জম্মু ও কাশ্মীরের পহেলগাঁওয়ে ২২ এপ্রিল ঘটে যায় ভয়াবহ জঙ্গি হামলা (Abdullah)। এই জঙ্গি হামলার পরবর্তী বিশ্লেষণে উঠে আসে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ঢিলে ঢালা অবস্থা। বাইসারান উপত্যকায় এই হামলায় ২৬ জন নিরীহ পর্যটকের মৃত্যু হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে কাশ্মীরে পর্যটকদের উপর সবচেয়ে মারাত্মক হামলা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।
এই ঘটনার পর জম্মু ও কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাহ তীব্র ক্ষোভে গোয়েন্দা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতার জন্য দায়ীদের চিহ্নিত করার দাবি তুলেছেন। তিনি বলেছেন, “এই ব্যর্থতার জন্য কে দায়ী? যদি এটি গোয়েন্দা ব্যর্থতা হয়, তাহলে এর দায় কার?
২৬ জন মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন, আর আমাদের তরফে কোনো প্রতিক্রিয়া নেই, এটা সম্ভব নয়। প্রসঙ্গত কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থার হাতে ধরা পড়া দুই কাশ্মীরি যারা ওই জঙ্গিদের আশ্রয় দিয়েছিলেন তাদের বিষয়ে বলতে গিয়ে আবদুল্লাহ বলেছিলেন জঙ্গিরা তাদের প্রাণের ভয় দেখিয়ে আশ্রয় নিয়েছিল। এখন আবদুল্লাহর মত “এখন যখন আমরা জানি যে নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থায় ব্যর্থতা হয়েছে, তখন কাউকে না কাউকে এর দায় নিতে হবে।”
পহেলগাঁও হামলার প্রেক্ষাপট
২০২৫ সালের ২২ এপ্রিল, পহেলগাঁওয়ের বাইসারান উপত্যকায়, যা ‘মিনি সুইৎজারল্যান্ড’ নামে পরিচিত, পাঁচজন সশস্ত্র জঙ্গি পর্যটকদের উপর অতর্কিত হামলা চালায়। হামলাকারীরা এম৪ কারবাইন এবং এ কে-৪৭ রাইফেল নিয়ে পর্যটকদের লক্ষ্যবস্তু করে, যার মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন হিন্দু পর্যটক। এই হামলায় একজন খ্রিস্টান পর্যটক এবং একজন স্থানীয় মুসলিম পনি চালক সৈয়দ আদিল হুসেন শাহ নিহত হন, যিনি পর্যটকদের বাঁচাতে গিয়ে প্রাণ হারান।
হামলার দায় স্বীকার করে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ), যারা পাকিস্তান-ভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বার একটি শাখা। টিআরএফ টেলিগ্রামে দাবি করে যে এই হামলা কাশ্মীরে বহিরাগতদের বসতি স্থাপনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ। তবে, পরে তারা এই দায় অস্বীকার করে এবং দাবি করে যে তাদের নামে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা ষড়যন্ত্র করেছে।
গোয়েন্দা ব্যর্থতার অভিযোগ
হামলার কয়েকদিন আগে গোয়েন্দা তথ্যে জানা গিয়েছিল যে জম্মু ও কাশ্মীরের পর্যটন স্থান, বিশেষ করে শ্রীনগরের কাছাকাছি হোটেলগুলি জঙ্গিদের লক্ষ্য হতে পারে। তবে, বাইসারান উপত্যকার নাম এই তথ্যে উল্লেখ ছিল না, যা এই অঞ্চলের শান্তিপূর্ণ ইতিহাসের কারণে নিরাপত্তার দিক থেকে কম প্রাধান্য পেয়েছিল।
জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ এই তথ্যের ভিত্তিতে শ্রীনগরের পর্যটন স্থানগুলিতে নিরাপত্তা জোরদার করলেও, পহেলগাঁওয়ে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছিল না। প্রাক্তন র’-প্রধান এ এস দুলত বলেছেন, “এটি একটি নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যর্থতা। তবে, কোনো নিরাপত্তা ব্যবস্থাই সম্পূর্ণরূপে নিখুঁত নয়।” তিনি আরও বলেন, পাকিস্তানের সঙ্গে এই হামলার সংযোগ স্পষ্ট, এবং ভারতকে এই হামলার দায়ীদের খুঁজে বের করতে হবে, সেটা কাশ্মীরে হোক বা পাকিস্তানে।
উপরাজ্যপালের জবাবদিহি
২০২৫ সালের ১৪ জুলাই, হামলার ৮৩ দিন পর, জম্মু ও কাশ্মীরের উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা এই ঘটনাকে একটি নিরাপত্তা ব্যর্থতা হিসেবে স্বীকার করেন। তিনি বলেন, “এটি একটি পাকিস্তান-প্রায়োজিত হামলা, যার উদ্দেশ্য ছিল কাশ্মীরের অর্থনীতি ধ্বংস করা এবং সাম্প্রদায়িক বিভেদ সৃষ্টি করা। আমি এই ঘটনার পূর্ণ দায়িত্ব নিচ্ছি।” তবে, এক্স-এ পোস্টে বিরোধী নেতারা প্রশ্ন তুলেছেন, উপরাজ্যপালের এই দায় স্বীকার করা কি যথেষ্ট? কেন্দ্রীয় গৃহমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের নীরবতা নিয়েও সমালোচনা হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও তদন্ত
হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশ চারজন সন্ত্রাসীর স্কেচ প্রকাশ করে এবং তাদের শনাক্ত করে। এদের মধ্যে দুজন পাকিস্তানি (আলি ভাই ওরফে তালহা এবং আসিফ ফৌজি) এবং দুজন স্থানীয় কাশ্মীরি (আদিল হুসেন ঠোকার এবং আহসান)। জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ) তদন্ত শুরু করে এবং পাকিস্তানের মুজফফরাবাদ ও করাচিতে নিরাপদ আস্তানার সঙ্গে এই হামলার সংযোগ খুঁজে পায়। ভারত সরকার ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামে পাকিস্তান-অধিকৃত কাশ্মীরে জঙ্গি ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালায়।
ইতিহাস গড়ল নন্দঝাড় হাই স্কুল, রাজ্যজয়ী অনূর্ধ্ব-১৭ কন্যা ফুটবল দল
প্রভাব ও জনমত
এই হামলা কাশ্মীরের পর্যটন শিল্পের উপর মারাত্মক আঘাত হেনেছে। হামলার পর পর্যটকদের আগমন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়, যদিও উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা বলেছেন, অমরনাথ যাত্রার মাধ্যমে পর্যটন পুনরুদ্ধারের সম্ভাবনা রয়েছে। কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষ এই হামলার বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করেছেন, যা অভূতপূর্ব। ওমর আবদুল্লাহ বলেছেন, “কাশ্মীরের মানুষ বলেছে, এই হামলা আমাদের নামে নয়।” তবে, তিনি সতর্ক করে বলেছেন, নিরাপত্তা অভিযানে নিরীহ মানুষকে লক্ষ্য করা উচিত নয়।
পহেলগাঁও হামলা ভারতের নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে উন্মোচিত করেছে। ওমর আবদুল্লাহর প্রশ্ন, “কে দায়ী?” এখনও পুরোপুরি উত্তরহীন। উপরাজ্যপাল মনোজ সিনহা দায় স্বীকার করলেও, কেন্দ্রীয় সরকারের নীরবতা এবং চারজন জঙ্গির এখনও পলাতক থাকা জনমনে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। এই ঘটনা কাশ্মীরের শান্তি ও পর্যটন পুনরুদ্ধারের পথে বড় চ্যালেঞ্জ।