Paresh Baruah: দুনিয়ায় আছে তিনটি চিন! কোন চিনে লুকিয়ে জঙ্গি পরেশ বড়ুয়া?

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: এই দুনিয়ায় তিনটি চিন! একটি চিন দেশ (China) বাকি দুটি চিন আছে মায়ানমারে। চিন জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মায়ানমারের এই দুটি রাজ্যের নাম চিন (Chin)…

paresh baruah

প্রসেনজিৎ চৌধুরী: এই দুনিয়ায় তিনটি চিন! একটি চিন দেশ (China) বাকি দুটি চিন আছে মায়ানমারে। চিন জনগোষ্ঠীর সংখ্যাগরিষ্ঠ মায়ানমারের এই দুটি রাজ্যের নাম চিন (Chin) ও কাচিন (Kachin)। ইংরাজি লেখা ও উচ্চারণে ভুলের সম্ভাবনা নেই। কিন্তু বাংলা ভাষায় তিন চিনে বিস্তর ভুলের সম্ভাবনা। এই তিন চিনের কোন চিনে আত্মগোপন করে আছে ভারতের শীর্ষ জঙ্গি নেতা তথা আলফা (স্বাধীনতা) সংগঠনের প্রধান (Paresh Baruah) পরেশ বড়ুয়া। (Where is India’s most wanted terrorist leader Paresh Baruah hiding?)

কুড়ি বছর আগের চাঞ্চল্যকর আগ্নেয়াস্ত্র চোরাচালান মামলায় ভারতীয় জঙ্গি নেতা পরেশ বড়ুয়ার ফাঁসির সাজা মকুব বাংলাদেশে। বু়ধবার (১৮ ডিসেম্বর) বাংলাদেশের হাইকোর্ট সে দেশের ‘দশ ট্রাক অস্ত্র’ অস্ত্র মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সকলের শাস্তি কমিয়েছে। গোপন ডেরা থেকে পরেশ বড়ুয়া সেই খবর শুনেছে। অসমে একাধিক নাশকতা, গণহত্যা সংঘটিত করায় অভিযুক্ত পরেশ বড়ুয়া। শুধু ভারত নয় অন্যতম আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদী নেতা হিসেবে পরেশ বড়ুয়া চিহ্নিত।

সম্প্রতি অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মার আহ্বানে আত্মসমর্পণকারী প্রাক্তন আলফা জঙ্গি নেতা-নেত্রীরা দাবি করেন, পরেশ বড়ুয়া ভারত সরকারের সঙ্গে শান্তি বৈঠক করবেন। আত্মসমর্পণকারী আলফা কমান্ডারদের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়। তবে পরেশ বড়ুয়ার অনুপস্থিতিতে এই চুক্তি ‘আই ওয়াশ’ বলে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক শিবির কংগ্রেসসহ বিভিন্ন দলের কটাক্ষ।

Where is India’s most wanted terrorist leader Paresh Baruah hiding?  মোস্ট ওয়ান্টেড পরেশ বড়ুয়া কোন চিনে?

বিংশ শতকের নব্বই দশক থেকে অসমসহ উত্তর পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে স্বশাসিত এলাকার দাবিতে রক্তাক্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। গণহত্যার একের পর এক নজিরে শিহরিত হয়েছিল বিশ্ব। অসমের জঙ্গি নেতা পরেশ বড়ুয়া একুশ শতকের প্রথম দিকে ভুটানের জঙ্গলে ঘাঁটি তৈরি করে। সেই ঘাঁটিতে কেএলও (KLO) সহ একাধিক ভারতীয় জঙ্গি সংগঠন সক্রিয় ছিল। ভারত সরকারের অনুরোধে ভুটান সরকার ‘অপারেশন অল ক্লিয়ার’ চালিয়েছিল। ভুটানি সেনার অভিযানে আলফা প্রধান পরেশ বড়ুয়া, কেএলও প্রধান জীবন সিংহসহ অন্যান্যরা বাংলাদেশ হয়ে মায়ানমারে চলে যায়।

Where is India’s most wanted terrorist leader Paresh Baruah hiding?

