বিহার বিধানসভা নির্বাচনকে (Bihar Election 2025) কেন্দ্র করে রাজনৈতিক পারদ চড়তে শুরু করেছে। কংগ্রেস সাংসদ ও লোকসভার বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী শনিবার স্পষ্ট ভাষায় জানালেন, আগামী নির্বাচনে বিজেপি কোনোভাবেই ভোট “চুরি” করতে পারবে না। তিনি বলেন, “তারা মহারাষ্ট্রে নির্বাচন চুরি করেছে, হরিয়ানায় করেছে, লোকসভায়ও ভোট চুরি করেছে। কিন্তু বিহারে তা হতে দেওয়া হবে না।”
শনিবার ভোজপুর জেলার আড়ায় একটি জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে এই অভিযোগ আনেন। তাঁর নেতৃত্বে চলা ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ বর্তমানে বিহারের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে ভোটারদের সচেতন করার কাজ করছে।
আড়ায় সভার আগে রাহুল গান্ধীর কনভয়ে কালো পতাকা নিয়ে বিক্ষোভ দেখায় ভারতীয় জনতা যুব মোর্চার (বিজেওয়াইএম) কর্মীরা। অভিযোগ, দারভাঙ্গার মহাগঠবন্ধন সভায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও প্রয়াত তাঁর মায়ের বিরুদ্ধে কটূক্তি করার কারণে তাঁরা ক্ষুব্ধ। তবে পাল্টা উত্তেজিত না হয়ে রাহুল গান্ধী তাঁদের মিষ্টি (ক্যান্ডি) খাইয়ে শান্ত করার চেষ্টা করেন। এই দৃশ্য সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
রাহুল গান্ধীর পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল আরজেডি-র নেতা তেজস্বী যাদবও বিজেপি ও এনডিএ-র বিরুদ্ধে তোপ দাগেন। তিনি বলেন, “ভোটার অধিকার যাত্রা বিজেপি-নেতৃত্বাধীন এনডিএ-কে নাড়া দিয়েছে। শাসক জোট আতঙ্কে আছে। ওরা সবরকম চেষ্টা করছে, কিন্তু বিহারে আর ফিরে আসতে পারবে না।” তেজস্বীর দাবি, এই যাত্রার মাধ্যমেই সাধারণ মানুষ বুঝতে পারছেন তাঁদের ভোটাধিকার রক্ষা করা কতটা জরুরি।
‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদব ও মহাগঠবন্ধনের অন্যান্য নেতাদের নেতৃত্বে ২০টি জেলা জুড়ে প্রায় ১,৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করছে। যাত্রা শেষ হবে ১লা সেপ্টেম্বর, রাজ্যের রাজধানী পাটনায়। তবে পাটনা প্রশাসন সমাপনী সমাবেশের অনুমতি না দেওয়ায় এবার কোনো বৃহৎ সমাবেশ হবে না। পরিবর্তে শীর্ষ নেতারা শহরের বিভিন্ন জায়গায় জনগণের উদ্দেশে বক্তব্য রাখবেন।
শনিবার ছিল এই যাত্রার শেষ-পূর্বদিন। ওইদিন ছপরা (সারণ) এবং আড়া (ভোজপুর) দিয়ে যাত্রা এগোয়। প্রতিটি জায়গায় বিরোধী জোটের কর্মীরা ব্যাপক সাড়া দিয়েছেন।
বিহারের মাটিতে মহাগঠবন্ধনের শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে সমাজবাদী পার্টির সভাপতি অখিলেশ যাদবও এই যাত্রায় যোগ দিয়েছেন। শুক্রবারই তিনি পাটনায় পৌঁছন। শনিবার তিনি বলেন, “নির্বাচনী তালিকা পুনর্বিবেচনার নামে বিজেপির ‘জুগাড় কমিশন’ হয়ে উঠেছে নির্বাচন কমিশন। আমি বিহারের মানুষকে অভিনন্দন জানাই যে তাঁরা এই যাত্রাকে সমর্থন করেছেন। আজ গোটা দেশ বিহারের আওয়াজ শুনছে।” অখিলেশের মতে, সংবিধানে প্রদত্ত অধিকারকে বিজেপি বারবার খর্ব করেছে। এবার বিহারের মানুষই তার জবাব দেবে।
