নিউ ইয়র্ক শেয়ারবাজারে (Tariff) মঙ্গলবারের লেনদেনে বড় ধরনের ধাক্কা লেগেছে। দিনের শুরুতেই, স্ট্যান্ডার্ড অ্যান্ড পুওরস ৫০০ (S&P 500) সূচক ১.৩ শতাংশ হারে পতন করেছে, যা গত এক মাসের মধ্যে সবচেয়ে বড় একদিনের পতনের দিকে যাচ্ছে। একই সঙ্গে ডাও জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ (Dow Jones Industrial Average) সূচক ৫৭১ পয়েন্ট পড়ে গেছে এবং প্রযুক্তিনির্ভর ন্যাসডাক (Nasdaq) সূচক ১.৭ শতাংশ হারে নেমে গেছে। খবরটি এপি (Associated Press) সংস্থা জানিয়েছে।
এই পতনের পেছনে মূলত দুটি বড় কারণ দেখা যাচ্ছে—প্রথমত, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) প্রযুক্তিভিত্তিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারে ব্যাপক চাপ পড়েছে, এবং দ্বিতীয়ত, বৈশ্বিক বন্ডের সুদের হার বা ইয়িল্ড (bond yields) বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
এআই হাইপের গতি কমছে?
গত কয়েক মাস ধরেই মার্কিন শেয়ারবাজারে (Tariff) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI)-ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর শেয়ারের ব্যাপক উত্থান দেখা গেছে। বিশেষ করে চিপ নির্মাতা এনভিডিয়া (Nvidia) ছিল এই উত্থানের কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু মঙ্গলবারের পতনে এনভিডিয়া অন্যতম প্রধান ‘লুজার’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। এনভিডিয়ার শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে পড়ে গেছে, যা প্রযুক্তি খাতের ওপরে চাপ সৃষ্টি করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, বাজারে এআই-সংক্রান্ত অতিরিক্ত আশাবাদ এবং ‘হাইপ’-এর কারণে শেয়ারগুলোর দাম অনেকটাই বেড়ে গিয়েছিল। তবে বর্তমানে কিছু বিনিয়োগকারী এই উচ্চমূল্যযুক্ত শেয়ারগুলো থেকে লাভ তুলে নেওয়ার পথে হাঁটছেন, যার ফলে শেয়ারমূল্যে পতন দেখা দিচ্ছে।
বিশ্ববাজারে বন্ড ইয়িল্ড বাড়ছে
শুধু প্রযুক্তি(Us Market) খাতই নয়, আরও একটি বড় কারণ হলো—বিশ্ববাজারে বন্ডের সুদের হার বাড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং অন্যান্য উন্নত অর্থনীতিগুলিতে সরকারি বন্ডের ইয়িল্ড বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি সাধারণত বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত হিসেবে কাজ করে, কারণ বন্ডের ইয়িল্ড বাড়া মানে ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ থেকে বেশি রিটার্ন পাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে অনেক বিনিয়োগকারী শেয়ারবাজার থেকে অর্থ তুলে বন্ড মার্কেটে স্থানান্তর করছেন, যার ফলে শেয়ারবাজারে বিক্রির চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
বাজার বিশ্লেষকদের মতামত
ফেডারেল (Us Market) রিজার্ভের নীতি নিয়ে অনিশ্চয়তা এবং ভবিষ্যতে সুদের হার কেমন থাকবে—এই প্রশ্নগুলোও বিনিয়োগকারীদের ভাবিয়ে তুলছে। অনেকে ধারণা করছেন, মুদ্রাস্ফীতির হার পুনরায় বাড়তে পারে এবং সে কারণে ফেড সুদের হার আরও দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চ পর্যায়ে রাখবে।
ফেডারেল রিজার্ভ যদি সুদের হার দীর্ঘমেয়াদে বেশি রাখে, তাহলে কোম্পানিগুলোর ঋণগ্রহণ ব্যয় বাড়বে এবং তাদের লাভের হার কমে যাবে। এর প্রভাব পড়বে শেয়ারমূল্যে।
বিনিয়োগকারীদের জন্য সতর্কবার্তা
বর্তমান বাজার পরিস্থিতি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি সতর্ক সংকেত হতে পারে। যারা অতিমাত্রায় প্রযুক্তিনির্ভর শেয়ারে বিনিয়োগ করেছেন, তাদের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। বাজারে মুনাফা তুলে নেওয়ার একটি প্রবণতা শুরু হয়েছে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ।
তবে অনেকেই বলছেন, এই ধরণের ছোটখাটো পতন দীর্ঘমেয়াদে বাজারের জন্য স্বাস্থ্যকর হতে পারে, কারণ এটি অতিমূল্যায়িত শেয়ারগুলোকে কিছুটা ভারসাম্যে আনে।