‘ওয়াকফ ইসলামের কোনো অপরিহার্য অঙ্গ নয়’, সুপ্রিম কোর্ট কে বিবৃতি কেন্দ্রের

central told to supreme court about waqf

কেন্দ্রীয় সরকার গত বুধবার সুপ্রিম কোর্টে জানিয়েছে যে ওয়াকফ (waqf) মূলত চ্যারিটি মূলক কাজ এবং এটি ইসলামের অপরিহার্য অংশ নয়। সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা জোর দিয়ে বলেছেন, ওয়াকফ বোর্ড শুধুমাত্র “ধর্মনিরপেক্ষ কাজ” সম্পাদন করে, যেখানে মন্দিরের প্রশাসন, যা সম্পূর্ণ ধর্মীয়, তার বিপরীতে একজন মুসলিম দ্বারা পরিচালিত হতে পারে।

Advertisements

মেহতা বলেন

মেহতা বলেন, “ওয়াকফ (waqf)একটি ইসলামিক ধারণা, কিন্তু এটি ইসলামের অপরিহার্য অংশ নয়। ওয়াকফ(waqf) ইসলামে কেবল দাতব্য কাজ। বিভিন্ন রায়ে দেখা গেছে, দাতব্য কাজ প্রতিটি ধর্মের অংশ। খ্রিস্টান ধর্মেও এটি হতে পারে। হিন্দুদের মধ্যে দানের ব্যবস্থা রয়েছে, শিখদেরও এটি আছে।”

মুসলিম পক্ষের যুক্তির পর কেন্দ্রের বক্তব্য (waqf)

মুসলিম পক্ষের যুক্তি উপস্থাপনের একদিন পর মেহতা তাঁর বক্তব্য পেশ করেন। তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বিতর্কিত ‘ওয়াকফ-বাই-ইউজার’ (waqf)নীতির অধীনে ঘোষিত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য আইনিভাবে ক্ষমতাপ্রাপ্ত। এই নীতি, যা নতুন আইনে বাতিল করা হয়েছে, দীর্ঘমেয়াদী ধর্মীয় ও দাতব্য উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত সম্পত্তিকে আনুষ্ঠানিক দলিল ছাড়াই ওয়াকফ হিসেবে বিবেচনা করার অনুমতি দেয়।

মেহতা প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই এবং বিচারপতি অগাস্টিন জর্জ মাসিহের সমন্বয়ে গঠিত দ্বৈত বিচারপতির বেঞ্চের কাছে বলেন, “সরকারি জমির উপর কারও অধিকার নেই। সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে বলা হয়েছে, যদি সম্পত্তি সরকারের হয় এবং তা ওয়াকফ হিসেবে ঘোষিত হয়, তবে সরকার তা রক্ষা করতে পারে।”

ওয়াকফ-বাই-ইউজার নীতি এবং মৌলিক অধিকার

মেহতা আরও জানান, ‘ওয়াকফ-বাই-ইউজার’ (waqf)কোনো মৌলিক অধিকার নয়। তিনি বলেন, “ওয়াকফ-বাই-ইউজার ভবিষ্যতে তিনটি ব্যতিক্রম ছাড়া অনুমোদিত নয়—এটি নিবন্ধিত হতে হবে, ব্যক্তিগত সম্পত্তি হতে হবে এবং সরকারি সম্পত্তি হতে পারবে না।” তিনি যুক্তি দেন যে এই নীতির অপব্যবহার হয়েছে, এবং নতুন আইন এই সমস্যার সমাধান করেছে।

কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, সাম্প্রতিক ওয়াকফ আইন সংশোধনী ১৯২৩ সাল থেকে চলে আসা সমস্যার সমাধান করেছে, যা ব্রিটিশ এবং পরবর্তী ভারতীয় সরকারগুলি সমাধান করতে পারেনি। মেহতা বলেন, “আমরা ১৯২৩ সাল থেকে চলে আসা সমস্যা দূর করছি।

