উত্তরাখন্ড, ২৬ সেপ্টেম্বর: দ্বৈত ভোটার তালিকায় নাম থাকা প্রার্থীদের পঞ্চায়েত নির্বাচনে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়ার জন্য জারি করা সার্কুলারের বৈধতা নিয়ে করা মামলায় বড়সড় ধাক্কা খেল উত্তরাখণ্ড রাজ্য নির্বাচন কমিশন (SEC)। দেশের শীর্ষ আদালত (Supreme Court) শুধু হাই কোর্টের রায়কে বহাল রাখেনি, বরং নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা করে ২ লক্ষ টাকার জরিমানাও চাপিয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত উত্তরাখণ্ড রাজ্য নির্বাচন কমিশনের একটি সার্কুলার জারি করার মাধ্যমে। এই সার্কুলারে বলা হয়, এমন প্রার্থীরাও পঞ্চায়েত নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন যাদের নাম একাধিক ভোটার তালিকায় রয়েছে। তবে, উত্তরাখণ্ড পঞ্চায়েতি রাজ আইন, ২০১৬ অনুযায়ী, কোনও ব্যক্তি একাধিক স্থানে একযোগে ভোটার তালিকায় নাম রাখতে পারেন না।
এই অসামঞ্জস্যতাকে চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে মামলা দায়ের করা হয়। মামলার শুনানি শেষে হাইকোর্ট জানিয়ে দেয়, নির্বাচন কমিশনের এই সার্কুলার আইনবিরুদ্ধ এবং তা বাতিলযোগ্য। কমিশনের ব্যাখ্যা আইনকে লঙ্ঘন করে এবং সঠিক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে প্রশ্নের মুখে ফেলে।
হাইকোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। তারা চেয়েছিল, এই রায় খারিজ করে শীর্ষ আদালত তাদের সার্কুলারকে বৈধতা দিক। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট আবেদন খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের রায়কেই সমর্থন করে।
রায় ঘোষণাকালে সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট ভাষায় জানায়, “আপনারা কীভাবে একটি স্পষ্ট আইনকে উপেক্ষা করে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন? এটা সরাসরি আইন লঙ্ঘনের শামিল।” আদালত আরও জানায় যে নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ সুষ্ঠু নির্বাচন ব্যবস্থার পরিপন্থী এবং এটি ভোটার তালিকার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে।
এই রায়ে নির্বাচন কমিশনের আইনবিরুদ্ধ ও দায়িত্বজ্ঞানহীন ভূমিকার কারণে আদালত তাদের উপর ২ লক্ষ টাকার আর্থিক জরিমানা চাপায়। এই জরিমানাকে শাস্তিমূলক ও ভবিষ্যতে এমন গাফিলতি রোধে একটি বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে।
নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা সাধারণত নিরপেক্ষ ও ন্যায্য নির্বাচন পরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এখানে দেখা গেল, কমিশন এমন একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে যা সরাসরি বিদ্যমান আইনকে অগ্রাহ্য করে।
সুপ্রিম কোর্টের এই রায় শুধুমাত্র একটি নির্দিষ্ট সার্কুলারের বৈধতা নিয়ে নয়, বরং সমগ্র নির্বাচন ব্যবস্থার স্বচ্ছতা এবং ন্যায্যতার প্রশ্নেও তাৎপর্যপূর্ণ। আদালতের স্পষ্ট বার্তা হলো — আইন সবার উপরে, এমনকি নির্বাচন কমিশনের জন্যও।