গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বাড়বে, এপ্রিলে স্বাভাবিক বৃষ্টি

Weather Forecast: ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) সোমবার জানিয়েছে, ২০২৫ সালের গরম আবহাওয়ার মরসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার…

west-bengal-kolkata-weather-update-temperature-to-rise-in-south-bengal-no-rain-expected

Weather Forecast: ভারতের আবহাওয়া দপ্তর (আইএমডি) সোমবার জানিয়েছে, ২০২৫ সালের গরম আবহাওয়ার মরসুমে (এপ্রিল থেকে জুন) দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, পশ্চিম উপদ্বীপীয় ভারতের কিছু অংশ এবং পূর্ব-মধ্য ও পূর্ব ভারতের বিচ্ছিন্ন এলাকায় স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে বলে আইএমডি-র প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

   

এই মরসুমে দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সর্বনিম্ন তাপমাত্রাও থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু প্রান্তীয় এলাকায় স্বাভাবিক সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে বলে জানিয়েছে আইএমডি।

Advertisements

এপ্রিল ২০২৫-এর তাপমাত্রার পূর্বাভাস Weather Forecast

এপ্রিল মাসের জন্য আইএমডি জানিয়েছে, দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে, চরম দক্ষিণ উপদ্বীপীয় ভারত এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের কিছু অংশে স্বাভাবিক সর্বোচ্চ তাপমাত্রা থাকতে পারে। এছাড়া, এপ্রিলে দেশের বেশিরভাগ এলাকায় স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। শুধুমাত্র উত্তর-পশ্চিম এবং উত্তর-পূর্ব ভারতের কিছু বিচ্ছিন্ন পকেটে স্বাভাবিক থেকে কম সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকতে পারে।

তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা

এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে, উত্তর ও পূর্ব উপদ্বীপ, মধ্য ভারত, পূর্ব ভারত এবং উত্তর-পশ্চিম ভারতের সমভূমি অঞ্চলে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি তাপপ্রবাহের দিন থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এপ্রিল মাসে বিশেষ করে পূর্ব ও মধ্য ভারত এবং এর সংলগ্ন উপদ্বীপীয় অঞ্চলে তাপপ্রবাহের দিনের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। এই তাপপ্রবাহ জনজীবনে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে শিশু, বয়স্ক এবং শ্রমজীবী মানুষদের জন্য।

এপ্রিলে বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস

এপ্রিল ২০২৫-এ সারা দেশে গড় বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, যা দীর্ঘমেয়াদী গড়ের (লং পিরিয়ড অ্যাভারেজ) ৮৮-১১২ শতাংশ হতে পারে। উত্তর-পশ্চিম ভারত, উপদ্বীপীয় ভারত, উত্তর-পূর্ব ভারত এবং পশ্চিম-মধ্য ভারতের কিছু অংশে স্বাভাবিক থেকে বেশি বৃষ্টিপাত হতে পারে। তবে, দেশের বাকি অংশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।

পশ্চিমবঙ্গের সম্ভাব্য পরিস্থিতি

পশ্চিমবঙ্গের কথা বিবেচনা করলে, এপ্রিলে তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি থাকার সম্ভাবনা রয়েছে, বিশেষ করে দক্ষিণবঙ্গের জেলাগুলোতে। উত্তরবঙ্গের কিছু অংশে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিক বা তার চেয়ে কম হতে পারে। বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে, উত্তরবঙ্গে স্বাভাবিক থেকে বেশি বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও, দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি কিছুটা কম হতে পারে। তবে, এই পূর্বাভাস আরও নির্দিষ্ট হবে যখন আঞ্চলিক আবহাওয়ার তথ্য আপডেট হবে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণ

আইএমডি-র পূর্বাভাস অনুসারে, এই বছর গ্রীষ্মে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পেছনে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তন এবং এল নিনোর প্রভাব থাকতে পারে। গত কয়েক বছরে ভারতে গ্রীষ্মকালীন তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা পরিবেশবিদদের উদ্বেগ বাড়িয়েছে। তাপপ্রবাহের দিন বৃদ্ধি কৃষি, জলসম্পদ এবং জনস্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

