উত্তর প্রদেশে মুসলিম ভোটের ‘মিষ্টি সেমাই’ কার ঝুলিতে ?

Who Holds the ‘Sweet Shemai’ of Muslim Votes in Uttar Pradesh? উত্তর প্রদেশের (uttar pradesh) রাজনীতিতে মুসলিম ভোট সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমাজবাদী পার্টির (এসপি)…

Who Holds the 'Sweet Shemai' of Muslim Votes in Uttar Pradesh

Who Holds the ‘Sweet Shemai’ of Muslim Votes in Uttar Pradesh?

   

উত্তর প্রদেশের (uttar pradesh) রাজনীতিতে মুসলিম ভোট সবসময়ই একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সমাজবাদী পার্টির (এসপি) প্রধান অখিলেশ যাদবের জন্য এই ভোটব্যাঙ্ক দীর্ঘদিন ধরে একটি শক্ত ভিত্তি হয়ে এসেছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রশ্ন উঠছে যে, অখিলেশ কি মুসলিম ভোট ভাগ হওয়ার আশঙ্কায় ভুগছেন? এবং উত্তর প্রদেশে মুসলিম ভোটের মিষ্টি সেমাই শেষ পর্যন্ত কার ঝুলিতে যাবে? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই ভোটের গতিপ্রকৃতি ২০২৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে রাজ্যের রাজনীতির ভবিষ্যৎ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

Advertisements

সমাজবাদী পার্টির শক্তিশালী অবস্থান

ঐতিহাসিকভাবে, উত্তর প্রদেশে (uttar pradesh) সমাজবাদী পার্টি মুসলিম ও যাদব সম্প্রদায়ের সমর্থনে শক্তিশালী অবস্থান ধরে রেখেছে। অখিলেশের পিতা মুলায়ম সিং যাদবের আমলে এই সমীকরণ তৈরি হয়েছিল, যিনি ‘মুসলিম-যাদব’ (এম-ওয়াই) জোটের মাধ্যমে এসপিকে একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক শক্তিতে পরিণত করেছিলেন। ২০১২ সালে অখিলেশ যখন মুখ্যমন্ত্রী হন, তখন তিনি এই ভোটব্যাঙ্ককে ধরে রাখার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। মুসলিমদের জন্য ২০% কোটা, কন্যা বিদ্যা ধনের মতো প্রকল্প এবং এমনকি ইসলামবিরোধী চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ করার দাবি—এগুলো তার মুসলিমপন্থী ভাবমূর্তি তৈরি করেছিল। কিন্তু সমালোচকরা বলেন, এটি কেবল ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি ছিল, উন্নয়নের প্রকৃত প্রতিশ্রুতি নয়।

আরো দেখুন কাশ্মীরে ফের গুলির লড়াই, তিন জঙ্গি ঘিরে ফেলল সেনা

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন (uttar pradesh)

২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে এসপি ৩৭টি আসনে জয়ী হয়ে তার সেরা ফলাফল দেখিয়েছিল। মুসলিম ভোটাররা ব্যাপকভাবে ইন্ডিয়া জোটের প্রতি সমর্থন জানিয়েছিল, যেখানে অখিলেশ এবং কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীর জুটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক উপনির্বাচনে এসপির দুর্বল পারফরম্যান্স এবং বিজেপির আধিপত্য প্রশ্ন তুলেছে—মুসলিম ভোট কি এখনও অখিলেশের হাতের মুঠোয় আছে, নাকি তা ভাগ হয়ে যাচ্ছে?

রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন

রাজনৈতিক মহলে গুঞ্জন, অখিলেশের কাছে মুসলিম ভোটের প্রতি আস্থা কমছে। এর পিছনে কয়েকটি কারণ রয়েছে। প্রথমত, এসপির টিকিট বণ্টনে মুসলিম প্রার্থীদের কম গুরুত্ব দেওয়া। উদাহরণস্বরূপ, ২০২৪ সালে ২৭টি টিকিটের মধ্যে মাত্র ২টি মুসলিম প্রার্থীদের দেওয়া হয়েছিল, যেখানে রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা ২৩%। এটি অনেক মুসলিম নেতার মধ্যে অসন্তোষ সৃষ্টি করেছে। দ্বিতীয়ত, অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিন (এআইএমআইএম)-এর প্রধান আসাদউদ্দিন ওভাইসি উত্তর প্রদেশে তাঁর প্রভাব বাড়াচ্ছেন। ওভাইসি মুসলিমদের মধ্যে একটি বিকল্প শক্তি হিসেবে উঠে আসছেন, যা এসপির ভোটব্যাঙ্কে ফাটল ধরাতে পারে।

