নয়াদিল্লি: ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থায় একটি চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে দেশজুড়ে প্রায় ৮,০০০ স্কুলে একটিও ছাত্র-ছাত্রী নেই, তবু সেখানে ২০,৮১৭ শিক্ষক কর্মরত! এই অসম্ভব পরিস্থিতির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গ। যেখানে ৩,৮১২টি স্কুলে ১৭,৯৬৫ শিক্ষক চাকরি করছেন, কিন্তু সেই স্কুল গুলিতে নেই একটিও ছাত্র।
এছাড়া, দেশে ১ লক্ষেরও বেশি একক-শিক্ষক স্কুল রয়েছে, যেখানে ৩৩ লক্ষেরও বেশি ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষা গ্রহণ করছে। শিক্ষা মন্ত্রকের এই তথ্য শুধুমাত্র অর্থনৈতিক অপচয়ের ছবি আঁকছে না, বরং শিক্ষার মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লড়াইয়ে ব্যবস্থাগত ব্যর্থতারও প্রমাণ দিচ্ছে।শিক্ষা মন্ত্রকের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান অনুসারে, ৭,৯৯৩টি স্কুলে কোনো ছাত্রী নেই, যা গত বছরের ১২,৯৫৪টির তুলনায় কিছুটা কম।
Honda CB1000 GT-র ডিজাইন ফাঁস, নতুন ট্যুরিং বাইক কেমন হবে?
কিন্তু এই হ্রাস সত্ত্বেও পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। পশ্চিমবঙ্গ এখানে সর্বোচ্চ স্থানে। যা মোট শূন্য ছাত্রীয় স্কুলের প্রায় ৪৮ শতাংশ এবং শিক্ষকের ৮৬ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করে। দ্বিতীয় স্থানে তেলেঙ্গানা, যেখানে ২,২৪৫টি স্কুলে ১,০১৬ শিক্ষক কর্মরত।
তারপর মধ্যপ্রদেশে ৪৬৩টি স্কুলে ২২৩ শিক্ষক। অন্যদিকে, হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, গোয়া, আসাম, হিমাচল প্রদেশ, ছত্তিশগড়, নাগাল্যান্ড, সিক্কিম এবং ত্রিপুরায় এমন কোনো স্কুল নেই। ডেলি, পুডুচেরি, লাক্ষাদ্বীপসহ কয়েকটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলও এই তালিকা থেকে মুক্ত।
এই শূন্য ছাত্রীয় স্কুলগুলোর কারণ কী? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গ্রামীণ এলাকায় জনসংখ্যা হ্রাস, বেসরকারি স্কুলের প্রসার এবং পরিকাঠামোগত সমস্যা এর পিছনে প্রধান ভূমিকা পালন করছে। কিন্তু আরও গুরুতর বিষয় হলো, এই স্কুলগুলোতে শিক্ষকরা কী করছেন? অনেক ক্ষেত্রে তারা অন্যান্য স্কুলে স্থানান্তরিত হন না, বেতন পান এবং কাগজে-কলমে স্কুল চালু বলে দেখানো হয়।
এতে সরকারি কোষাগারে লক্ষ লক্ষ টাকা অপচয় হচ্ছে, যা শিক্ষার মান উন্নয়নে ব্যবহার করা যেতে পারত। একজন শিক্ষা বিশ্লেষক বললেন, “এটি শুধু অর্থের অপচয় নয়, শিক্ষকদের মনোবলও ভাঙছে। খালি ক্লাসরুমে বসে থাকা কোনো শিক্ষকের স্বপ্ন নয়।”এই সমস্যার সঙ্গে জড়িত আরেকটি চিন্তাজনক দিক হলো একক-শিক্ষক স্কুল। ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে ১,১০,৯৭১টি এমন স্কুল রয়েছে, যা গত বছরের ১,১৮,১৯০টির তুলনায় ৬ শতাংশ কম।
এসব স্কুলে ৩৩ লক্ষেরও বেশি ছাত্রী পড়াশোনা করে। স্কুলের সংখ্যায় আন্ধ্রপ্রদেশ সর্বোচ্চ, তারপর উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, মহারাষ্ট্র, কর্ণাটক এবং লাক্ষাদ্বীপ। কিন্তু ছাত্রী সংখ্যায় উত্তরপ্রদেশ প্রথম, তারপর ঝাড়খণ্ড, পশ্চিমবঙ্গ এবং মধ্যপ্রদেশ।
একজন শিক্ষক কীভাবে একসঙ্গে সব ক্লাস পরিচালনা করবেন? ফলে শিক্ষার মান নষ্ট হচ্ছে, বিশেষ করে প্রাথমিক স্তরে। গ্রামের ছেলেমেয়েরা একজন শিক্ষকের উপর নির্ভর করে পড়তে বাধ্য, যা তাদের ভবিষ্যতকে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।
শিক্ষা মন্ত্রক এই সমস্যা মোকাবিলায় রাজ্যগুলোকে পরামর্শ দিয়েছে। স্কুল মার্জারের মাধ্যমে সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করতে বলা হয়েছে, যাতে পরিকাঠামো এবং শিক্ষকদের সঠিকভাবে বিতরণ করা যায়। উদাহরণস্বরূপ, উত্তরপ্রদেশ মাধ্যমিক শিক্ষা পরিষদ তিন বছর ধরে শূন্য ছাত্রীয় স্কুলের স্বীকৃতি বাতিল করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
কিন্তু রাজ্যের দায়িত্ব এখানে সবচেয়ে বেশি। পশ্চিমবঙ্গের মতো রাজ্যে এই সমস্যা কেন এত গভীর? স্থানীয় শাসকরা বলছেন, জনসংখ্যা পরিবর্তন এবং শহরায়ণের কারণে এমন হচ্ছে, কিন্তু সমালোচকরা মনে করেন এটি প্রশাসনিক অবহেলা এবং রাজনৈতিক স্বার্থের ফল।


