যৌথ সংসদীয় কমিটিতে পাশ ওয়াকফ সংশোধনী বিল! ১৪টি সংশোধনীতে অনুমোদন

Waqf Amendment Bill Cleared নয়াদিল্লি: ওয়াকফ সংশোধনী বিলের খসড়া অনুমোদন করN যৌথ সংসদীয় কমিটি (JPC)। গত বছর আগস্ট মাসে প্রস্তাবিত এই বিলে ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন…

Waqf Amendment Bill Cleared

Waqf Amendment Bill Cleared

নয়াদিল্লি: ওয়াকফ সংশোধনী বিলের খসড়া অনুমোদন করN যৌথ সংসদীয় কমিটি (JPC)। গত বছর আগস্ট মাসে প্রস্তাবিত এই বিলে ১৪টি গুরুত্বপূর্ণ সংশোধন করা হয়েছে। বিজেপির জগদাম্বিকা পালের নেতৃত্বাধীন কমিটিতে থাকা বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ৪৪টি সংশোধনীর প্রস্তাব করেছিলেন৷ তাঁদের দাবিগুলি খারিজ হয়ে গিয়েছে৷ এই বিলের প্রস্তাবিত পরিবর্তনগুলি মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য দীর্ঘকালীন আস্থা ও সুযোগ তৈরির দাবি জানানো হলেও, এই বিলকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। (Waqf Amendment Bill Cleared)

বিরোধীদের তীব্র প্রতিবাদ Waqf Amendment Bill Cleared

ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি সংসদীয় কমিটির অনুমোদনের পর বিরোধী দলের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, শাসক দল বিজেপির পক্ষ থেকে কমিটির সভাপতির ভূমিকা পক্ষপাতিত্বপূর্ণ ছিল, যা আলোচনার পরিবেশকে নষ্ট করে দিয়েছে। গত সপ্তাহে বিরোধী সাংসদেরা লোকসভার স্পিকার ওম বীরলাকে একটি চিঠি লিখে এ বিষয়ে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, জগদাম্বিকা পাল বিলটি দ্রুত পাস করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছেন৷ দিল্লি নির্বাচনকে সামনে রেখে (ফেব্রুয়ারি ৫) কাজ করা হচ্ছে। তাদের অভিযোগ ছিল যে, সংসদীয় কমিটির অধিবেশনগুলোতে তাঁদের পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হচ্ছে না, যাতে তাঁরা বিলের সংশোধনীগুলি পর্যালোচনা করতে পারেন।

   

১০ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড

এছাড়াও, ১০ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়েছিল৷ তাঁদেরও একই অভিযোগ ছিল যে, কথা শোনা হচ্ছে না। সাসপেন্ড হওয়া এমপিদের মধ্যে ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেসের ক্যাল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমিনের নেতা আসাদউদ্দিন ওয়াইসি৷ উভয়েই উক্ত বিলের কড়া সমালোচনা করেছেন। 

ওয়াকফ সংশোধনী বিলের মূল উদ্দেশ্য ও প্রস্তাবিত পরিবর্তনসমূহ

ওয়াকফ সংশোধনী বিলটির লক্ষ্য হল মুসলিম সম্প্রদায়ের অধিকার নিশ্চিত করা এবং তাদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করা। এই বিলের মাধ্যমে ওয়াকফ বোর্ডগুলির পরিচালনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি বড় পরিবর্তন হল বোর্ডে অ-মুসলিম সদস্য এবং অন্তত দু’জন মহিলা সদস্যের অন্তর্ভুক্তি। এছাড়াও, কেন্দ্রীয় ওয়াকফ কাউন্সিলে একজন মন্ত্রী, তিনজন সংসদ সদস্য, দুইজন প্রাক্তন বিচারক, চারজন ‘জাতীয় খ্যাতিসম্পন্ন’ ব্যক্তি এবং ঊর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তাদের অন্তর্ভুক্তি করা হবে, যাদের মধ্যে ইসলাম ধর্মের অনুসারী না হওয়া শর্ত থাকছে।

এছাড়া, নতুন প্রস্তাব অনুযায়ী, ওয়াকফ কাউন্সিলকে জমি দাবি করার অধিকার দেওয়া হবে না। অন্য একটি বিতর্কিত প্রস্তাব হল, মুসলিম দানের ক্ষেত্রে নতুন নিয়ম। প্রস্তাবিত সংশোধনী অনুযায়ী, শুধুমাত্র ‘প্র্যাকটিসিং মুসলিম’ ব্যক্তিরা দান করতে পারবেন, যাঁরা অন্তত পাঁচ বছর ধরে ইসলাম ধর্ম পালন করছেন। এই প্রস্তাবে ‘প্র্যাকটিসিং মুসলিম’ শব্দটির ব্যবহার করায় বিরোধী দলগুলো আক্রমণ শানিয়েছে৷ যা রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি করেছে।

বিরোধীদের সমালোচনা: ধর্মীয় স্বাধীনতা ও সাংবিধানিক অধিকার

বিরোধী নেতারা এই বিলটির বিরুদ্ধে সরাসরি সমালোচনা করেছেন৷ তাঁদের দাবি, এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর আঘাত। কংগ্রেসের কেসি বেনুগোপাল যেমন বলেন, “এটি ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর একটি সরাসরি আক্রমণ।” আসাদউদ্দিন ওয়াইসি এবং ডিএমকের কানিমোঝি মনে করেন, বিলটি ভারতের সংবিধানের একাধিক ধারার লঙ্ঘন করছে, বিশেষত অনুচ্ছেদ ১৫ (ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার) এবং অনুচ্ছেদ ৩০ (সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার ও পরিচালনার অধিকার)।

ওয়াকফ সংশোধনী বিলটি সংসদীয় কমিটির অনুমোদন পেলেও, এটি ভারতীয় রাজনীতিতে একটি তীব্র বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত ৮ অগাস্ট লোকসভায় ওয়াকফ সংশোধনী বিল পেশ করেছিলেন কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রী কিরেন রিজিজু। বিলটি ‘অসাংবিধানিক এবং মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপকারী’ বলে অভিযোগ তুলে একযোগে তার বিরোধিতা করে বিরোধীরা। দীর্ঘ বিতর্কের অবসান ঘটাতে বিলটি যৌথ সংসদীয় কমিটির কাছে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কেন্দ্র। কংগ্রেস, তৃণমূল, ডিএমকে, এসপি, আপ, মিম-সহ প্রায় সব ক’টি বিরোধী রাজনৈতিক দলের বক্তব্য ছিল, বিলটি সংবিধান-বিরোধী। এই বিল যেমন মুসলিমদের ধর্মীয় স্বাধীনতা কেড়ে নেবে, তেমনই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও আঘাত করবে৷ এই বিলে বলা হয়েছে, আগামী দিনে কোনও সম্পত্তি ওয়াকফ হিসাবে ঘোষণা করার অধিকার আর ওয়াকফ বোর্ডের হাতে থাকবে না। ওই ক্ষমতা থাকবে জেলাশাসকদের হাতে। বিরোধীদের অভিযোগ, নতুন আইনে যাবতীয় ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত হবে জেলাশাসকের হাতে৷ এর ফলে জেলাশাসক ওয়াকফ বোর্ডের চেয়ারম্যানের থেকেও পাওয়ারফুল হয়ে উঠবেন। কার্যত গুরুত্ব হারাবে ওয়াকফ বোর্ড।

 Bharat: Joint Parliamentary Committee approves Waqf Amendment Bill with 14 amendments. Opposition protests against BJP’s handling. Political tension rises. 10 opposition MPs suspended. Controversy over bill.