প্রতিটি স্টেকহোল্ডারের মতামত শোনা হয়েছে। কয়েকজন পিটিশনকারী পুরো মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করতে পারে না। আমরা ৯৬ লক্ষ প্রতিনিধিত্ব পেয়েছি। জয়েন্ট পার্লামেন্টারি কমিটি (জেপিসি) ৩৬টি বৈঠক করেছে।”

‘বাঁটুল দি গ্রেট’ এবার ব্যাটে-বলে, ক্রিকেটে মিশল নস্টালজিয়া

Advertisements

সুপ্রিম কোর্টের অবস্থান

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছে, আইনের ক্ষেত্রে “সাংবিধানিকতার অনুমান” রয়েছে এবং আদালত কেবলমাত্র সুস্পষ্ট লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপ করতে পারে। প্রধান বিচারপতি গাভাই বলেন, “প্রতিটি আইনের পক্ষে সাংবিধানিকতার অনুমান রয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন স্বস্তির জন্য, আপনাকে খুব শক্তিশালী এবং সুস্পষ্ট কারণ দেখাতে হবে।” এই মন্তব্য এসেছে যখন পিটিশনকারীদের পক্ষে সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল তাঁর যুক্তি উপস্থাপন শুরু করেন।

কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টকে অনুরোধ করেছে, মামলার শুনানি তিনটি বিষয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে—ওয়াকফ-বাই-ইউজার নীতি, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিল এবং রাজ্য ওয়াকফ বোর্ডে অমুসলিমদের মনোনয়ন, এবং সরকারি জমি ওয়াকফ হিসেবে চিহ্নিতকরণ।

ওয়াকফ আইন সংশোধনী নিয়ে বিতর্ক

সাম্প্রতিক ওয়াকফ আইন সংশোধনীতে সরকার ওয়াকফ (waqf)সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণে আরও বেশি তদারকির ব্যবস্থা করেছে, যা বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। পিটিশনকারীরা এই সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করেছেন, দাবি করে যে এটি সংবিধানের মৌলিক অধিকার লঙ্ঘন করে। মুসলিম সম্প্রদায়ের একাংশ মনে করে, এই সংশোধনী তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ করছে। অন্যদিকে, কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, এই সংশোধনী ওয়াকফ সম্পত্তির অপব্যবহার রোধ করবে এবং স্বচ্ছতা নিশ্চিত করবে।

রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব

এই রায় এবং ওয়াকফ (waqf)আইন সংশোধনী রাজনৈতিক ও সামাজিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। বিরোধী দলগুলি, বিশেষ করে তৃণমূল কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টি, এই সংশোধনীকে মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে। তারা অভিযোগ করেছে, সরকার এই আইনের মাধ্যমে ধর্মীয় সম্প্রদায়ের অধিকার কেড়ে নিচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বাধীন কেন্দ্রীয় সরকার এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, এই সংশোধনী দীর্ঘদিনের সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয়।

আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট

এই বিতর্ক এমন এক সময়ে উত্থিত হয়েছে, যখন ভারত সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা গড়ে তুলতে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠাচ্ছে। ওয়াকফ আইন নিয়ে বিতর্ক এই প্রচেষ্টার উপর প্রভাব ফেলতে পারে, বিশেষ করে মুসলিম-সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে।

কেন্দ্রীয় সরকারের সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া বক্তব্য এবং ওয়াকফ (waqf)আইন সংশোধনী নিয়ে চলতে থাকা মামলা ভারতের ধর্মীয় ও সাংবিধানিক কাঠামোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ। সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় এই বিতর্কের দিকনির্দেশনা নির্ধারণ করবে। এই মামলা কেবল ওয়াকফ সম্পত্তির প্রশাসন নয়, বরং ভারতের ধর্মনিরপেক্ষতা ও সংরক্ষণ নীতির উপরও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।