প্রায় দশ হাজার বছর পর নিস্তব্ধতা ভেঙে বিস্ফোরিত হল এথিওপিয়ার হাইলি গুব্বি আগ্নেয়গিরি। রবিবারের সেই ভয়াবহ অগ্নুৎপাতের পর ঘন আগ্নেয়ছাই ও সালফার ডাই–অক্সাইডে ভরা বিশাল মেঘ বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে, যা রেড সি অতিক্রম করে সোমবার রাতে দিল্লির আকাশে পৌঁছায়।
ছাইয়ের ওই মেঘের গতিপথ আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা গত ২৪ ঘণ্টা ধরে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছিলেন।আবহাওয়া সংস্থা জানায়, প্রথম আঘাত লাগে পশ্চিম রাজস্থানে জোধপুর–জয়সলমের অঞ্চলের আকাশ ছুঁয়ে ছাইয়ের মেঘ দ্রুত উত্তর–পূর্ব দিকে ধাবিত হতে থাকে।
ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ
ভারত মেট স্কাই ওয়েদার সতর্কবার্তায় বলেছে, “মেঘটি এখন ভারতীয় উপমহাদেশে প্রবেশ করেছে এবং ঘণ্টায় ১২০–১৩০ কিমি বেগে অগ্রসর হচ্ছে। আকাশের রঙ কিছুসময় অস্বাভাবিক দেখাতে পারে, তবে অধিকাংশ ছাই ২৫ হাজার থেকে ৪৫ হাজার ফুট উচ্চতায় অবস্থান করায় আতঙ্কের কারণ নেই।”
সোমবার রাত গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ছাইয়ের মেঘ রাজস্থান, হরিয়ানা ও দিল্লির ওপর ছড়িয়ে পড়ে, আর পিছনের অংশটি গুজরাট বরাবর স্পর্শ করে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি পাঞ্জাব, পশ্চিম উত্তরপ্রদেশের পাদদেশ ও হিমাচল প্রদেশেও রাতভর প্রভাব পড়তে পারে বলে পূর্বাভাস বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন।
স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে না Volcanic ash cloud reaches Delhi’s sky
তাদের বক্তব্য, মেঘের বেশিরভাগ অংশ মাটির অনেক ওপরে অবস্থান করায় তা স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করবে না, যদিও কিছু অঞ্চলে হালকা ছাইপতনের সম্ভাবনা অস্বীকার করা যাচ্ছে না। আবহাওয়াবিদদের অনুমান, মঙ্গলবার সূর্যোদয়ের আলো আগ্নেয়ছাইয়ের স্তর ছুঁয়ে গেলে আকাশে ব্যতিক্রমী রঙের খেলা দেখা দিতে পারে।
তবে তাঁদের কটাক্ষ, “দূর দেশের আগ্নেয়গিরিও দিল্লির স্থায়ী বায়ুদূষণকে বদলানোর ক্ষমতা রাখে না—বায়ুগুণ তথৈবচ থাকবেই।”
বিমান চলাচলে লাল সতর্কতা — রুট বদলে উড়বে বিমান
ছাইয়ের মেঘ বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করার পরই টুলুস, এয়ারপোর্টস অথরিটি অব ইন্ডিয়া এবং ASHTAM সতর্কতা জারি হওয়ায় ডিজিসিএ (DGCA) সোমবার রাতে সব এয়ারলাইন্সকে জরুরি নির্দেশ পাঠায়।
নির্দেশে স্পষ্ট বলা হয়—
- অগ্ন্যুৎপাতজনিত ছাই প্রভাবিত আকাশসীমা ও ফ্লাইট লেভেল সম্পূর্ণ এড়িয়ে চলা বাধ্যতামূলক
- রুট ম্যাপ ও জ্বালানি পরিকল্পনা নবায়ন করতে হবে
- পাইলটদের — ইঞ্জিনের অস্বাভাবিক শব্দ/ক্যাবিন গন্ধ/ভাইব্রেশন বুঝলেই তাৎক্ষণিক রিপোর্ট
- ডিসপ্যাচ টিমের — NOTAM, ASHTAM এবং আবহাওয়ার আপডেট সারারাত পর্যবেক্ষণ বাধ্যতামূলক
ডিজিসিএর মতে, ভারতের ওপর থাকা ছাই উচ্চস্তরে, ফলে উড়ান ওঠা–নামা ততটা প্রভাবিত হবে না, তবে পশ্চিম এশিয়া হয়ে যাওয়া ট্রানজিট রুটগুলিতে ঝুঁকি বেশি, এবং পরিস্থিতির পরিবর্তন এখনও অব্যাহত।
আন্তর্জাতিক রুটে বিভ্রাট — একাধিক ফ্লাইট বাতিল
সতর্কতা জারি হওয়ার পরই বিমান চলাচলে তার প্রভাব স্পষ্ট।
PTI সূত্রে জানা গেছে—কোচি থেকে দু’টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট সোমবার বাতিল করা হয়েছে।
বাতিল ফ্লাইট:
ইন্ডিগো — কোচি–দুবাই (6E1475)
আকাসা এয়ার — কোচি–জেদ্দা (QP550)
কোচি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে — পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেই পরিষেবা পুনরায় শুরু হবে।
এদিকে KLM Royal Dutch Airlines বাতিল করেছে অ্যামস্টারডাম–দিল্লি (KL 871) এবং দিল্লি–অ্যামস্টারডাম (KL 872) পরিষেবা।
এয়ারলাইন্সগুলির সতর্কবার্তা — যাত্রীদের জন্য পরামর্শ
এয়ার ইন্ডিয়া:
“পরিস্থিতি লাইভ পর্যবেক্ষণে আছে, এখনই বড় ধরনের প্রভাব নেই।”
ইন্ডিগো:
“সতর্ক অবস্থায় সবধরনের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ।”
স্পাইসজেট:
মধ্যপ্রাচ্যের আকাশে আগ্নেয়ছাই উড়ানসূচিতে বাধা আনতে পারে — দুবাইগামী যাত্রীদের ফ্লাইট স্ট্যাটাস দেখতে অনুরোধ।
আকাসা এয়ার:
আন্তর্জাতিক অ্যাডভাইজরি অনুযায়ী পরিস্থিতির বিশ্লেষণ চলছে, যাত্রী নিরাপত্তাই অগ্রাধিকার।
আগামী ২৪ ঘণ্টা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
বিশেষজ্ঞদের মূল্যায়ন—আগামী ২৪ ঘণ্টায় পরিস্থিতির রূপ পাল্টাতে পারে।
সম্ভাব্য প্রভাব:
আন্তর্জাতিক রুটের পথ পরিবর্তন
ফ্লাইট দেরি
বেছে–বেছে সীমিত পরিষেবা
কিছু আন্তর্জাতিক উড়ান বাতিলের সম্ভাবনাও খোলা
এয়ারপোর্ট কর্তৃপক্ষের পরামর্শ, ভ্রমণের আগে যাত্রীদের অবশ্যই এয়ারলাইন্সের নোটিফিকেশন ও ফ্লাইট স্ট্যাটাস চেক করা উচিত।