এছাড়া, বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি)ও মুসলিম ভোটের দিকে ঝুঁকছে। মায়াবতী মুসলিম প্রার্থীদের বেশি টিকিট দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন বলে খবর। এটি অখিলেশের জন্য আরেকটি চ্যালেঞ্জ। ২০২২ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মুসলিমরা একতরফাভাবে এসপিকে সমর্থন দিলেও দল জিততে পারেনি। এবারও যদি ভোট ভাগ হয়, তবে এসপির জন্য পরিস্থিতি আরও কঠিন হবে।

বিজেপির সুযোগ

বিজেপিও এই সুযোগ হাতছাড়া করছে না। তারা মুসলিম মহিলাদের জন্য তিন তালাক নিষিদ্ধকরণ এবং উন্নয়নমূলক প্রকল্পের মাধ্যমে এই সম্প্রদায়ের একাংশকে আকর্ষণের চেষ্টা করছে। সম্প্রতি কুন্দারকির মতো মুসলিমপ্রধান আসনে বিজেপির জয় এই প্রবণতার ইঙ্গিত দেয়। অখিলেশ অবশ্য এটিকে ‘ইলেকট্রনিক বুথ ক্যাপচারিং’ বলে অভিযোগ করেছেন, কিন্তু এটি তার ভোটব্যাঙ্কের দুর্বলতাও প্রকাশ করে।

অখিলেশের নিজের দলের মধ্যেও অস্থিরতা রয়েছে। তাঁর কাকা শিবপাল যাদবের সঙ্গে দ্বন্দ্ব মুসলিম ও যাদব ভোটারদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। শিবপালের প্রভাব এখনও ইটাওয়া, মৈনপুরী, ফিরোজাবাদের মতো এলাকায় রয়েছে, যেখানে মুসলিম ভোটাররাও তাঁকে সমর্থন করে। শিবপাল যদি আলাদা পথে হাঁটেন, তবে এটি অখিলেশের জন্য বড় ধাক্কা হবে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত 

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করেন, অখিলেশ এখনও মুসলিম ভোটের প্রধান দাবিদার। তাঁর ‘পিডিএ’ (পিছড়া, দলিত, আল্পসংখ্যক) নীতি এই সম্প্রদায়ের মধ্যে আশা জাগিয়েছে। কিন্তু অন্যরা বলছেন, ওভাইসি এবং বিএসপির উত্থান এই ভোট ভাগ করতে পারে। মুসলিম ভোটাররা যদি বিকল্প খুঁজতে শুরু করেন, তবে অখিলেশের হাত থেকে এই ‘মিষ্টি সেমাই’ ছিনিয়ে নিতে পারে অন্য কেউ।

২০২৭ সালের নির্বাচনের আগে অখিলেশের কাছে চ্যালেঞ্জ

২০২৭ সালের নির্বাচনের আগে অখিলেশের কাছে চ্যালেঞ্জ হলো মুসলিম ভোটারদের আস্থা ফিরিয়ে আনা। তিনি যদি টিকিট বণ্টনে ভারসাম্য আনতে না পারেন এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি পূরণে ব্যর্থ হন, তবে এই ভোটব্যাঙ্কে ফাটল আরও গভীর হতে পারে। উত্তর প্রদেশে ১৪৭টি বিধানসভা আসনে মুসলিম ভোটাররা জয়-পরাজয় নির্ধারণ করে। রামপুরে ৪২%, মুরাদাবাদে ৪০%, সাহারানপুরে ৩৮% মুসলিম ভোটার রয়েছে এই শক্তি কার দিকে যাবে, তা এখনও অস্পষ্ট।

অখিলেশের জন্য এখন সময় এসেছে কৌশল পরিবর্তনের। তিনি যদি মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রকৃত উন্নয়নে মনোযোগ দেন এবং তাদের প্রতিনিধিত্ব বাড়ান, তবে এই ভোটের ‘মিষ্টি সেমাই’ তাঁর ঝুলিতেই থাকতে পারে। কিন্তু বিকল্প শক্তির উত্থান এবং দলের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে। রাজনৈতিক ময়দানে এই খেলা এখনও চলছে, এবং শেষ হাসি কে হাসবে, তা সময়ই বলবে।