বিরোধীরা অভিযোগ তুলেছে, ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় পুনর্বিবেচনা (Special Intensive Revision – SIR) প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ভোটারদের নাম কেটে দেওয়া হচ্ছে। তাদের দাবি, এটি আসন্ন নির্বাচনে কারচুপির পথ প্রশস্ত করছে। এই কারণে তারা নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।
অখিলেশ যাদব সরাসরি নির্বাচন কমিশনকে বিজেপির হাতিয়ার আখ্যা দিয়ে বলেন, “এই কমিশন আসলে এখন ‘জুগাড় কমিশন’। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে আমাদের একজোট হতে হবে।”
বিজেপি অবশ্য বিরোধীদের এই সমস্ত অভিযোগকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছে। তাদের দাবি, মহাগঠবন্ধন আসন্ন পরাজয় আঁচ করেই নির্বাচন কমিশনকে আক্রমণ করছে। বিজেপি নেতাদের মতে, উন্নয়ন ও সুশাসনের ভিত্তিতেই তারা আবারও ভোটে জিতবে।
উল্লেখযোগ্য, উচ্চ ঝুঁকির এই বিহার বিধানসভা নির্বাচন এ বছরের শেষের দিকে অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকলেও এখনো আনুষ্ঠানিক সূচি ঘোষণা করেনি নির্বাচন কমিশন। তবে সব রাজনৈতিক দলই এখন থেকেই প্রস্তুতি শুরু করেছে। এনডিএ একদিকে তাদের সাফল্যের খতিয়ান তুলে ধরতে চাইছে, অন্যদিকে মহাগঠবন্ধন ভোটারদের কাছে ‘ভোট চুরির’ অভিযোগ ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্নে জনমত গড়ে তুলতে সচেষ্ট।
রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, রাহুল গান্ধীর এই যাত্রা কেবল বিহারের জন্য নয়, সারা দেশের বিরোধী রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ইঙ্গিত বহন করছে। ভোটাধিকার রক্ষার দাবিকে সামনে রেখে বিরোধীরা জাতীয় স্তরে বিজেপিকে চাপে ফেলতে চাইছে। বিশেষত লোকসভা নির্বাচনের পর বিরোধীরা যেখানে ফলাফল নিয়ে একাধিক অভিযোগ তুলেছিল, সেই প্রেক্ষাপটে বিহার নির্বাচন একটি লিটমাস টেস্ট হতে চলেছে।
অন্যদিকে, বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব মনে করছে, বিরোধীরা শুধুই ইস্যুভিত্তিক প্রচার করছে, বাস্তব উন্নয়নকাজের কোনো বিকল্প তাদের হাতে নেই। এই দ্বন্দ্বই আগামী দিনে রাজ্যের ভোটযুদ্ধকে আরও তীব্র করবে।
সবমিলিয়ে বলা যায়, ‘ভোটার অধিকার যাত্রা’ ঘিরে বিহারের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। রাহুল গান্ধী, তেজস্বী যাদব ও অখিলেশ যাদবের নেতৃত্বে বিরোধীরা যে একজোট হয়ে বিজেপিকে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিচ্ছে, তা এখন পরিষ্কার। আসন্ন নির্বাচন সত্যিই ভোটাধিকার রক্ষার লড়াই হয়ে উঠবে কিনা, তা সময়ই বলবে। তবে এই যাত্রা নিঃসন্দেহে মহাগঠবন্ধনের কর্মী ও সমর্থকদের মনোবল বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে।

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
