Why India attacked 9 terror camps
নয়াদিল্লি: ভারতীয় সেনাবাহিনী আবারও বুঝিয়ে দিল, সীমান্ত পেরিয়ে ভারতের ভিতরে সন্ত্রাস ছড়ালে তার জবাব মিলবেই — এবং তা কঠোর ও নির্ভুলভাবে। বুধবার রাতে এক অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও সুনির্দিষ্ট অভিযানে ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনী পাকিস্তান ও পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে অবস্থিত অন্তত ৯টি সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটিতে সফল হামলা চালিয়েছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, এই “ফোকাসড স্ট্রাইক” ছিল সম্পূর্ণরূপে সন্ত্রাসবাদী পরিকাঠামোর বিরুদ্ধে, যা গত কয়েক দশক ধরে ভারতের অভ্যন্তরে সন্ত্রাস ছড়ানোর কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিল।
দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা নজরদারি এবং স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ
এই অপারেশনের পেছনে দীর্ঘদিনের গোয়েন্দা নজরদারি এবং স্যাটেলাইট পর্যবেক্ষণ ছিল। প্রতিটি টার্গেট সুনির্দিষ্টভাবে চিহ্নিত করা হয়েছিল, যেখানে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলির ঘাঁটি, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, অস্ত্র মজুতের জায়গা এবং অনুপ্রবেশের লঞ্চ প্যাড ছিল। প্রতিটি লক্ষ্যবস্তুর সঙ্গে সরাসরি ভারতে সংঘটিত একাধিক জঙ্গি হামলার সম্পর্ক রয়েছে — পুলওয়ামা থেকে শুরু করে পাঠানকোট বা মুম্বই ২৬/১১-র মতো ভয়াবহ ঘটনাও এর অন্তর্ভুক্ত।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য যে ঘাঁটিগুলির উপর হামলা চালানো হয়, তার মধ্যে অন্যতম ছিল মুরিদকে অবস্থিত ‘মারকাজ তাইবা’, লস্কর-ই-তৈয়বার (LeT) অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। এখানে একদিকে যেমন অস্ত্র ও গেরিলা যুদ্ধের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়, তেমনই ধর্মীয় উগ্রবাদ ছড়িয়ে নতুন জঙ্গীদের মগজধোলাই করে জেহাদের পথে নিয়ে যাওয়া হয়। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২৬/১১-র হামলাকারী আজমল কাসব-সহ বাকি জঙ্গিদের এখানেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছিল।
নিশানায় JeM-এর মূল অপারেশনাল সদর দফতর Why India attacked 9 terror camps
ঠিক তেমনি, বাহাওয়ালপুরের কাছে ‘মারকাজ সুবহান আল্লাহ’ নামে একটি স্থাপনায় জয়েশ-ই-মহম্মদ (JeM)-এর মূল অপারেশনাল সদর দফতর গড়ে তোলা হয়েছে। এখানেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিল পুলওয়ামা হামলার ঘাতকরা। এই ঘাঁটিতে প্রায় ৬০০ জঙ্গি একসঙ্গে থাকতে পারে বলে জানা গিয়েছে।
শুধু প্রশিক্ষণ নয়, এই ঘাঁটিগুলির একটি বড় অংশ ব্যবহৃত হয় ভারতীয় ভূখণ্ডে অনুপ্রবেশের জন্য। শাকরগড়ের কাছের সারজাল অঞ্চলে থাকা একটি কেন্দ্রে ভূগর্ভস্থ সুড়ঙ্গ বানিয়ে ভারতীয় সীমান্তে JeM জঙ্গিদের ঢোকানো হয়। একই সঙ্গে এই অঞ্চলকে ব্যবহার করা হয় ড্রোনের মাধ্যমে অস্ত্র ও মাদক ভারতীয় ভূখণ্ডে পাঠানোর জন্য। এই অপারেশনগুলির পেছনে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা ISI-এর সরাসরি মদত রয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
হিজবুল মুজাহিদিন (HM)-এর একাধিক ঘাঁটিতেও এই অভিযানে আঘাত হানা হয়েছে। সিয়ালকোটের ‘মেহমুনা জোয়া’ এবং কোটলির পাহাড়ি এলাকায় অবস্থিত ‘মাসকার রাহিল শহীদ’ — দুটি স্থাপনাই বহু বছর ধরে ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর অঞ্চলে সন্ত্রাস ছড়ানোর মূল ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। এই ঘাঁটিগুলিতে অস্ত্র প্রশিক্ষণ, স্নাইপার ট্রেনিং, BAT একশন ট্রেনিং এবং পাহাড়ি অঞ্চলে লড়াইয়ের কৌশল শেখানো হয়।
লস্করের ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিল ভারত
এছাড়া, মুজাফফরাবাদ ও বারনালার কয়েকটি লস্করের ঘাঁটি — যেমন ‘শাওয়াই নাল্লা ক্যাম্প’ ও ‘মারকাজ আহলে হাদিস’ — বহু বছর ধরেই নতুন জঙ্গিদের রিক্রুটমেন্ট ও প্রশিক্ষণের কাজে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার মতে, এগুলি এক একটি ‘সন্ত্রাসের কারখানা’, যেখানে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে নতুন জেহাদি বাহিনী।
সরকারি সূত্রে নিশ্চিত করা হয়েছে, এই অপারেশন আন্তর্জাতিক আইন মেনেই পরিচালিত হয়েছে। প্রতিটি লক্ষ্যবস্তু সীমান্তের ওপারে হলেও ভারতের ভূখণ্ড থেকেই প্রিসিশন স্ট্রাইক পরিচালনা করা হয়েছে। ভারতের পক্ষে এটি ছিল আত্মরক্ষার অধিকার প্রয়োগের সঠিক ও ন্যায্য প্রয়াস।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই অভিযানে পাকিস্তানকে কড়া বার্তা দেওয়া হয়েছে যে, সীমান্ত পেরিয়ে সন্ত্রাস ছড়ালে এবার থেকে কূটনৈতিক ভাষায় নয়, সরাসরি সেনা অভিযানের মাধ্যমে তার জবাব দেওয়া হবে। শুধু পাকিস্তানের মাটি থেকে সন্ত্রাসবাদ পরিচালনা নয়, পাকিস্তানের সরকার এবং ISI যদি তা প্রশ্রয় দেয়, তাহলে আন্তর্জাতিক মঞ্চেও তাদের বিচ্ছিন্ন করার কৌশল নিতে চলেছে ভারত।
এই অপারেশন ভারতের নতুন নিরাপত্তা নীতির প্রতিচ্ছবি — সন্ত্রাসের মোকাবিলায় কোনওরকম আপস নয়, এবং প্রয়োজনে সীমান্তের ওপারে গিয়েও নিজের জনগণ ও ভূখণ্ডের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।
Bharat: Indian Army retaliates against cross-border terrorism, striking multiple terror camps in Pakistan & PoK. Focused operation targets LeT, JeM infrastructure linked to attacks like Pulwama & 26/11.