উত্তরপ্রদেশের মুজফফরনগরে ওয়াকফ (waqf) (সংশোধন) আইন, ২০২৫-এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য ৩০০ জনের বিরুদ্ধে নোটিশ জারি করেছে স্থানীয় প্রশাসন। শুক্রবারের নামাজের সময় মসজিদে কালো ব্যাজ পরে এই প্রতিবাদ করা হয়েছিল। পুলিশের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, এই ৩০০ জনকে ২ লাখ টাকার বন্ড জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
শনিবার পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল মাত্র ২৪ জন। সিটি সুপারিনটেনডেন্ট অফ পুলিশ (এসপি) সত্যনারায়ণ প্রজাপত রবিবার জানান, সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে এই ব্যক্তিদের চিহ্নিত করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্মতি দিয়েছেন
গত শুক্রবার, ২৮ মার্চ, রমজানের শেষ জুম্মার নামাজের সময় মুজফফরনগরের বিভিন্ন মসজিদে অনেকে কালো ব্যাজ পরে ওয়াকফ (waqf) (সংশোধন) আইনের বিরোধিতা করেন। এই আইন সম্প্রতি সংসদে পাস হয়েছে এবং শনিবার, ৫ এপ্রিল, রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু এটিতে সম্মতি দিয়েছেন। তবে, এই আইন নিয়ে দেশজুড়ে বিতর্ক ও প্রতিবাদ চলছে। মুজফফরনগরে প্রতিবাদকারীরা জানিয়েছেন, তারা শান্তিপূর্ণ ও গণতান্ত্রিক উপায়ে তাদের মত প্রকাশ করেছেন। কিন্তু পুলিশ ও প্রশাসনের তরফে এটিকে আইনশৃঙ্খলার জন্য হুমকি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এসপি সত্যনারায়ণ প্রজাপত সাংবাদিকদের জানান
এসপি সত্যনারায়ণ প্রজাপত সাংবাদিকদের জানান, “আমরা সিসিটিভি ফুটেজ পরীক্ষা করে ৩০০ জনকে চিহ্নিত করেছি। তাদের নোটিশ পাঠানো হয়েছে এবং আরও কিছু লোককে চিহ্নিত করার কাজ চলছে।” তিনি আরও বলেন, সিটি ম্যাজিস্ট্রেট বিকাশ কাশ্যপের নির্দেশে এই নোটিশ জারি করা হয়েছে। প্রতিবাদকারীদের আগামী ১৬ এপ্রিল আদালতে হাজির হয়ে জনপ্রতি ২ লাখ টাকার বন্ড জমা দিতে বলা হয়েছে। এই বন্ড শান্তি বজায় রাখার নিশ্চয়তা হিসেবে জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
ওয়াকফ (সংশোধন) আইন (waqf)
ওয়াকফ (waqf) (সংশোধন) আইন, ২০২৫ নিয়ে বিতর্ক তীব্র হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে ওয়াকফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা আনা, জটিলতা দূর করা এবং প্রযুক্তির মাধ্যমে আধুনিক ব্যবস্থাপনা চালু করার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। তবে, বিরোধী দলগুলো এবং অনেক মুসলিম সংগঠন এটিকে ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সংখ্যালঘু অধিকারের উপর আঘাত বলে অভিযোগ করেছে।
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি) এই আইনকে “ইসলামী মূল্যবোধ, ধর্ম এবং ভারতীয় সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর উপর গুরুতর আক্রমণ” বলে বর্ণনা করেছে। তারা দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দিয়েছে এবং এই সংশোধনী সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে।
গ্র্যাজুয়েশনের পর মাসে ৭৬,০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করুন, জানুন বিস্তারিত
মুজফফরনগরে প্রতিবাদকারীদের একাংশ জানিয়েছেন
মুজফফরনগরে প্রতিবাদকারীদের একাংশ জানিয়েছেন, “আমরা কালো ব্যাজ পরেছিলাম শুধুমাত্র আমাদের অসন্তোষ প্রকাশ করার জন্য। এতে কোনও অশান্তি বা উত্তেজনা সৃষ্টির উদ্দেশ্য ছিল না।” তবে, পুলিশের দাবি, এই ধরনের প্রতিবাদ আইনশৃঙ্খলার জন্য ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। এই ঘটনার পর জেলায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। শুক্রবারের নামাজের পর থেকেই উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন শহরে কড়া নজরদারি রাখা হচ্ছে।
ওয়াকফ আইন নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব
এদিকে, ওয়াকফ আইন নিয়ে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও তীব্র হয়েছে। কংগ্রেস, এআইএমআইএম এবং এএপি-র মতো বিরোধী দলগুলো এই আইনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, বিজেপি নেতারা দাবি করছেন, এই আইন মুসলিম সম্প্রদায়ের দরিদ্র অংশের জন্য উন্নয়নের পথ খুলবে এবং সম্পত্তির অপব্যবহার রোধ করবে।
মুজফফরনগরের এই ঘটনা দেশের অন্যান্য শহরেও প্রভাব ফেলতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। কলকাতা, দিল্লি, মুম্বই, হায়দ্রাবাদের মতো শহরে ইতিমধ্যে বড় ধরনের প্রতিবাদ হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রশাসন কীভাবে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়, সেদিকে নজর রয়েছে সকলের।