বিহারে সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর এবার পশ্চিমবঙ্গেও শুরু হতে চলেছে স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) বা বিশেষ ভোটার তালিকা পুনর্বিবেচনা প্রক্রিয়া। নির্বাচন কমিশনের (Election Commission) নির্দেশ অনুসারে, আগামী ১ নভেম্বর থেকে রাজ্যে এই কাজ শুরু হতে পারে বলে প্রশাসনিক সূত্রে জানা গিয়েছে। ইতিমধ্যেই রাজ্যের সমস্ত জেলা নির্বাচন আধিকারিক (DEO) ও জেলাশাসকদের (DM) সতর্ক থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, কারণ যে কোনও সময় আনুষ্ঠানিকভাবে এই প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (CEO) সমস্ত জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন, SIR সম্পর্কিত সমস্ত প্রস্তুতি এখনই শুরু করতে হবে এবং বাকি কাজ দ্রুত শেষ করতে হবে। নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠকের পর রাজ্যের CEO সমস্ত জেলাশাসকদের উদ্দেশ্যে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।
সূত্রের খবর, আজ থেকেই মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর ২৪ ঘণ্টা খোলা থাকবে। SIR সংক্রান্ত যাঁরা কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁদের সর্বক্ষণ অফিসে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে। প্রত্যেক জেলা নির্বাচন আধিকারিক ও ভোটার তালিকা রেজিস্ট্রেশন আধিকারিকদের (ERO) অফিসে SIR হেল্প ডেস্ক স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে সাধারণ মানুষ ভোটার তালিকা সম্পর্কিত তথ্য সহজে জানতে পারেন।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণার পরদিনই বহুদলীয় বৈঠক আহ্বান করা হবে। রাজ্য স্তরে মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক এবং জেলা স্তরে জেলা শাসকরা এই বৈঠকের নেতৃত্ব দেবেন। এই বৈঠকের সমস্ত সিদ্ধান্ত ও রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনের কাছে পাঠাতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের সূত্র জানিয়েছে, এই নির্দেশাবলি ইতিমধ্যেই সমস্ত জেলার প্রশাসনের কাছে পৌঁছে গেছে। আগেই নির্বাচন কমিশনের প্রধান জ্ঞানেশ কুমার জানিয়েছিলেন, “দেশের প্রতিটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভোটার তালিকার বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য একটি বিশেষ ইনটেনসিভ রিভিশন (SIR) চালু করা হবে। এটি একটি চলমান জাতীয় প্রকল্প।”
বিহারে এই SIR প্রক্রিয়া চালিয়ে ইতিমধ্যেই বড় পরিবর্তন আনা হয়েছে। সেখানে প্রায় ৬৯ লক্ষ ভোটারের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে — যাঁরা মৃত, অবৈধ অভিবাসী বা একাধিক ভোটার কার্ডধারী হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন। সেই পরেই বিহারের মোট ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭.৪৩ কোটি।
বিহারের এই পদক্ষেপ নিয়ে বিরোধীরা তীব্র সমালোচনা করলেও নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে, উদ্দেশ্য ছিল “ভোটার তালিকার পরিশোধন” (purification of voter list), যাতে সঠিক ও বৈধ ভোটাররাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, বিহারের মতো বাংলাতেও এই প্রক্রিয়া রাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত, রাজ্যে আগামী বছরে বিধানসভা উপনির্বাচন ও স্থানীয় নির্বাচন সামনে থাকায় ভোটার তালিকার সংশোধন রাজনৈতিক দলগুলির কৌশলেও প্রভাব ফেলবে।
নির্বাচন কমিশনের দাবি, এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং প্রযুক্তিনির্ভর। ভোটার তালিকায় নাম তোলার, সংশোধনের বা অপসারণের সমস্ত কাজ অনলাইন ও অফলাইন উভয় মাধ্যমেই করা যাবে। এর ফলে রাজ্যের ভোটার তথ্য আরও নির্ভুল ও হালনাগাদ হবে বলে মনে করা হচ্ছে।


