিত তেলের এক-তৃতীয়াংশের বেশি।

   

এই অবস্থান নিয়েছে এমন এক সময়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ৫০% আমদানি শুল্ক চাপিয়েছেন, এবং রাশিয়া থেকে তেল কেনার জন্য অতিরিক্ত ২৫% জরিমানা আরোপ করেছেন। ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, ভারত রাশিয়া থেকে তেল কিনে “পুতিনের যুদ্ধযন্ত্র”–কে অর্থসাহায্য করছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ভারত “ব্যাপক পরিমাণে রুশ তেল কিনে বিশ্ববাজারে বিক্রি করে মুনাফা করছে”। তিনি হুমকি দিয়েছেন, যারা এতে সহযোগিতা করছে তাদের ওপর ১০০% পর্যন্ত গৌণ নিষেধাজ্ঞা জারি করা হবে।

তবে ভারত এসব চাপকে কার্যত অগ্রাহ্য করেছে। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ভারতের তেল কেনা “দামের ওপর নির্ভর করে, কূটনৈতিক চাপে নয়”। বিদেশমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর মার্কিন শুল্ককে “অন্যায্য ও একপাক্ষিক” বলে অভিহিত করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, ইউরোপ ও আমেরিকা যেখানে এখনো রাশিয়ার খনিজ ও সার কিনছে, সেখানে ভারতকে কেন লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে? সরকারি সংস্থাগুলি রাশিয়ার তেল আমদানি কমালেও, বেসরকারি সংস্থাগুলি সেই ঘাটতি পূরণ করেছে। রিলায়েন্স ইন্ডাস্ট্রিজ সেপ্টেম্বরে দিনে ৮.৫ লক্ষ ব্যারেল রুশ তেল আমদানি করেছে, যা জানুয়ারিতে ছিল মাত্র ৪.২ লক্ষ ব্যারেল।

Advertisements

অন্যদিকে, ইন্ডিয়ান অয়েল, ভারত পেট্রোলিয়াম এবং হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম-এর মতো রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি রাশিয়া থেকে আমদানি ৪৫% কমিয়ে এনেছে। এর অন্যতম কারণ হলো মূল্যছাড় কমে যাওয়া এবং ইউক্রেনীয় ড্রোন হামলার ফলে রাশিয়ার সরবরাহ ব্যবস্থা ঝুঁকির মুখে পড়া।

২০২২ সালে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে রাশিয়া ভারতের তেলের বড় সরবরাহকারী ছিল না। তবে যুদ্ধের পর ভারতের রাশিয়া থেকে তেল আমদানি ০.২% থেকে এক লাফে ৩৫-৪০%–এ পৌঁছায়। এই সময় ভারত আনুমানিক ১৭ বিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করেছে ডিসকাউন্টেড তেল কেনার মাধ্যমে।

ভারতের জ্বালানি মন্ত্রী হরদীপ সিং পুরি বলেন, “আমি মোটেও চিন্তিত নই। ভারত ৪০টিরও বেশি দেশের কাছ থেকে তেল আমদানি করে।” তিনি স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে ভারত তার জ্বালানি নিরাপত্তা রক্ষায় সবসময় সাশ্রয়ী এবং নির্ভরযোগ্য উৎস বেছে নেবে।