জনজীবনে প্রভাব

এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা শহর ও গ্রামীণ উভয় এলাকায় জীবনযাত্রাকে কঠিন করে তুলতে পারে। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষ, যারা দিনের বেশিরভাগ সময় বাইরে কাজ করেন, তাদের জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাপপ্রবাহের কারণে হিটস্ট্রোক, ডিহাইড্রেশন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্য সমস্যার ঝুঁকি বাড়তে পারে। শিশু এবং বয়স্কদের জন্যও এই সময়ে বিশেষ সতর্কতা প্রয়োজন।

সরকারি প্রস্তুতি

আইএমডি-র এই পূর্বাভাসের পর সরকার এবং স্থানীয় প্রশাসনের উচিত আগাম প্রস্তুতি নেওয়া। তাপপ্রবাহ মোকাবিলায় জনসচেতনতা বাড়ানো, পানীয় জলের ব্যবস্থা করা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা প্রস্তুত রাখা গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমবঙ্গ সরকার ইতিমধ্যে গত বছরগুলোতে তাপপ্রবাহের সময় জনগণের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে, যেমন ছায়ার ব্যবস্থা, জল বিতরণ এবং স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বিশেষ ইউনিট স্থাপন। এই বছরও এই ধরনের উদ্যোগ জোরদার করা প্রয়োজন।

কৃষির উপর প্রভাব

এপ্রিলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত কৃষকদের জন্য কিছুটা স্বস্তির খবর হতে পারে। তবে, যেসব অঞ্চলে বৃষ্টি কম হবে, সেখানে সেচের উপর নির্ভরতা বাড়তে পারে। তাপমাত্রা বৃদ্ধি ফসলের উৎপাদনেও প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে ধান এবং গমের মতো ফসলের ক্ষেত্রে। কৃষি বিশেষজ্ঞরা পরামর্শ দিয়েছেন, কৃষকদের উচিত তাপ-সহনশীল ফসল বেছে নেওয়া এবং জল সংরক্ষণের কৌশল অবলম্বন করা।

পরিবেশবিদদের উদ্বেগ

পরিবেশবিদরা মনে করছেন, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং তাপপ্রবাহের এই প্রবণতা জলবায়ু পরিবর্তনের ফল। গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমানো এবং বৃক্ষরোপণ বাড়ানোর মতো পদক্ষেপ না নিলে ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। ভারতের মতো জনবহুল দেশে এর প্রভাব আরও ব্যাপক হবে বলে তারা সতর্ক করেছেন।

সাধারণ মানুষের জন্য পরামর্শ

আইএমডি-র এই পূর্বাভাসের আলোকে সাধারণ মানুষের উচিত গ্রীষ্মে সতর্ক থাকা। প্রচুর পানি পান করা, হালকা পোশাক পরা, দিনের উত্তপ্ত সময়ে বাইরে না যাওয়া এবং ছায়ায় থাকার চেষ্টা করা গুরুত্বপূর্ণ। তাপপ্রবাহের সময় শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে শীতল পানীয় এবং ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আইএমডি-র এই পূর্বাভাস থেকে স্পষ্ট, ২০২৫ সালের গ্রীষ্মকাল ভারতের জন্য একটি চ্যালেঞ্জিং সময় হতে চলেছে। এপ্রিলে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত কিছুটা স্বস্তি দিলেও, তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং তাপপ্রবাহের সম্ভাবনা সবাইকে সতর্ক থাকতে বাধ্য করছে। সরকার, কৃষক এবং সাধারণ মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা সম্ভব। আবহাওয়ার এই প্রবণতা আমাদের জলবায়ু পরিবর্তনের দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব সম্পর্কে আরও সচেতন হওয়ার বার্তা দিচ্ছে।