মায়ানমারের দুটি রাজ্য চিন (Chin) এবং কাচিন (Kachin) দুর্গম অঞ্চল। একাধিকবার গোয়েন্দা রিপোর্টে বলা হয়েছে জঙ্গি নেতা পরেশ বড়ুয়া মায়ানমারে তার ঘাঁটিতে আছে। কখনো তার ভিডিও ছড়িয়েছে। কখনো রিপোর্ট এসেছে পরেশ বড়ুয়া আছে চিন (China)দেশে। উল্লেখ্য চিন দেশের লাগোয়া মায়ানমারের কাচিন রাজ্য। এসব অঞ্চলেই বারবার পরেশ বড়ুয়ার সক্রিয় উপস্থিতির প্রমাণ এসেছে।

সম্প্রতি কেএলও জঙ্গি নেতা জীবন সিংহ আত্মসমর্পণ করে। তার বিরুদ্ধে পশ্চিমবঙ্গে জঙ্গি হামলা (২০০২ সালে জলপাইগুড়ি ধূপগুড়ি গণহত্যা) চালানোর প্রমাণ আছে। জীবন সিংহ ও পরেশ বড়ুয়া ঘনিষ্ঠ। জীবন অসমের বিজেপি সরকারের কাছে ‘নজরবন্দি’।

ভারত বিরোধী ১০ ট্রাক অস্ত্র মামলা
২০০৪ সালে বাংলাদেশে বিএনপি-জামাত ইসলামি জোট সরকারের আমলে খালেদা জিয়া ছিলেন প্রধানমন্ত্রী। তার সরকারের অভ্যন্তরে সুকৌশলে সংযোগ স্থাপন করেছিল বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আলফা (বর্তমানে আলফা-স্বাধীনতা গোষ্ঠী)। পরিকল্পনা মাফিক চট্টগ্রাম বন্দর থেকে বিপুল পরিমান আগ্নেয়াস্ত্র বাংলাদেশের মধ্যে দিয়ে ভারতের দিকে পাঠানোর ছক করেছিল আলফা জঙ্গি গোষ্ঠী।

চট্টগ্রাম বন্দরে বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে বিশ্ব শিহরিত:

Advertisements

২০০৪  সালের ১লা এপ্রিল বিপুল আগ্নেয়াস্ত্র হস্তান্তর হওয়ার আগেই পর্দা ফাঁস হয়ে যায়। চট্টগ্রাম বন্দরের নিরাপত্তারক্ষীরা আটক করেন বহু পেটি। আগ্নেয়াস্ত্র বোঝাই সেই পেটিগুলি নিয়ে যেতে ১০টি ট্রাক লেগেছিল। এই কারনে নাম “দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা”। বিপুল পরিমাণ সেই চোরাই আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পর ঘটনাস্থলে গিয়ে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুতফুজ্জামান বাবর। তবে কাউকেই ধরা যায়নি। প্রশ্ন উঠতে থাকে বিএনপি সরকারের ভূমিকা নিয়েই।

শেখ হাসিনার আমলে পরেশ বড়ুয়ার মৃত্যুদণ্ড

চাঞ্চল্যকর এই মামলা চলাকালীন খালেদা জিয়া নেতৃত্বাধীন বিএনপি জোট সরকারের পতন হয়। বাংলাদেশের ক্ষমতায় এসেছিল শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ জোট সরকার। হাসিনা সরকারের আমলে  ২০০৫ সালের ৬ জুলাই দশ ট্রাক অস্ত্র মামলার বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০১৪ সালের ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি মামলার রায়ে বাংলাদেশের প্রাক্তন শিল্পমন্ত্রী ও জামাত ইসলামির আমির মতিউর রহমান নিজামী, প্রাক্তন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরসহ ১৪ জনকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা শোনানো হয়েছিল। নিজামীর ফাঁসি হয় অন্য একটি দেশদ্রোহ মামলায়।

হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত ও জঙ্গি পরেশ বড়ুয়ার ফাঁসি রদ

২০২৪ সালের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণবিক্ষোভে শেখ হাসিনার টানা পনের বছরের সরকারের পতন হয়। হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়ে নোবেলজয়ী মুহাম্মদ ইউনূস এখন বাংলাদেশের ক্ষমতায়। এই সরকারের আমলেই দশ ট্রাক অস্ত্র মামলায় পরেশ বড়ুয়া, লুৎফুজ্জামান বাবরের ফাঁসির সাজা মকুব। তবে বড়ুয়া বাংলাদেশে যাবজ্জীবন আসামী হিসেবে তালিকাভুক্ত। আর এই মামলায় বাবর খালাস!

India’s most wanted terrorist leader Paresh Baruah hiding in Myanmar’s Kachin State or China? What does the intelligence report say?