West Bengal Poverty Rate: দেশে দারিদ্র্যের হারে বাংলার স্থান জানলে অবাক হবেন

ভারতে দারিদ্র্যের হার নিয়ে সাম্প্রতিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) অবস্থা বেশ চমকপ্রদ। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গের…

West Bengal Poverty

short-samachar

ভারতে দারিদ্র্যের হার নিয়ে সাম্প্রতিক রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে পশ্চিমবঙ্গের (West Bengal) অবস্থা বেশ চমকপ্রদ। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের দারিদ্র্যের পরিসংখ্যান পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, পশ্চিমবঙ্গের দারিদ্র্যের হার ৬.০%। এটি ভারতের অন্যান্য কিছু বড় রাজ্যের তুলনায় বেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে।

   

বাংলার অবস্থা ও তুলনামূলক বিশ্লেষণ
রঙ্গরাজন কমিটির প্রকাশিত এই রিপোর্ট অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গের দারিদ্র্যের হার ৬%। এর ফলে রাজ্যটি মধ্যপ্রদেশ (৬.০%) এবং মহারাষ্ট্রের (৫.৯%) মতো রাজ্যের সমান বা কাছাকাছি অবস্থানে রয়েছে। তবে বাংলার তুলনায় কিছু রাজ্যের দারিদ্র্যের হার অনেক বেশি, যেমন ঝাড়খণ্ড (১২.৫%), ছত্তিশগড় (১১.৩%) এবং মণিপুর (৭.৯%)।

অন্যদিকে, দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বাংলার দারিদ্র্যের হার যথেষ্ট কম। বিশেষ করে, রাজস্থান (৪.৮%), বিহার (৪.৪%), আসাম (৩.৮%), উত্তরপ্রদেশ (৩.৫%) এবং গুজরাট (২.৭%) এর মতো রাজ্যগুলো পশ্চিমবঙ্গের চেয়ে আরও কম দারিদ্র্যের হার ধরে রেখেছে।

পশ্চিমবঙ্গের দারিদ্র্য হ্রাসের কারণ
গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার দারিদ্র্য হ্রাসে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে, যা এই ইতিবাচক পরিবর্তনের মূল কারণ বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে, সামাজিক কল্যাণমূলক প্রকল্প, খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূচি এবং কৃষকদের জন্য বিভিন্ন ভর্তুকি ও ঋণ সুবিধা বাংলার দারিদ্র্য কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

১. খাদ্য সুরক্ষা প্রকল্প:
পশ্চিমবঙ্গে সরকার পরিচালিত ‘খাদ্যসাথী’ প্রকল্পের মাধ্যমে রাজ্যের ৯০% জনগণ স্বল্পমূল্যে রেশন পেয়ে থাকেন। এই প্রকল্প দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হয়েছে, যা দারিদ্র্যের হার কমানোর ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে।

২. কৃষি ও শ্রমিক সহায়তা:
কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ভর্তুকি, কৃষি ঋণ মুকুব এবং ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্প চালু করা হয়েছে। রাজ্যের কৃষকদের আর্থিক সহায়তা প্রদান ও উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে কার্যকর উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া ‘১০০ দিনের কাজ’ প্রকল্পের আওতায় গ্রামীণ শ্রমিকদের কর্মসংস্থান সুনিশ্চিত করা হয়েছে।

৩. নারী ও শিশু কল্যাণ:
মেয়েদের শিক্ষা ও আর্থিক সুরক্ষার জন্য ‘কন্যাশ্রী’ ও ‘রূপশ্রী’ প্রকল্প কার্যকর ভূমিকা পালন করেছে। এছাড়া, নারীদের স্বনির্ভর করার জন্য স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মাধ্যমে ঋণ সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে, যা তাদের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়নে সাহায্য করেছে।

অন্য রাজ্যের তুলনায় কোথায় দাঁড়িয়ে বাংলা?
ভারতের ২৮টি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের দারিদ্র্যের হার বেশ মধ্যম স্তরে অবস্থান করছে। তবে এটি এখনও তামিলনাড়ু (০.৮%), হরিয়ানা (০.৯%), কেরালা (১.০%), কর্ণাটক (১.৮%) ও অন্ধ্রপ্রদেশ (১.৮%) এর মতো রাজ্যগুলোর তুলনায় বেশি। সবচেয়ে কম দারিদ্র্যের হার দেখা গেছে তেলেঙ্গানা (০.২%), গোয়া (০.১%) এবং হিমাচল প্রদেশ (০.১%)-এ।

ভবিষ্যতে দারিদ্র্য আরও কমানোর জন্য করণীয়
যদিও পশ্চিমবঙ্গের দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, তবুও আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, শিল্পক্ষেত্রে আরও বিনিয়োগ, কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার উন্নতি করলে বাংলার দারিদ্র্যের হার আরও কমতে পারে।

রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই তথ্যপ্রযুক্তি, পর্যটন ও কৃষিভিত্তিক শিল্পে বিনিয়োগের উপর জোর দিচ্ছে। যদি এই প্রচেষ্টা সফল হয়, তবে আগামী কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গ দারিদ্র্য হ্রাসে আরও ভালো অবস্থানে পৌঁছাতে পারে।

ভারতের দারিদ্র্য হারের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গ তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে রয়েছে, তবে আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে। সরকার যদি সঠিক নীতিগুলো কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে আগামী দিনে বাংলার দারিদ্র্যের হার আরও কমবে এবং রাজ্যটি দেশের উন্নত রাজ্যগুলোর কাতারে যুক্ত হতে পারবে।