কলকাতা: সংযুক্ত আরব আমিরশাহীতে অনুষ্ঠিত দুবাই এয়ারশো ২০২৫–এ ভারতীয় বায়ুসেনার তেজস যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়ে শহিদ হন উইং কমান্ডার নমনশ শ্যাল (৩৪)। শুক্রবার বিকেলে ডেমোনস্ট্রেশন ও প্র্যাকটিস ফ্লাইটে অংশ নেওয়ার সময়ে বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে ভেঙে পড়ে৷ যেখানে গর্বের সঙ্গে স্বদেশি যুদ্ধবিমানের সক্ষমতার প্রদর্শনই ছিল ভারতের লক্ষ্য, সেখানে মুহূর্তের ভুলচুকে তা মর্মান্তিক ট্র্যাজেডিতে পরিণত হল।
নাগরোটা বাগওয়ান এলাকার পাটিয়ালাকাধ গ্রামের বাসিন্দা নমনশ শিয়াল ভারতীয় বায়ুসেনার অন্যতম সেরা ডিসিপ্লিনড অফিসার হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কঠোর পরিশ্রম ও নিষ্ঠার মধ্য দিয়ে তিনি অল্প বয়সেই কৃতিত্বের শিখরে পৌঁছেছিলেন। হিমাচল প্রদেশের হামিরপুর জেলার বিখ্যাত সাইনিক স্কুল সুজনপুর তীরা থেকে পড়াশোনা শেষ করে দেশের জন্য জীবন উৎসর্গের স্বপ্নেই তাঁর কেরিয়ার শুরু।
গ্রামে শোকের ছায়া
উইং কমান্ডার শ্যাল তাঁর শৃঙ্খলা এবং ব্যতিক্রমী সেবার রেকর্ডের জন্য পরিচিত ছিলেন। তিনি হামিরপুর জেলার সুজানপুর টিরা-এর সৈনিক স্কুলে পড়াশোনা করেন।
নমংশ শ্যালের বাবা, জগন নাথ, একজন অবসরপ্রাপ্ত সেনা আধিকারিক, যিনি পরে হিমাচল প্রদেশ শিক্ষা বিভাগে প্রিন্সিপাল হিসেবে কর্মরত ছিলেন, এবং তাঁর মা বীণা দেবী এই দুর্ঘটনার সময় তাঁদের পুত্র এবং পুত্রবধূকে দেখতে হায়দ্রাবাদে গিয়েছিলেন। তাঁদের পারিবারিক বাড়ি গত কয়েকদিন ধরে তালাবন্ধ ছিল। এই মর্মান্তিক খবরে গ্রামে নামে শোকের ছায়া৷
দুর্ঘটনার দৃশ্য Who was Wing Commander Namansh Syal
বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে প্রচারিত দুর্ঘটনার দৃশ্যগুলিতে দেখা যায়, তেজস বিমানটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে মাটিতে আছড়ে পড়ে এবং সঙ্গে সঙ্গে সেটি একটি বিশাল অগ্নিগোলকে পরিণত হয়। ঘটনাস্থল থেকে ঘন কালো ধোঁয়া বের হতে থাকে, যা দুবাই এয়ার শো-এর দর্শকদের হতবাক করে দেয়।
বীরপুত্রের মৃত্যুর খবর কাংড়া উপত্যকায় পৌঁছতেই শোকের ঢেউ লাগে। গ্রামের মানুষজন গভীর রাত পর্যন্ত শ্যাল পরিবারের বাড়ির বাইরে জড়ো হন। অনেকে শীতের রাতে আগুন জ্বালিয়ে শোকাহত অবস্থায় বসে থাকেন, তাঁদের সাহসী সন্তানের অকাল মৃত্যু কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলেন না।
মুখ্যমন্ত্রীর শোকবার্তা
হিমাচল প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু গভীর শোক প্রকাশ করে বলেছেন, দেশ একজন সাহসী এবং নিবেদিতপ্রাণ পাইলটকে হারাল। তিনি বলেন, উইং কমান্ডার শ্যালের সাহসিকতা এবং দেশের প্রতি অবিচল অঙ্গীকার সর্বদা স্মরণীয় হয়ে থাকবে। মুখ্যমন্ত্রী শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানিয়েছেন।
শহিদ উইং কমান্ডার শ্যাল তাঁর প্রবীণ বাবা-মা, তাঁর স্ত্রী— যিনি নিজেও ভারতীয় বায়ুসেনার একজন আধিকারিক এবং তাঁদের ছয় বছরের কন্যাকে রেখে গেলেন। উইং কমান্ডার শ্যালের শেষকৃত্যের বিস্তারিত তথ্য এখনও চূড়ান্ত হয়নি।
