Weather Update: ভারতের রাজধানী দিল্লিতে শনিবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে, যা ঋতুভিত্তিক গড়ের তুলনায় ৪.১ ডিগ্রি বেশি। ভারতীয় আবহাওয়া বিভাগ (আইএমডি) জানিয়েছে, এই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে অনেকটাই উষ্ণ আবহাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছে। এদিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৮.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এবং আর্দ্রতার মাত্রা ৫০ থেকে ৬২ শতাংশের মধ্যে ওঠানামা করেছে।
শুক্রবার দিল্লিতে এই বছরের সবচেয়ে উষ্ণতম দিন রেকর্ড করা হয়েছিল। সেদিন তাপমাত্রা ৩৬.২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছায়, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৭.৩ ডিগ্রি বেশি। আইএমডি-র তথ্য অনুযায়ী, এই তাপমাত্রা মার্চ মাসের জন্য অস্বাভাবিকভাবে বেশি। গত কয়েক দিনে দিল্লির আবহাওয়া উল্লেখযোগ্যভাবে পরিবর্তিত হয়েছে, এবং গ্রীষ্মের আগমন যেন সময়ের আগেই টের পাওয়া যাচ্ছে।
মার্চ মাস সাধারণত দিল্লির জন্য শীত থেকে গ্রীষ্মে উত্তরণের সময় হিসেবে পরিচিত। এই সময়ে তাপমাত্রা সাধারণত ২৮ থেকে ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে। কিন্তু এবার তাপমাত্রা এতটা বেশি হওয়ায় আবহাওয়াবিদরা উদ্বিগ্ন। আইএমডি-র একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, উত্তর-পশ্চিম ভারতের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া উষ্ণ বাতাস এবং আকাশে মেঘের অনুপস্থিতি এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রধান কারণ। তিনি আরও বলেন, আগামী কয়েক দিনে তাপমাত্রা আরও কিছুটা বাড়তে পারে, যদিও রাতের দিকে সামান্য স্বস্তি মিলতে পারে।
দিল্লির বাসিন্দারা এই আচমকা গরমে হতাশ। শহরের রাস্তায় দিনের বেলা লোকজনের ভিড় কমে গেছে, এবং অনেকেই বাড়ির ভিতরে থাকতে পছন্দ করছেন। স্থানীয় বাসিন্দা রমেশ কুমার বলেন, “মার্চে এত গরম পড়বে ভাবিনি। এখনই যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে এপ্রিল-মে মাসে কী হবে?” শহরের বিভিন্ন এলাকায় পানীয় জলের চাহিদা বেড়েছে, এবং বাজারে ঠান্ডা পানীয় ও আইসক্রিমের বিক্রি বেড়ে গেছে।
আর্দ্রতার মাত্রা ৫০ থেকে ৬২ শতাংশের মধ্যে থাকায় গরমের অনুভূতি আরও বেড়েছে। দিনের বেলা রোদের তেজ এবং আর্দ্রতার সমন্বয়ে বাইরে থাকা কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে রাতের দিকে তাপমাত্রা ১৮.৭ ডিগ্রিতে নেমে আসায় কিছুটা স্বস্তি মিলছে। আইএমডি জানিয়েছে, আগামী দিনগুলোতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১৮ থেকে ২০ ডিগ্রির মধ্যে থাকতে পারে, যা রাতের জন্য সহনীয়।
এই অস্বাভাবিক তাপমাত্রা শুধু দিল্লির জনজীবনেই প্রভাব ফেলছে না, পরিবেশের উপরও এর ছাপ পড়ছে। শহরের বায়ু দূষণের মাত্রা এই গরমে আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। আইএমডি-র পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী সপ্তাহে হালকা বৃষ্টি বা ঝড় হতে পারে, যা তাপমাত্রা কিছুটা কমাতে সাহায্য করবে। তবে এই বৃষ্টি খুব বেশি তাৎপর্যপূর্ণ হবে না বলে মনে করা হচ্ছে।
দিল্লির আবহাওয়ার এই পরিবর্তন জলবায়ু পরিবর্তনের একটি ইঙ্গিত হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। গত কয়েক বছরে ভারতের বিভিন্ন শহরে ঋতুভিত্তিক তাপমাত্রার ধরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা গেছে। মার্চে এত বেশি তাপমাত্রা শীতের সময়কাল কমে যাওয়া এবং গ্রীষ্মের তীব্রতা বৃদ্ধির দিকে ইঙ্গিত করে। আবহাওয়াবিদদের একাংশ বলছেন, এই ধরনের আবহাওয়ার জন্য মানুষের কার্যকলাপ এবং গ্লোবাল ওয়ার্মিং দায়ী।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা এই গরমে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। বিশেষ করে বয়স্ক মানুষ এবং শিশুদের জন্য পর্যাপ্ত জল পান এবং রোদে বেশি সময় না থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। দিল্লির হাসপাতালগুলোতে গরমজনিত অসুস্থতার কারণে রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আবহাওয়ার এই পরিস্থিতি দিল্লির দৈনন্দিন জীবনযাত্রায়ও প্রভাব ফেলছে। স্কুলগুলোতে শিশুদের জন্য সকালের ক্লাসের সময় পরিবর্তন করা হচ্ছে, এবং অনেক অফিসে কর্মীদের বাড়ি থেকে কাজ করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। শহরের ট্রাফিকও দিনের বেলা কিছুটা কমেছে, কারণ লোকজন দুপুরের তীব্র রোদ এড়াতে চাইছে।
দিল্লির এই উষ্ণ আবহাওয়া আগামী দিনে আরও তীব্র হবে নাকি স্বস্তি আনবে বৃষ্টি, তা নিয়ে আবহাওয়া বিভাগের উপর নজর রাখছে শহরবাসী। তবে এটা স্পষ্ট যে, এই মার্চ মাস দিল্লির জন্য স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি গরম হয়ে উঠেছে।